বাংলাদেশ কোচ বলছেন, এভাবে চলবে না

বাংলাদেশ কোচ বলছেন, এভাবে চলবে না
বাংলাদেশ কোচ বলছেন, এভাবে চলবে না
>রাসেল ডমিঙ্গো বারবার বললেন, দলের কাঠামোগত পরিবর্তন আনতেই হবে। বাংলাদেশ কোচ আজ সংবাদ সম্মেলনে কিছু তিক্ত সত্য তুলে ধরলেন

ইন্দোর টেস্টে সাত ব্যাটসম্যান, চার বোলার নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশের লক্ষ্য কী, সেটি বোঝা কঠিন নয়। প্রতিপক্ষ ভারত খেলছে ছয় ব্যাটসম্যান, পাঁচ বোলার (তিন পেসার, দুই স্পিনার) নিয়ে—টেস্ট জিততে হলে এটিই আদর্শ সমন্বয়। ইন্দোরে বাংলাদেশ জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামবে, এটা ভাবার সুযোগ নেই। কিন্তু খেলার আগেই হেরে যাওয়ার মনোভাব কেন?

টেস্ট আঙিনায় ২০ বছরে পা দেওয়া বাংলাদেশ এখনো সঠিক সমন্বয় খুঁজে পায় না। দলে তিন পেসার নিতে পারে না। সব ‘না’-এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে রাসেল ডমিঙ্গো আজ সংবাদ সম্মেলনে কিছু তিক্ত সত্য তুলে ধরলেন। বাংলাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি তাঁর দ্বিতীয় টেস্ট। দুই টেস্টেই বুঝে গেছেন, কী কঠিন চাকরিটা নিয়েছেন! ডমিঙ্গোর কথা, বাংলাদেশ যেভাবে টেস্ট খেলছে, এভাবে বেশি দূর এগোনো যাবে না। বাংলাদেশ কোচের উপলব্ধি ভাঙতে হবে দলের কাঠামো, ‘কোনো সন্দেহ নেই দলের কাঠামোগত বদল আনতে হবে। না হলে ফল একই হতে থাকবে। নির্বাচকদের সঙ্গে বসে সামনে এগোনোর পথ খুঁজে বের করতে হবে। আমাকে চিহ্নিত করতে হবে কোন কোন খেলোয়াড় দলকে সামনে এগিয়ে নিতে পারবে। যদি আমাদের নতুন মুখ নিয়ে এগোতে হয়, কিছুটা সময় ভুগতে হয়, আমার মনে হয় বর্তমানে যা হচ্ছে সেটির চেয়ে খারাপ কিছু হবে না। হ্যাঁ, এই দলে দারুণ কিছু খেলোয়াড় আছে তাদের সম্মান করতে হবে। বাংলাদেশের হয়ে তাদের পারফরম্যান্সকে সম্মান জানাতে হবে। তবে দলের স্বার্থই আপনাকে বড় করে দেখতে হবে।’

ইন্দোর টেস্টে বাংলাদেশ তিন পেসার খেলাতে পারেনি। কেন একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে নেমেছে, সেটির ব্যাখ্যায় ডমিঙ্গো বলছেন, তাঁর হাতে যে আর কোনো উপায় নেই, ‘যখন আপনার দলের শীর্ষ ছয় ব্যাটসম্যানের গড় ৪৫-৫০ হবে অনায়াসে ৬ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে পারেন। ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ দেখেন। দুর্ভাগ্য, আমাদের তেমন ব্যাটসম্যান নেই। এ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছি। যদি আপনি উইকেট না পান তখন শুনতে হবে কেন অতিরিক্ত বোলার নিইনি।’

ভারতের মতো অভিজ্ঞ শক্তিশালী এক দলের বিপক্ষে তারুণ্যনির্ভর এক বাংলাদেশ খেলছে। এখানেই দুই দলের অনেক বড় পার্থক্য। ডমিঙ্গো যে পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন, সেটিও ভুল নয়। টেস্টে একমাত্র মুমিনুল হকের ব্যাটিং গড় ৪০-এর ওপরে। মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহর ৩০-এর ঘরে। বাকি সবার ৩০-এর নিচে। এই যদি হয় পরিসংখ্যান, একজন কোচ কীভাবে ছয় ব্যাটসম্যান নিয়ে তাঁর রণকৌশল সাজাবেন? ডমিঙ্গোর উপলব্ধি দলের বর্তমান কাঠামো ভাঙতেই হবে, ‘দুই পেসার নিয়ে খেলা সত্যি কঠিন। আমাদের তৃতীয় একজন পেসার খুঁজে বের করতে হবে যে ব্যাটিংও করতে পারে। সাইফউদ্দিন আছে, কিন্তু সে চোটে পড়েছে। দলের যে কাঠামো, এটা নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যারা খেলে তারা বেশির ভাগই ভালো উইকেট বানাবে যেখানে খুব একটা স্পিন কাজ করবে না। আমাদের আরেকজন পেসার খুঁজে পেতে হবে যে সাত কিংবা আটে ব্যাটিং করতে পারে।’

চাইলেই কি টেস্টে দুর্দান্ত পেসার পাবেন ডমিঙ্গো? বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের যে কাঠামো সেটি পেসার তুলে নিয়ে আসার বড় অন্তরায়। ডমিঙ্গোও সেটি জেনে গেছেন এ কদিনে, ‘টেস্ট জিততে হলে আপনার ভালো বোলিং ইউনিট লাগবেই। বাইরে ভালো করতে হলে ছয় বোলার পর্যন্ত লাগে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ভালো করছে এভাবেই। তারা যেকোনো কন্ডিশনে দলে পাঁচ কিংবা ছয় বোলার নিতে পারে। সে খেলা দেশে হোক কিংবা বিদেশে। দেশের মাঠে বাংলাদেশের শক্তি অবশ্যই স্পিনে। তবে আমাদের খেলাটায় আরও উন্নতি করতে হবে। আমাদের ফাস্ট বোলারদের সুযোগ দিতে হবে ম্যাচে যেন তারা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। দিনে ১৮-২০ ওভার করতে পারে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যে উইকেট সেখানে (পেস বোলারদের পরিচর্যা) অনুমোদন করে না। চার দিনের ম্যাচে ছয়-সাত ওভার বোলিং করে।’

আজ দ্রুত বিরাট কোহলি ফিরে যাওয়ার পর কিছুটা চাপে পড়েছিল ভারতীয় দল। সেটি তারা দ্রুতই কাটিয়ে উঠেছে। ডমিঙ্গোর প্রত্যাশা, তাঁর ছাত্ররা এটা দেখেও কিছু শিখবেন।