ক্লিয়ার মেনের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক

চ্যাম্পিয়ন বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল। ছবি: প্রথম আলো
চ্যাম্পিয়ন বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল। ছবি: প্রথম আলো
টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউনিলিভারের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অনূর্ধ্ব-১৭ স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট। টুর্নামেন্টে এবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল।


‘দেশে মানসম্পন্ন ফুটবলারের অভাব’, কথাটি শোনা যায় হরহামেশা। ভালো ফুটবলার নেই বলেই তো অন্ধকারের অতল গহ্বরে ডুবে আছে দেশের ফুটবল। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও দেখা যাচ্ছে একটু আলোর দিশা। তবে স্থায়ীভাবে চেহারা বদলের জন্য প্রয়োজন প্রচুর মানসম্পন্ন ফুটবলার। কিন্তু কোথা থেকে আসবে সেই ভালো খেলোয়াড়?

স্কুলের ক্লাসরুম থেকে ফুটবলে লাথি দিয়ে শুরু করে ভবিষ্যতে একজন ফুটবলার হয়ে উঠবে, সে পথটা তো অনেক দিন ধরেই ছিল বন্ধ। আর স্কুল পর্যায়ে ফুটবল ছড়িয়ে না দিতে পারলে খেলোয়াড় উঠে আসবে না, এটা সবারই জানা। অন্তত এই উপলব্ধি থেকে টানা দ্বিতীয়বার অনূর্ধ্ব-১৭ স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট করার জন্য দেশের ফুটবলপ্রেমীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ পেতেই পারে ক্লিয়ার মেন।

সারা দেশের ২৭২টি স্কুল নিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয় টুর্নামেন্টটি। গ্রুপ পর্ব শেষে ৮ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলগুলো নিয়ে ঢাকায় হয়েছে চূড়ান্ত পর্ব। সেখানে অংশগ্রহণ করেছিল তিন হাজারেরও বেশি ফুটবলার। সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। প্রতি হাজার থেকে যদি ভবিষ্যৎ জাতীয় দলের জন্য একজন ফুটবলারও পাওয়া যায়, তাহলে এক টুর্নামেন্ট থেকে তিনজনকে তো পাচ্ছেই বাংলাদেশ! জাতীয় যুব দল দল গঠনের জন্য এই টুর্নামেন্টটা যে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, তা ফুটবল ফেডারেশনের কোচরাও স্বীকার করে নিয়েছেন অনায়াসে। এখন দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প করিয়ে বাকি কাজটা করে নিতে হবে শুধু ফেডারেশনকে।

বাফুফের পক্ষ থেকে শোনা গিয়েছে এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান ফুটবলার বাছাই করার কাজটি সেরেছে তারা। বাছাই করা ফুটবলারদের বাফুফে একাডেমিতে পাঠানো হবে। এ ছাড়াও এই টুর্নামেন্টের বাছাই করা ৩৬ জন ফুটবলার বিকেএসপিতে অনুশীলন করবে। ওই আবাসিক ক্যাম্প শেষে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ৬ ফুটবলার সুযোগ পাবে যুক্তরাজ্যে ম্যানচেস্টার সিটি ফুটবল ক্লাবে যাওয়ার।

এমন একটি টুর্নামেন্টের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। কাল চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার পর বলছিলেন, ‘ফাইনালটা সবাই যেমন উপভোগ করেছে, আমিও করেছি। এই টুর্নামেন্ট থেকে খেলোয়াড় বাছাইয়ের জন্য আমাদের কোচরা প্রতিটি মাঠে গেছে। আশা করি এখান থেকে উঠে আসবে আগামী দিনের ফুটবলার।’

বড় পরিসরে যেকোনো স্কুল টুর্নামেন্ট শুধু খেলার মাঠেই প্রভাব ফেলে না। মাঠের বাইরের পরিবেশটাও করে তোলে চমৎকার। নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতে আরও বড় স্বপ্ন দেখছে চ্যাম্পিয়ন দলের কিশোররা। ফাইনালে সাডেন ডেথের অষ্টম শটে গিয়ে টাঙ্গাইলের সুতী ভিএম পাইলট হাইস্কুলকে হারিয়েছে বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল। বুধবার বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে সুতী ভিএম পাইলট স্কুলকে সাডেন ডেথে ৬-৫ গোলে হারিয়ে শেষ হাসি হেসেছে বগুড়ার পুলিশ লাইনস স্কুল। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচে ছিল ১-১ গোলে সমতা।

ক্লিয়ার মেন শুধু টুর্নামেন্টই আয়োজনই করছে না। গতবারের বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে তাঁরা আয়োজন করছে দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পও। এবার তো নিয়েছে আরও বড় পদক্ষেপ। ফুটবলে উন্নতি করতে বয়সভিত্তিক ফুটবলের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে যত সুখবর, মেয়েদের ফুটবল থেকে। এর কারণ কী? বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। নিয়মিত মাঠে বয়সভিত্তিক ফুটবল। তাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন দেখা।

এই কিশোরেরা যেন হারিয়ে না যায়, এর জন্য পরের ধাপটা তৈরি করা দরকার। দ্রুত। স্কুল ফুটবলের পর সেটা হতে পারে কলেজ পর্যায়ের এমন দেশভিত্তিক আয়োজন। অন্তত সেখান থেকে কিছু ফুটবলারকে যেন টেনে নিতে পারে ক্লাবগুলো। সামনে অব্যাহত থাকুক এমন আয়োজন। আর ইউনিলিভারের মতো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসুক ফুটবলের এ আন্দোলনে।