শফিউল-আল আমিন ফিরলেন, কিন্তু মোস্তাফিজ?

হতাশা বাড়িয়েই চলেছেন মোস্তাফিজ। ছবি: বিসিবি
হতাশা বাড়িয়েই চলেছেন মোস্তাফিজ। ছবি: বিসিবি
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আটকাতে ভালো করতে হতো বাংলাদেশ পেস বোলিং আক্রমণকে। শফিউল-আল আমিন এমনকি সৌম্য সরকার আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন ভালোভাবে। কিন্তু মোস্তাফিজের হলোটা কী?


এটি শফিউল ইসলামের ট্রেডমার্ক উদ্‌যাপন—উইকেট নিয়েই শূন্যে এক লাফ! নিজের তৃতীয় বলেই ওড়ার সুযোগ পেলেন শফিউল। সেটিও রোহিত শর্মাকে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বোল্ড করে!

শফিউল যখন উড়ছিলেন বিদর্ভ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসা ভারতীয় দর্শকদের তখন মাথায় হাত! বিস্ময়ে ভরা চোখে তাঁরা রোহিতের ড্রেসিংরুমে ফেরা দেখছিল আর হয়তো ভাবছিল—এটা কী হলো! রোহিতকে দ্রুত ফেরাতে পারলেই বিরাট ধাক্কা খাবে ভারতীয় দল—সেটিই হলো। পাওয়ার প্লেতে স্বচ্ছন্দে ভারত রান তুলতে পারেনি এ কারণেই। এ সিরিজের প্রথম বোলার হিসেবে মেডেন পেলেন শফিউল। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তো তিনি আরও দুর্দান্ত। থিতু হয়ে যাওয়া শিখর ধাওয়ানকে (১৯) আউট করলেন ডিপ মিডউইকেটে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে।

ষষ্ঠ ওভারেই শ্রেয়াস আয়ারকে শূন্য রানে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন শফিউল। কিন্তু ফিল্ডার আমিনুল ইসলাম বলটা হাতে জমাতে পারলেন না! ৩ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে ১৯ রানে ২ উইকেট—তবুও শফিউলের বোলিং ফিগারটা কম উজ্জ্বল নয়! রাজকোট থেকে নাগপুরে আসার আগে শফিউলকে যখন বারবার প্রশ্ন করা হলো, নাগপুরে সিরিজ জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ পেসার বলছিলেন, ‘আশা করি ভালোভাবে ফিরে আসব।’

শফিউল ফিরেছেন নাগপুরে। পছন্দের নিচু আর মন্থর উইকেট পেয়ে ভালোভাবে ফিরেছেন আল আমিনও। কালও তিনি বলছিলেন, ‘আমার ইকোনমি ঠিক আছে। কিন্তু উইকেট পেতে হবে! উইকেট না পেলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলব কী করে!’ আল আমিনের উইকেট-খরা কেটেছে। আজ দুর্দান্ত খেলা লোকেশ রাহুলকে (৫২) ফিরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। নিজের প্রথম ৩ ওভারে ১৬ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট।

শফিউল-আল আমিন ভালোভাবে ফিরে এসেছেন। এমনকি খণ্ডকালীন পেসার সৌম্য সরকারও কী দারুণ বোলিং করলেন। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমানের হলোটা কী? আজ ৪ ওভারে দিয়ে বসলেন ৪২ রান, ছিলেন উইকেটশূন্য। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বোলারকে খেলা যেন এখন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে সবচেয়ে সহজ কাজ! মোস্তাফিজের ওভার তাঁদের কাছে হয়ে যাচ্ছে ‘চাপ মুক্তি’র ওভার! ক্যারিয়ারের শুরুতে যে জাদু দেখিয়েছিলেন, সেটির পুনরাবৃত্তি প্রতি ম্যাচে দেখানো কঠিন। আর ব্যাটসম্যানরা যেহেতু তাঁকে খুব ভালোভাবে পড়ে ফেলতে পারে ভান্ডারে নতুন অস্ত্র যোগ করে ব্যাটসম্যানদের যে পরীক্ষা নেবেন, সেটিও তো দেখা যাচ্ছে না। দল যাকে ভাবছে মূল উইকেটশিকারি বোলার, তিনি ম্যাচের পর ম্যাচ নিষ্প্রভ। এ বছর মোস্তাফিজ যে ৭ টি-টোয়েন্টি খেলেছে, কোনোটিতেই হয়নি বলার মতো বোলিং। তাঁর বোলিং গড় প্রায় ৫০, ইকোনমি ৯-এর কাছাকাছি। এ সময়ে দলের শীর্ষ চার বোলারের কারও গড়-ইকোনমি এতটা বাজে নয়।
নাগপুরে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের আগে মোস্তাফিজকে নিয়ে গুঞ্জন উঠেছিল, বাদ পড়তে পারেন একাদশ থেকে। তাঁকে আর ‘অটোমেটিক চয়েস’ ভাবতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট। এ যাত্রা টিকে গেছেন। তবে মোস্তাফিজকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বাঁহাতি পেসারের বিবর্ণ পারফরম্যান্স নিয়ে ভারত সফরে দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন কাল গানের কলি আওড়ে বলছিলেন, ‘আশায় আশায় দিন যে গেল…!’

মোস্তাফিজ অবসরে মাছশিকার করতে পছন্দ করেন। কিছুদিন আগে সাতক্ষীরায় বাড়িতে যেয়ে তাঁর ১২ কেজি পাঙাশ শিকার করা নিয়ে বেশ হইচই! মিনহাজুল তাই রসিকতা করে বলছিলেন মাছশিকারের মতো উইকেটশিকারটাও যদি দুর্দান্ত হতো মোস্তাফিজের!