আবিদালের যকৃৎ আবার ঝামেলায় ফেলছে বার্সেলোনাকে

মরণব্যাধি হার মেনেছিল আবিদালের কাছে। কিন্তু বার্সেলোনা যে পথে সে কাজটা করেছে সেটা নিয়ে সন্দেহ তীব্র হচ্ছে। ছবি: বার্সা টুইটার
মরণব্যাধি হার মেনেছিল আবিদালের কাছে। কিন্তু বার্সেলোনা যে পথে সে কাজটা করেছে সেটা নিয়ে সন্দেহ তীব্র হচ্ছে। ছবি: বার্সা টুইটার

এরিক আবিদালের গল্পটা লা লিগার ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে। ২০১১ সালে তাঁর যকৃতে টিউমার ধরা পড়ার পর থমকে দিয়েছিল সবাইকে। রিয়াল মাদ্রিদও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে ‘ভালো হয়ে ওঠ আবিদাল’ লেখা টি-শার্ট পরে মাঠে নেমেছিল। বার্নাব্যুতেও একই কথা লেখা ব্যানার দেখা গিয়েছিল। সবার ভালোবাসায় ২০১২ সালে সফল এক অস্ত্রোপচার শেষে যকৃৎ প্রতিস্থাপন করে ফিরে এসেছিলেন আবিদাল।

আবিদালের প্রতি বার্সেলোনার ভালোবাসা সেবার ভালোভাবেই টের পাওয়া গিয়েছিল। ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে জেনেও যকৃৎ দান করতে চেয়েছিলেন দানি আলভেজ। কিন্তু বন্ধুর ক্যারিয়ার শেষ করাতে সাত দেননি আবিদাল। পরে তাঁর আত্মীয় জেরার্দ আরমান্দের কাছ থেকে যকৃৎ নিয়ে অস্ত্রোপচারের পর ফিরেছিলেন আবিদাল। শুধু ফেরেননি, বুট পায়ে মাঠেও নেমেছেন। দুই বছর পর ক্যারিয়ারে যতি টানলেও বার্সেলোনার টানে আবার ফিরে এসেছেন ক্লাবের স্পোর্টিং পরিচালক হিসেবে।

আবিদালের সেই অস্ত্রোপচার নিয়ে অবশ্য তখনই অনেক আলোচনা হয়েছিল। অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন আত্মীয় জেরার্দের কাছ থেকে যকৃৎ নেওয়ার কথা ভুয়া, বার্সেলোনার সে সময়কার সভাপতি সান্দ্রো রোসেল আবিদালের জন্য কালোবাজার থেকে লিভার কিনেছেন। ২০১৭ সালে এল কনফিডেনশিয়াল এক প্রতিবেদন ছাপিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল রোসেল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবৈধভাবে কেনার জন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। রোসেল, হুয়ানিও নামের এক লোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে জুয়ানিও বলেছিলেন, ‘আমি আবিদালকে বলেছিলাম তুমি এখন কথা বলতে পারছ কারণ কেউ তোমার জন্য ওই লিভারটা কিনেছে।’

বার্সেলোনা অবশ্য এসব প্রতিবেদনকে সব সময় উড়িয়ে দিয়েছে। সে সময় ক্লাব সূত্র জানিয়েছিল, খেলোয়াড়ের যকৃৎ প্রতিস্থাপনে কোনো অনিয়ম হয়নি। হাসপাতালের ওপর আমাদের পূর্ণ ভরসা আছে এবং আবিদালের সম্মান নিয়ে আমাদের মাঝে কোনো দ্বিধা নেই। বার্সেলোনার এমন জবাবেও অবশ্য ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়েনি। বরং ২০১৮ সালে এ নিয়ে আবারও শুনানি শুরুর আবেদন করা হয়েছে। এবং এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সম্প্রতি আবিদালের কাজিন জেরার্দকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

সাম্প্রতিক তথ্যে ব্যাপারটা বার্সেলোনার জন্য বিব্রতকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত রয়েছে। এ সপ্তাহেই আদালতে সাক্ষ্য দেবেন জেরার্দ আরমান্দ। এবং বার্সেলোনার ভূমিকা নিয়ে তাঁর মুখেও সন্দেহ টের পাওয়া যাচ্ছে না, ‘যত সময় যাচ্ছে তত মনে হচ্ছে ব্যাপারটা সন্দেহজনক। আমিও জানতে চাই কী হয়েছে। কিছু না হলেই ভালো। কিন্তু যদি কিছু থেকেও থাকে, আশা করি এরিক এটা জানত না। আমি আশা করি এর সঙ্গে এরিকের কোনো সম্পর্ক নেই। তা না হলে ব্যাপারটা খুব বিশ্রী হয়ে যাবে।’

আরমান্দের মনে এখন সন্দেহ জাগছে। কিন্তু ২০১২ সালে অস্ত্রোপচারের পর প্রথম যখন এমন অভিযোগ তোলা হয়েছিল, হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমিই তো দিলাম লিভার, ফলে বুঝতেই পারছিলাম না কিছু। আমার পরিবারের সবাই দেখতে এসেছিল। দেড় মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। আর তখন কি না শুনলাম আবিদাল যে লিভার পেয়েছে সেটা আমার না। প্রথমে অবাক হলাম, হেসেও দিলাম, “বললাম কী যে বলে!”’

আরমান্দ জানিয়েছেন যকৃৎ দান করার পরও আবিদালের সঙ্গে তাঁর এখন কোনো সম্পর্ক নেই, ‘আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল। একে অপরের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয়নি, আবার দেখা করেছিলাম। কিন্তু গত আট-নয় মাস ধরে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আর কথা বলি না। আমি জানি না ও ভালো আছে না খারাপ আছে। কিছুই জানি না।’