এই 'ভার' নিয়ে ফুটবল কী করবে?

এভাবেই ফিরমিনোকে অফসাইড দেখিয়েছে ভিএআর। ছবি : প্রিমিয়ার লিগের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট
এভাবেই ফিরমিনোকে অফসাইড দেখিয়েছে ভিএআর। ছবি : প্রিমিয়ার লিগের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট
>

প্রতি সপ্তাহেই ফুটবলপ্রেমীদের আলোচনায় থাকছে ‘ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর)’ প্রযুক্তি। সেটা কোনো ইতিবাচক কারণে নয়, বারবার ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য

লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসি, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

কাল এ চারটা ক্লাবই ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি ‘ভিএআর’-এর বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো ঠিকঠাক নেওয়া হলে হয়তো প্রত্যেক দলই হেসেখেলে ম্যাচ জিততে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রিমিয়ার লিগের দুই পরাশক্তি যেখানে কষ্ট করে জিতেছে, মাদ্রিদের দুই প্রতিবেশীকে সন্তুষ্ট থাকতে হলো ড্র নিয়ে।

প্রথমেই আসা যাক লিভারপুল প্রসঙ্গে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি মার্টিন অ্যাটকিনসন কাল ন্যক্কারজনক দুটি ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে প্রথমেই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে লিভারপুল। সমতায় ফিরতে মরিয়া লিভারপুলের হয়ে গোলটি ফেরত দেন ব্রাজিলের স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো। খালি চোখে ন্যায্য গোল বলে মনে হলেও ‘ভিএআর’ কিংবা ‘ভার’-এর রায় ছিল গোলটি অন্যায্য।

পরে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, রবার্তো ফিরমিনোর বগল অফসাইড পজিশনে ছিল, যে কারণে গোলটি বাতিল করেছেন অ্যাটকিনসন। পরে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, ভুল সিদ্ধান্তই দিয়েছেন অ্যাটকিনসন। ফিরমিনো অনসাইডেই ছিলেন। এরপর অ্যাস্টন ভিলার ডি-বক্সে বেলজিয়ামের ডিফেন্ডার বিয়োর্ন এঙ্গেলসের হাতে বল লাগলেও পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। সমালোচনা হয়েছে সে সিদ্ধান্তটা নিয়েও। হ্যান্ডবলের কারণে পেনাল্টি পেলে সে পেনাল্টি থেকে হয়তো একটি গোল পেতে পারত লিভারপুল। যদিও শেষ মুহূর্তে গিয়ে অ্যান্ডি রবার্টসন ও সাদিও মানের দুই গোলে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তারা। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন ‘ভার’ সিদ্ধান্তটা ঠিকঠাক নিলে সমর্থকদের হৃদ্‌যন্ত্রে কি এত চাপ পড়ে?

লিভারপুলের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ ম্যাচশেষে ঠিকই ক্ষোভ উগরে দেন, ‘দেখুন, আমরা ম্যাচটা জিতেছি বলে হয়তো সে সব কথাগুলো (ভিএআরের ভুল সিদ্ধান্ত) আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি। কিন্তু ব্যাপারটা কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে হাসাহাসি করার কিছু নেই। ম্যাচ হারের কারণে একটা ম্যানেজারের চাকরিও যেতে পারে।’ গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেও ‘ভিএআর’ খড়্গহস্ত ছিল লিভারপুলের ওপর। প্রথমে গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। গোলের আগে লিভারপুল স্ট্রাইকার ডিভক অরিগি ফাউলের শিকার হন, ম্যাচ রেফারি মার্টিন অ্যাটকিনসনের তাতে কিচ্ছু যায় আসে নি।

ভিএআর (ভার) নিয়ে আলোচনা হয়েছে চেলসি-ওয়াটফোর্ড ম্যাচেও। ট্যামি আব্রাহাম আর ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের গোলে চেলসি ২-০ গোলে এগিয়ে গেলেও জেরার্ড দেউলেফেউয়ের পেনাল্টি গোলে ব্যবধান কমায় ওয়াটফোর্ড। আর গোল বেঁধেছে এ পেনাল্টি নিয়েই। চেলসির মিডফিল্ডার জর্জিনহো পা দিয়ে দেউলেফেউকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তখনই না পড়ে একটু পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দেউলেফেউ। আর এ কারণেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে পর্যালোচনা করে ওয়াটফোর্ডকে পেনাল্টি দেওয়া হয়। ম্যাচ শেষে চেলসির কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড দুষেছেন ভিএআরকে, ‘ভিএআরের সিদ্ধান্তে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ভিএআরের ব্যাপারটা নিয়ে আমরা সুখী নই।’

ওদিকে নিশ্চিত একটা পেনাল্টি পায়নি রিয়াল মাদ্রিদও। করিম বেনজেমার একটা ক্রস আটকাতে গিয়ে বলে হাত লাগান বেটিসের ডিফেন্ডার জুহাইর ফেদাল। বল হাতে লেগেছে রেফারি দেখা সত্ত্বেও পেনাল্টি পায়নি রিয়াল। পরে ভিএআরও রিয়ালকে পেনাল্টি দিতে পারেনি। রেফারির মতে, ইচ্ছে করে বলে হাত লাগানপ্নি ফেদাল, তাই পেনাল্টি পায়নি রিয়াল। এ সিদ্ধান্তে আশ্চর্য হয়েছেন রিয়ালের পরিচালক এমিলিও বুত্রাগুয়েনো, ‘আমি বুঝলাম না কেন আমাদের পেনাল্টি দেওয়া হলো না, দেখাই যাচ্ছে সে হাত দিয়ে বলটা আটকেছে। আমি ভিএআরের ব্যাপারটা বুঝি না। একদিন যে কারণে পেনাল্টি দেয় আরেকদিন সে কারণেই পেনাল্টি দেয় না।’

গতকাল ভিএআর পেনাল্টি দেয়নি অ্যাটলেটিকোকেও। সেভিয়ার ডিফেন্ডার জুলস কুন্দের হাতে বল লাগলেও ম্যাচের শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি বঞ্চিত হয়েছে ডিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা। যে ভিএআরকে আনা হয়েছিল নিখুঁত সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য, এখন সে প্রযুক্তি যদি একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে যায়—কথা তো উঠবেই!