কোচের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ অ্যাথলেটের

মৌলভীবাজারের অ্যাথলেট একাডেমির এক কোচের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন জাতীয় জুনিয়র দলের এক নারী অ্যাথলেট। তদন্ত চলছে
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গত বছর সেপ্টেম্বরে ধর্ষণের শিকার এক নারী ভারোত্তোলককে মানসিক হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ক্রীড়াঙ্গনে ঘটে গেল আরেকটি নেতিবাচক ঘটনা। এবার একজন কোচের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় জুনিয়র দলের এক নারী অ্যাথলেট। যৌন হয়রানির শিকার সেই অ্যাথলেট মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে আত্মহত্যার কথাও নাকি ভেবেছেন! ওই নারী অ্যাথলেটের অভিযোগ, তাঁকে যৌন হয়রানি করেছেন মৌলভীবাজারের স্থানীয় অ্যাথলেট একাডেমির এক কোচ। অভিযোগ এখনো প্রমাণিত না হওয়ায় প্রতিবেদনে কোচের নাম উল্লেখ করা হলো না।

অভিযোগ পাওয়ার পর একাডেমি কর্তৃপক্ষ ওই কোচকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। উল্টো যৌন হয়রানির শিকার অ্যাথলেটকে একাডেমি ছাড়তে বলা হয়েছে এবং নানাভাবে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে চাইলেও তাঁকে বাধা দিচ্ছেন একাডেমির কর্মকর্তারা।

গত ২৬ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শেষ হয় ৩৫তম জাতীয় জুনিয়র মিট। এই প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিতে মৌলভীবাজার জেলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতেন ওই নারী অ্যাথলেট। ২১ অক্টোবর অনুশীলনের সময় হাঁটুতে চোট পেয়ে গ্যালারিতে গিয়ে বসেন তিনি। অ্যাথলেটের অভিযোগ, কোচ তখন সেবা-শুশ্রূষার কথা বলে তাঁকে পাশের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে কোচের মাধ্যমেই যৌন হয়রানির শিকার হন তিনি। রুমে তখন আর কেউ ছিল না।

কাল ওই অ্যাথলেট কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘আমি যখন চোট পেয়ে গ্যালারিতে এসে বসি, স্যার এসে বলেন, এসো সামনের রুমে যাই। ওখানে তোমার কোথায় চোট লেগেছে, সেটা দেখব। অন্য সময় চোট পেলে মাঠের মধ্যেই স্যার দেখেন, কিন্তু ওই দিন রুমে যেতে বলায় শুরুতে যেতে চাইনি। কারণ, সেখানে মেয়ে শুধু আমি একা, ছেলেরা মাঠে অনুশীলনে ছিল। তারপরও স্যার যেহেতু বলেছেন, নিশ্চয় ভালো কিছু করবেন, এটা ভেবে সেখানে যাই। কিন্তু রুমে ঢুকেই তিনি আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জোর করে হাত দেন। আমি হাত সরিয়ে দিয়ে বলি, স্যার, আপনি এমন করছেন কেন? আমি বলি, স্যার, আজ অনুশীলন করব না এবং একপর্যায়ে অনেক কষ্টে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসি।’

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল ওই অ্যাথলেট কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না, ‘মাঠে তখন সবাই ছেলে। এই ঘটনা যে কারোর কাছে বলব, সেটাও পারছিলাম না। আমি জুনিয়র মিটে খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার পর কোন ভরসায় ওনার সঙ্গে ঢাকা যাব খেলতে? স্যারকে অনেক সম্মান করতাম। কিন্তু তাঁর এমন আচরণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। মাঝেমধ্যে মনে হয় আত্মহত্যা করি।’

মৌলভীবাজার সদরের এই অ্যাথলেট একাডেমির পাঁচ পরিচালকের অন্যতম অভিযুক্ত কোচ। ঘটনার কয়েক দিন পর মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এবং একাডেমির পরিচালকেরা তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন। তিনি ক্ষমাও চান। কিন্তু ওই অ্যাথলেটের দাবি ছিল, কোচকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হোক। কোচ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে সবার সামনে ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু সত্যি করে বলছি, ওই মেয়ের সঙ্গে আমি কিছু করিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ঘটনা। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমি নির্দোষ। আমি যদি খারাপ হতাম, তাহলে এলাকার পাঁচটি স্কুলের কোচের দায়িত্ব পেতাম না।’

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মেজবাউর রহমান, ‘এমন একটি ঘটনার কথা আমি শুনেছি। স্থানীয় এসপি (পুলিশ সুপার) সাহেবকে দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত করাচ্ছি।’ তবে তিনি নিজেই এই অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারছেন না, ‘এই মেয়েকে খেলাধুলায় নিয়ে এসেছে ওই কোচ। তার বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ আমার বিশ্বাস হয় না। আমার মনে হয়েছে মেয়েটির কোনো মানসিক সমস্যা আছে। ক্রীড়াঙ্গনে এটা একটা বাজে দৃষ্টান্ত হচ্ছে। সে যদি দোষ করে অবশ্যই শাস্তি পাবে।’

একাডেমির পরিচালক দেলোয়ার মজুমদার এ ঘটনায় খুবই বিব্রত, ‘অভিযোগ ওঠার পর আমরা কয়েকজন বসে সিদ্ধান্ত নিই, কোচ যেন ক্ষমা চেয়ে দুঃখপ্রকাশ করে মেয়েটির কাছে। ওকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারও করেছি। কিন্তু মেয়েটি লিখিতভাবে বহিষ্কার করার কথা বলেছে। আমরা ওর পরিবারের সঙ্গে বসেও বিষয়টা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া তদন্ত চলছে, যদি ও সত্যি অন্যায় করে, তাহলে শাস্তি পেতেই হবে।’