চাপ মাথায় নিতে চান না মুমিনুল

টেস্টের আগের দিন আজ হোলকার স্টেডিয়ামে ভারত অনুশীলন করেছে সকালে। বিকেলে বাংলাদেশ। টেস্টের আগের দিন ভারত বিশ্রাম নেওয়ার একটু বেশি সময় পেল, বাংলাদেশ কম। স্বাগতিকেরা ঘরের মাঠে খেলার একটু-আধটু ‘সুবিধা’ নিয়ে থাকে। এ আর এমন কী!

বাংলাদেশের যদি ‘আপত্তি’ করার কিছু থাকে, সেটি হওয়া উচিত প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে। ভারতের মাটিতে একটা টেস্ট সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, অথচ কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ নেই—এমনটা সবশেষ কবে হয়েছে? যেনতেন টেস্ট সিরিজ নয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ইন্দোর টেস্টের পর কলকাতায় এমন এক ম্যাচ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, যেটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই দলের কারও। বাংলাদেশের নতুন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক অবশ্য প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলাটা বড় করে দেখতে চাইছেন না, ‘আমার কাছে মনে হয় না প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি আছে। আমাদের যে আটজন নতুন করে টেস্ট দলে যোগ হয়েছে সবাই চার দিনের ম্যাচ খেলে এসেছে। এমনকি আমি নিজেও গত পাঁচ-ছয় মাসে ৮ থেকে ১০টা চার দিনের ম্যাচ খেলেছি। মুশফিক-

চাপটা সরিয়েই রাখতে চান মুমিনুল হক। ছবি: এএফপি
চাপটা সরিয়েই রাখতে চান মুমিনুল হক। ছবি: এএফপি

রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই সবাই প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছে। মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে। সবাই খেলার মধ্যেই ছিল, আশা করি ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারব। আর আমরাও (প্রস্তুতি ম্যাচ) খেলিনি, ভারতও খেলেনি।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছেন, টেস্টের জন্য তাঁরা তৈরি। কিন্তু টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বর দল বাংলাদেশ কী লক্ষ্য নিয়ে নামছে এক নম্বর দল ভারতের বিপক্ষে? মুমিনুল প্রথাগত কথাটাই বললেন, ‘আমাদের কোনো চাপ নাই। আমাদের কাছে সেভাবে প্রত্যাশা নেই। আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। তেমন চাপও নেই যে আমাদের জিততে হবে। আমরা ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব।’

জেতার চাপ নেই মানে! বাংলাদেশ শুধুই ভালো ক্রিকেট খেলার লক্ষ্য নিয়ে কীভাবে নামে? এটা যে শুধু টেস্ট সিরিজ নয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের একটা অংশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ বলেই তো বিরাট কোহলি বাংলাদেশের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলতে উন্মুখ হয়ে থাকেন। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি টেস্ট যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দলকে খেলতে হবে পয়েন্ট অর্জনের লক্ষ্যে। আর পয়েন্ট পেতে হলে হয় জয় না হয় ড্র করতে হবে টেস্ট। আর সেখানে কিনা বাংলাদেশের জেতার চাপ নেই!

বিষয়টি ধরিয়ে দিতেই মুমিনুল হক বুঝতে পারলেন, এই সিরিজ তো আর আগের মতো টেস্ট সিরিজ খেলার মতো নয়। বাংলাদেশ অধিনায়ক এবার একটু সংশোধনী দিয়ে বললেন, নিজেদের ওপর চাপ সরিয়ে রাখতেই অমন বলছেন, ‘সব খেলোয়াড়ই মাঠে নামে জেতার জন্য। যখন আপনি বেশি প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলবেন তখন অনেক চাপ চলে আসবে আমাদের ওপর।’

আগেই দেখেছিলেন। আজ বিকেলে মাঠ ছাড়ার আগে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়ে আরেকবার উইকেট দেখেছেন মুমিনুল। হোলকার স্টেডিয়ামের উইকেটে কাল যে ঘাস দেখা গিয়েছিল, আজ অনেকটাই কমেছে। তবে উইকেটে যথেষ্ট সবুজ। ঘাস থাকা মানেই পুরো পেস সহায়ক হবে, তা নয়। উইকেট বরং স্পোর্টিং—সবার জন্যই কিছু থাকবে। বল ভালো ব্যাটে আসবে, বাউন্স থাকবে। পেসাররা ভালো জায়গায় বোলিং করলে হতাশ হবেন না। তবে প্রথম দুই-তিন দিনে স্পিনারদের খুব বেশি কিছু করার থাকবে না।

এই উইকেটে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি তিন পেসার খেলাতে আগ্রহী। বাংলাদেশ কি একই কৌশল অবলম্বন করবে? মুমিনুল আজ দুপুরে একাদশ নিয়ে কিছু বলতে পারলেন না, ‘এখনো সেভাবে সিদ্ধান্ত হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্ট এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। উইকেট খুব ভালো। আমার কাছে খুব ভালো উইকেট মনে হয়েছে। ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো, আমার কাছে মনে হয়েছে খুব স্পোর্টিং হবে।’

অনুশীলন শেষে ইন্দোরের স্নিগ্ধ বিকেলে ড্রেসিংরুমের সামনে গোল হয়ে বসল পুরো বাংলাদেশ দল। কোচ ডমিঙ্গো যেন সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ‘একতাই বলে’র মন্ত্র। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হলে এটিই সেরা উপায়—এক-দুই জনের পারফরম্যান্স নয়, খেলতে হবে একটা দল হয়ে।