প্রাপ্তির নাম নাঈম

আজ নিজেকে চেনালেন নাঈম। ছবি: এএফপি
আজ নিজেকে চেনালেন নাঈম। ছবি: এএফপি

শিবম দুবের ইয়র্কারটা এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেলেন। ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে হতাশায় শূন্যে পা ছুড়লেন মোহাম্মদ নাঈম । উইকেটে আরেকটু না থাকার হতাশায় পুড়লেও যে ইনিংসটা খেলেছেন আজ, বিধর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের দর্শকেরা তাঁকে অভিনন্দন জানাতে ভোলেনি।

পায়ের কাজ অসাধারণ, লম্বা ইনিংস খেলার তাড়না আর দৃষ্টিনন্দন সব স্ট্রোকে মুগ্ধ করলেন নাঈম। নাঈম যখন মুগ্ধ করা শট খেলে চলেছেন ভারতীয় দর্শকদের মুখ ডুবে যাচ্ছিল হতাশার আঁধারে! তবুও তাঁরা ফিরে ফিরে তাকিয়ে দেখছেন ২০ বছরের এক তরুণ ওপেনার কী দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছেন। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জেতা হয়নি। তবে এ সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি নাঈম। ৩ ম্যাচে ৪৭.৬৬ গড়ে ১৪৩ রান করে সিরিজে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তিনিই।

গত সেপ্টেম্বরে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের মাঝপথে আকস্মিক বাংলাদেশ দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল নাঈমকে। একাদশে অবশ্য তাঁর জায়গা মেলেনি। সিরিজ শেষ যখন জানতে চাওয়া হলো, এতে কি কিছুটা হতাশ? বললেন, ‘না। বরং জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে জায়গা পাওয়াটা আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। অনেক কিছু শিখেছি, যা পরের সিরিজে কাজে দেবে।’

নাঈম আসলে অপেক্ষায় ছিলেন একটা সুযোগের। সে সুযোগ মিলে গেল এই ভারত সফরে। দিল্লিতে ভালো শুরু করেছিলেন, বেশি দূর এগোতে পারেননি (২৬)। রাজকোটে আরেকটু এগোলেন (৩৬), কিন্তু ইনিংসটার সুন্দর সমাপ্তি ছিল না। আজ নাগপুরে নাঈম জানিয়ে দিলেন, তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়।

ফরিদপুরের শহরতলি থেকে উঠে আসা নাঈমের ক্যারিয়ারের বড় টার্নিং পয়েন্ট গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৫৩.৮০ গড়ে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৮০৭ রান করে হয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। প্রিমিয়ার লিগের পারফরম্যান্স তাঁকে নিয়ে আসে নির্বাচকদের রাডারে। গত পাঁচ ম্যাচে ‘এ’ দল, ইমার্জিং দল—যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন ধারাবাহিক ভালো খেলেছেন। সবশেষ অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের বিপক্ষেও দুর্দান্ত খেলেছেন।

ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে দলকে দুর্দান্ত শুরু এনে দিতে পারেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে স্ট্রোক খেলতে পারেন। বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট এ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকেই তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে। কাল কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নাঈমকে নিয়ে যেমন বলছিলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে তার ভালো রেকর্ড নেই। তবে ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের দেখতে এটিই সেরা সংস্করণ। জানি না তামিম, মুশি (মুশফিক), রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) কত দিন খেলবে বাংলাদেশ দলের হয়ে। তবে তরুণদের জন্য এটাই সেরা সুযোগ (নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণে)।’

এ সিরিজের আগে টি-টোয়েন্টিতে ভালো রেকর্ড ছিল না তাঁর। তবে আজ ৮১ রানের ইনিংসটা সামনে এগিয়ে যাওয়ার বড় সনদ হিসেবেই কাজ করবে নাঈমের। তাঁর আফসোস হতে পারে শুধু এটা ভেবে, সতীর্থদের ব্যর্থতায় বৃথা গেল দৃষ্টিনন্দন ইনিংসটা ।