পা ভেঙে ক্যারিয়ার সংকটে মেসি-রোনালদোর সতীর্থ

বাজে ট্যাকলে পা ভেঙেছে আন্দ্রে গোমেজের। ছবি : এএফপি
বাজে ট্যাকলে পা ভেঙেছে আন্দ্রে গোমেজের। ছবি : এএফপি
>গত রাতে এভারটনের হয়ে টটেনহামের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন পর্তুগালের মিডফিল্ডার আন্দ্রে গোমেজ। ম্যাচের শেষ দিকে গোমেজকে খুবই বাজেভাবে ট্যাকল করেন টটেনহামের দুই তারকা হিউং মিন সন ও সার্জ অরিয়ের। গোমেজের এখন ক্যারিয়ারই শেষ হওয়ার জোগাড়।

বিশ্বের খুব কম খেলোয়াড়ই আছেন, যারা একই সঙ্গে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন। গঞ্জালো হিগুয়েইন, অ্যানহেল ডি মারিয়া, নেলসন সেমেদো—এদের হয়েছে এই সৌভাগ্য। এই সৌভাগ্যবানদের তালিকায় আছেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার আন্দ্রে গোমেজও। কিছুদিন আগেও বার্সেলোনায় খেলা এই তারকা মেসির সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। আর জাতীয় দলে রোনালদোর অধিনায়কত্বে তো খেলতেনই। বাজে ট্যাকলের বলি হয়ে সেই গোমেজই এখন ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন।

গত মৌসুমে বার্সেলোনা থেকে এভারটনে ধারে খেলতে আসার পর ইংলিশ ক্লাবটার মূল একাদশের অন্যতম সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন গোমেজ। ফলাফল, এই মৌসুমে তাকে বার্সেলোনা থেকে পাকাপাকিভাবে নিয়ে আসে এভারটন। গত রাতে টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটাতেও মূল একাদশে ছিলেন তিনি। ৭৮ মিনিটের ঘটনা। ৬৩ মিনিটে ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেলে আলির দেওয়া গোলের সুবাদে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন বুনছে টটেনহাম। ওদিকে নিজেদের মাঠে অন্তত এক পয়েন্ট পাওয়ার জন্য মরিয়া এভারটন। এমন অবস্থায় আন্দ্রে গোমেজ মাঠে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

তখনই ঘটল বিপত্তি। পেছন থেকে আন্দ্রে গোমেজকে ট্যাকল করলেন টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সন হিউং মিন। সেই ট্যাকল সরাসরি গোমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত না করলেও, টাল সামলাতে পারলেন না পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। ওদিকে সন শতভাগ নির্ভুল ট্যাকল করতে পারলে গোমেজের পা থেকে বল সামনে চলে যাওয়ার কথা। সে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সামনে ছিলেন আইভরি কোস্টের রাইটব্যাক সার্জ অরিয়ের। সনের ট্যাকলটা শতভাগ নির্ভুলও হয়নি, ফলে গোমেজও থেমে যাননি। ওদিকে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে ভেবে দুই পা দিয়ে বিপজ্জনকভাবে গোমেজের কাছে চলে গেলেন অরিয়ের। তিনিও নিজেকে সামলাতে পারলেন না। অরিয়েরের দুই পায়ের মধ্যে গোমেজের ডান পা বাজেভাবে আটকে গেল, ওই অবস্থাতেই দুজন পড়ে গেলেন। অরিয়েরের কিছু হয়নি, তবে যা ক্ষতি হওয়ার ততক্ষণে হয়ে গিয়েছিল গোমেজের।

গোমেজের অবস্থা দেখে কান্না আটকাতে পারেননি সন। ছবি : এএফপি
গোমেজের অবস্থা দেখে কান্না আটকাতে পারেননি সন। ছবি : এএফপি

গোমেজের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন পেছনে থাকা সন হিউং মিনও। ওদিকে সঙ্গে সঙ্গে ডান গোড়ালি স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায় গোমেজের। গোমেজের হৃদয়বিদারক চিৎকার শুনে সবাই বুঝে যান, খবর ভালো নয়। ট্যাকলটা করে গোমেজের অবস্থা দেখতে চলে যান অনুতপ্ত সন। গোমেজের স্থানচ্যুত গোড়ালি দেখে নিজেকে আটকাতে রাখতে পারেননি এই দক্ষিণ কোরিয়ার ফরোয়ার্ড। মাঠের মধ্যেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি করা শুরু করে দেন তিনি। এভারটন-টটেনহামের খেলোয়াড়েরা গোমেজের কাছে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। কিন্তু সান্ত্বনা দিয়ে কী হবে? গোমেজের যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েই গেছে। ট্যাকল দেখে প্রথমে হলুদ কার্ড দেখানো হলেও পরে চোটের ভয়াবহতা দেখে লাল কার্ড দেখান রেফারি। কিন্তু অরিয়েরকে কোনো শাস্তিই দেওয়া হয়নি।

পরে ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে গোল করে কাঙ্ক্ষিত ড্র এনে দেন এভারটনের তুর্কি স্ট্রাইকার চেঙ্ক তোসুন। কিন্তু একটু আগেই যেখানে এত ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটেছে, সেখানে পয়েন্ট প্রাপ্তির আনন্দটা আসলে গৌণই হয়ে গেছে এভারটনের কাছে। ম্যাচের শেষে এভারটনের অধিনায়ক শেমাস কোলম্যান টটেনহামের ড্রেসিংরুমে গিয়ে সন হিউং মিন কে সান্ত্বনা দিয়ে আসেন, নিশ্চিত করেন, অপ্রত্যাশিত এই ট্যাকলের পেছনে সনের যে কোনো জিঘাংসা ছিল না, এটা এভারটনের খেলোয়াড়েরা বুঝেছে।

এই চোট থেকে গোমেজ কবে ফিরে আসবেন, ফিরে আসলেও ফুটবল আদৌ খেলতে পারবেন কি না, কেউ জানে না। ফুটবল বিশ্বের অনেক তারকা এই ঘটনায় স্তব্ধ হয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থনা করেছেন গোমেজের দ্রুত সুস্থতার। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আর্সেনাল তারকা ও গোমেজের ক্লাব-সতীর্থ থিও ওয়ালকট, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার মার্কাস রাশফোর্ড, পিএসজির মিডফিল্ডার ইদ্রিসা গেয়ে, টটেনহামের মিডফিল্ডার দেলে আলি, এভারটনের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড, সাবেক এভারটন তারকা স্টিভেন পিয়েনার, লেস্টার সিটির স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডিরা।