'জীবন' পেয়ে বাঁচে কেউ, কেউ হেলায় নষ্ট করে

মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই খেললেন বড় ইনিংস। ছবি: এএফপি
মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই খেললেন বড় ইনিংস। ছবি: এএফপি

ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! জীবন পেলে তার সদ্ব্যবহার করতে হয়। ক্রিকেটে এসব অনেক পুরোনো আপ্তবাক্য। ইন্দোর টেস্ট দেখে প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কি কথাগুলো ভুলে বসে আছেন? না, অবশ্যই তাঁরা বসে নেই। ফিল্ডিং করতে করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে খেলোয়াড়দের। বোলারদের হাতও বুঝি ক্রমশ বিদ্রোহ করে উঠছে? কতক্ষণ আর বল করা যায়! অবশ্য ইন্দোরে যা ঘটছে তার চেয়েও বাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ দলের। কিন্তু ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার ‘পাঠ’ বুঝি সেভাবে নেওয়া হয় না, হয়ে ওঠে না!

শিক্ষা নেওয়াই ক্রিকেটারদের বৈশিষ্ট্য। ইন্দোর টেস্টের এ দুটি দিনে অন্তত ব্যাটিং থেকে ভালোই শিক্ষা পাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের। আর এ শিক্ষা দিচ্ছেন এমন এক ব্যাটসম্যান টেস্ট আঙিনায় যিনি এখনো ‘সদ্যোজাত’—মায়াঙ্ক আগারওয়াল। কিন্তু ব্যাটিং দেখলে মনে হয়, ঘরোয়াতে নিজেকে ঘষে-মেজে পরিণত মস্তিষ্ক নিয়েই পা রেখেছেন ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে। জীবন পেলে সদ্ব্যবহার করো—তাঁর ইনিংসটি তো এ কথারই পরিণত প্রতিফলন।

মায়াঙ্ক কেমন ব্যাটিং করছেন, সে কথায় না যাওয়াই ভালো। মাত্র ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে তিন সেঞ্চুরি, এর মধ্যে আজকের ইনিংসটিসহ দুইটি ‘ডাবল’। ডাবল সেঞ্চুরির পর ড্রেসিংরুম থেকে বিরাট কোহলি জানিয়ে দিয়েছেন তিন শ করে তারপর এসো। সে পথেই এগোচ্ছেন। অথচ কালই তাঁকে থামিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বলা ভালো ইমরুল কায়েস। মায়াঙ্ক ৩২ রানে থাকতে ক্যাচ তুলেছিলেন স্লিপে। ইমরুল স্লিপে দাঁড়িয়ে তা ‘স্লিপ’করলেন! ক্যাচটা যেভাবে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন সেটা শীত শীত আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ যায়। শৈশবে পানি কমে এলে হাতড়ে মাছ ধরার চেষ্টার কথা মনে আছে তো? অনেকটা তেমন!

ক্রিকেটে শিক্ষা নেওয়া যে কত ভালো, তা বিরাট কোহলি থেকে মায়াঙ্ক পর্যন্ত দেখিয়ে দিয়েছেন আজ। কোহলি আউট হওয়ার পর টিভি সেটে তাঁর ব্যাটিংয়ের ত্রুটি ধরিয়ে দিয়েছেন ধারাভাষ্যকার লক্ষ্মণ শিবারামাকৃঞ্চণ। ড্রেসিং রুমে দাঁড়িয়ে তা দেখে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। টেকনিক যে শুধরে নেবেন তা বলাই বাহুল্য। আর মায়াঙ্ক? কাল ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ওভাবে ক্যাচ তোলার পর আজ ফ্রন্ট ফুটে তাঁকে এতটুকু নড়বড়ে লাগেনি। পেসারদের সামনে তো নয়ই। উইকেটের মূল্য বোঝেন বলেই প্রতিপক্ষের হাতে পাওয়া ‘জীবন’কে তাঁদের জন্যই পরিণত করেছেন দুঃস্বপ্নে। একদম জাত ব্যাটসম্যান বলতে বোঝায় আরকি!

এবার বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের প্রসঙ্গে আসা যাক। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এর মধ্যে দলের ব্যাটিংয়ে তিন ‘স্তম্ভ’ মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহ মিলে ‘জীবন’ পেয়েছেন চারবার। কিন্তু তাঁরা সবাই মিলে দলের স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন মাত্র ৯০ রান। উইকেটের মূল্য কে কতটা বোঝে সে পার্থক্য তো এখানেই পরিষ্কার!

মুশফিক জীবন পেয়েছেন দুটি। ৩ রানে কোহলি তাঁর ক্যাচ ফেলেন, আর ১৫ রানে অজিঙ্কা রাহানে। টেস্টে একবার জীবন পেলেই যেখানে ব্যাটসম্যানেরা বড় ইনিংস খেলে ফেলেন মুশফিক সেখানে দুবার পেয়েও যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ২৮ রান (৪৩ রানে আউট হন মুশফিক)। মুমিনুল জীবন পেয়েছেন ৪ রানে, এরপর যোগ করতে পেরেছেন ৩৩। মাহমুদউল্লাহ তো আরও কম—৭ রানে জীবন পাওয়ার পর যোগ হয়েছে মাত্র ৩। দুই দলের ব্যাটসম্যানদের সুযোগের সদ্ব্যবহারের এই যা তফাৎ।

মায়াঙ্কের ইনিংস যত এগোচ্ছে তফাৎটা আরও ধারালো হয়েই চোখে বিঁধছে। সমর্থকেরা ভাবতেই পারেন, কেউ ‘জীবন’ পেয়ে বাঁচে কেউ আবার হেলায় নষ্ট করে!