অসম্পূর্ণ গল্পগুলোর নায়ক তাঁরা

প্রতিভাবান ইংলিশ ক্রিকেটার বেন হোলিওকের আজ জন্মদিন। বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ৪২ বছর। ১৭ বছর আগে এক প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তাঁর প্রাণ। হোলিওকের মতো আর কোন কোন ক্রিকেটার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন?
বেশ প্রতিভাধর ক্রিকেটার ছিলেন বেন হোলিওক। ছবি: সারে ক্লাবের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া
বেশ প্রতিভাধর ক্রিকেটার ছিলেন বেন হোলিওক। ছবি: সারে ক্লাবের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

ইংল্যান্ডের অন্যতম প্রতিভাবান অলরাউন্ডার মনে করা হতো বেন হোলিওককে। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন, সিম বোলিংটাও মোটামুটি করতে পারতেন। বড় ভাই অ্যাডাম হোলিওকের সঙ্গে একই টেস্টে অভিষিক্ত হন, ১৯৯৭ সালে। সে বছরের শুরুতেই ওয়ানডের স্বাদ পান। পরে ভাই ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনাটা কাল না হয়ে দাঁড়ালে কে জানে, হয়তো ভাইয়ের মতো একদিন তিনিও ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিতে পারতেন।

ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি টেস্ট ও বিশটি ওয়ানডে খেলা হোলিওক সেদিন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। তাঁর পোরশে গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এক সড়কের দেয়ালে ধাক্কা খায়। বেঁচে ফিরতে পারেননি আর। বেঁচে থাকলে আজ ৪২ বছর বয়স হতো এই তারকার। হোলিওকের মতো আর কোন কোন ক্রিকেটার সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

মানজারুল ইসলাম রানা ও সাজ্জাদুল হাসান সেতু
২০০৭ বিশ্বকাপের ঘোষিত স্কোয়াডে জায়গা হয়নি বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার মানজারুল ইসলাম রানার। দল বিশ্বকাপ খেলতে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে চলে গেলে তিনি চলে যান নিজ শহর খুলনায়। ১৬ই মার্চের বিকেলে অনুশীলন শেষ করে নিজের প্রিয় মোটরসাইকেলের পেছনে সতীর্থ সাজ্জাদুল হাসান সেতুকে নিয়ে যাচ্ছিলেন শহরের অদূরে প্রিয় এক হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে। কিন্তু খুলনার বালিয়াখালি ব্রিজের কাছে আসতেই বিপরীত দিক থেকে আসা এক অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তাঁদের। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রানা। গুরুতর আহত অবস্থায় সেতুকে হাসপাতালে নেওয়া গেলেও পরে আর বাঁচানো যায়নি।

হ্যান্সি ক্রনিয়ে
ঠিক সড়ক দুর্ঘটনা নয়, তবুও ক্রনিয়ের মৃত্যুটা হয়েছিল যাত্রাপথেই। তাঁর মৃত্যুকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘আলোচিত’ মৃত্যু হিসেবে ধরে নিতে অত্যুক্তি নেই কারওর। প্রায় এক দশক ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তিনি ছিলেন অন্যগ্রহের এক ক্রিকেট চরিত্র। সম্মান-খ্যাতি সবকিছুই পেয়েছিলেন। প্রোটিয়া দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। কিন্তু মাত্র একটি ঘটনাই তাঁর জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। ২০০০ সালে ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে হতবাক করে দেন গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে। এরপর ক্রিকেট থেকে বাইরেই ছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ২০০২ সালে এক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ব্যাপারটি এখনো প্রশ্ন তোলে সন্দেহ প্রবণ ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্তরে।

রুনাকো মর্টন
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৫ টেস্ট আর ৫৬ ওয়ানডে খেলেছেন রুনাকো মর্টন। অনেক প্রতিশ্রুতির ক্যারিয়ারে ওয়ানডে গড় ছিল ৩৩। তবে টেস্টে নিজের প্রতিভাটা অনূদিত করতে পারেননি, গড় ছিল ২২। উজ্জ্বল ক্যারিয়ার বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে মাঠের বাইরের আচরণের জন্য। ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ডাক পেয়েও বাদ পড়েছিলেন অদ্ভুত এক কারণে। তিনি মিথ্যাচার করেছিলেন তাঁর দাদার মৃত্যু নিয়ে। ২০১০ সালে তাঁকে শেষবারের মতো ক্যারিবীয় রঙে দেখা যায়। ২০১২ সালের ৪ মার্চ একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলে একাই গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন সলোমন হোচোয় হাইওয়ে ধরে। স্থানীয় সময় রাত ১১টার দিকে সেন্ট্রাল ত্রিনিদাদের চেজ ভিলেজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায় তাঁর গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৩ বছর।

ডন প্রিঙ্গল
১৯৭৫ সালের শেষদিকে কেনিয়ার নাইরোবিতে একটি ম্যাচে মাত্র ১৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ডন প্রিঙ্গল। এই কীর্তি গড়েই গাড়ি চালিয়ে ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান। ওয়ানডে ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম পৃথিবীর মায়া তিনিই কাটিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপে পূর্ব আফ্রিকার হয়ে খেলেছিলেন ডন। পরে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে ১৯৮৭ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ডনের ছেলে ডেরেক প্রিঙ্গল।

লরি উইলিয়ামস
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছাড়া ছাড়া ভাবে ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ণ চন্দরপলদের সঙ্গে ১৫টি ওয়ানডে খেলেছিলেন লরি উইলিয়ামস। বেশ কার্যকরী অলরাউন্ডার ছিলেন। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ২০০২ সালে মারা যান তিনি। বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল তাঁর গাড়ির।

কোলি স্মিথ
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ক্রিকেটারের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি অলরাউন্ডার গ্যারি সোবার্সের নাম। স্মিথ, সোবার্স ও টম ডিউডনি—এই তিন ক্রিকেটার ইংল্যান্ডে এক চ্যারিটি ম্যাচ খেলার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সোবার্স। পিছে ঘুমিয়ে ছিলেন স্মিথ। গাড়ি চালাতে চালাতে রাত পেরিয়ে ভোর হয়। ভোরবেলায় হঠাৎ গাড়ির সামনে চলে আসে একটা গবাদিপশুর দশ টনি ট্রাক। তা দেখে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি সোবার্স। সামনে ছিটকে এসে পড়েন স্মিথ। আঘাত লাগে মেরুদণ্ডে। প্রথমে আঘাত গুরুতর বলে মনে না হলেও পরে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ও কোমায় চলে যান। তিন দিন পর মারা যান স্মিথ। ঘটনার পর সোবার্সকে পুলিশি জেরার মুখোমুখি হতে হয়। আদালতে দায়িত্বজ্ঞানহীন অবস্থায় গাড়ি চালানো জন্য অভিযুক্ত করা হয় সোবার্সকে।