ক্রিকেট ছাড়ার কথা ভেবেছিলেন কোহলি

মানসিক অবসাদে ভুগেছিলেন কোহলিও। ছবি : এএফপি
মানসিক অবসাদে ভুগেছিলেন কোহলিও। ছবি : এএফপি

মার্কাস ট্রেসকোথিক, জোনাথন ট্রট, স্টিভ হার্মিসন, ম্যাথু হগার্ড, শন টেইট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল—ক্রিকেটের এই তারকাদের মধ্যে মিল কোথায়, বলতে পারবেন?

এদের সবাই ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে মানসিক অবসাদে ভুগেছেন। ট্রেসকোথিকের সৌজন্যেই এটা প্রথম জানা যায়। সেটি বেশ ভয়াবহ, হেলাফেলা করার মতো অবশ্যই নয়। ট্রেসকোথিক, ট্রটরা অবসাদে ভুগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। ফ্লিনটফ, হার্মিসন ও হগার্ডের মতো কেউ কেউ অবসাদের সঙ্গে লড়াই করেই ক্রিকেট চালিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ অবসাদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য কিছুদিন ক্রিকেট থেকে দূরেও থেকেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পেসার শন টেইট যার মধ্যে অন্যতম। কিছুদিন আগেই মানসিক অবসাদের কারণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতি নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে এবার ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি জানালেন, ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড সফরের পর তিনিও অবসাদে ভুগেছিলেন। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন অনেকবার।

>

মানসিক অবসাদের কাছে পরাস্ত হয়ে ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছেন, বা অবসর নিয়েছেন, এমন ঘটনা বহু ঘটেছে। অবসর নেওয়ার তালিকায় যোগ হতে পারত বিরাট কোহলির নামও।

সেই ইংল্যান্ড সফরটা দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছিল ভারত অধিনায়কের। পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে কোহলির রান ছিল মাত্র ১৩৪। জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, লিয়াম প্লাঙ্কেট, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডানদের বিষ মেশানো সুইংয়ের মোকাবিলা কোনোভাবেই করতে পারছিলেন না তিনি। বাজে পারফরম্যান্সের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল কোহলির মনস্তত্বেও। সিরিজ শেষে অবসর নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি, ‘ক্যারিয়ারে এমন কিছু সময় গেছে যখন মনে হয়েছে সবকিছু শেষ। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কাকে কী বলব, কীভাবে বলব সেটাও জানতাম না। আমি যে মানসিকভাবে ভালো নেই, ক্রিকেট থেকে যে দূরে থাকতে চাইছি সেটাও বলার মতো মানুষ খুঁজে পাইনি আমি। মানসিক অসুস্থতার ব্যাপারটা সবাই কীভাবে নেবে সেটা বুঝে উঠতে পারিনি। এসব ব্যাপার একদমই হেলাফেলা করা উচিত নয়। একজন ক্রিকেটারের ব্যাপারে সব সময় দলের খেয়াল রাখা উচিত।’

প্রসঙ্গক্রমে উঠে এসেছে ম্যাক্সওয়েলের ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়ার বিষয়টাও। ম্যাক্সওয়েলকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন কোহলি, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দলে মত প্রকাশের সুযোগ থাকা দরকার। ম্যাক্সওয়েল অসাধারণ একটা কাজ করেছে। মানসিক অবসাদের বিষয়টা যখন চরম পর্যায়ে চলে যায়, তখন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করি আমি।’

ভারতের কোনো খেলোয়াড় কখনো মানসিক অবসাদের কারণে অবসর নেননি, বা সাময়িক বিরতিতেও যাননি। ভবিষ্যতে কেউ এ রকম কিছু করলে সেটাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখার আহ্বান জানিয়েছেন কোহলি, ‘আমি এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি। আসলে সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। অন্য কে কী ভাবছে সেটা বোঝার উপায় নেই একদম। কিছু সময়ের জন্য খেলা থেকে দূরে থাকলে যদি আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটে, তাহলে সেটাই করা উচিত। এটাকে কোনোভাবেই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত না। সবার সঙ্গেই এমন হয়। অস্বাভাবিক কিছু না এটা।’