বাংলাদেশের জার্সির অপেক্ষায় ফিনল্যান্ড-প্রবাসী তারিক

>বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার কাজী তারিক রায়হান। তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে বসুন্ধরা কিংস।

‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার খবরে খুব আবেগী হয়ে পড়েছিলাম’

ফিনল্যান্ড জাতীয় যুব দলের হয়ে খেলা এক ফুটবলারের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ায় তাঁর ভেতরের উত্তেজনাটা ঠিকই অনুভব করা গেল। একটু আগে জিমে ঘাম ঝরিয়ে আসা ১৯ বছরের ছেলেটা যেন পারলে আকাশে উড়তে চাইছেন। দুই বছর আগে থেকে দেখা তাঁর রঙিন স্বপ্নটা যে এখন আকাশে ডানা মেলেছে।

কী সেই স্বপ্ন? বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে চান কাজী তারিক রায়হান নামের ফিনল্যান্ড প্রবাসী এই ফুটবলার। কি চেনা চেনা লাগছে তাই না! খেলোয়াড়ি কৃতিত্বের কারণে বেশ কিছু দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তারিক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণ ফিনল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছেন, আলোচনা তাঁকে নিয়ে হতেই পারে! ১৯ বছর বয়সী এই প্রবাসী তরুণ খেলেন রক্ষণে। শেষ খেলছেন নিজের জন্মস্থান ট্যাম্পেরে শহরের ক্লাব ইলভেস ট্যাম্পেরেতে। বিশ্ব ফুটবল র‌্যাঙ্কিংয়ে এ মুহূর্তে ৫৫ নম্বরে অবস্থান করা ফিনল্যান্ডের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবল ক্লাব এটি। এ ক্লাবের হয়ে গত বছর ইউরোপা লিগের বাছাইপর্বে একটি ম্যাচে খেলার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর।

পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে তারিকের সামনে ফিনল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার সুযোগও আসতে পারত। তবে ভবিষ্যতে কী হতো না হতো, অতশত না ভেবে ছেলেটার চোখ এখন বাংলাদেশে। ইউরোপিয়ান দেশের হাওয়া বাতাসে বড় হলেও, এই ছেলের শেকড় যে বাংলাদেশে গাঁথা। বাবার মুখে গল্প শুনতে শুনতে তাই মনের গভীরে বাংলাদেশের পতাকা আঁকা। আর এখন তো রীতিমতো বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন নিয়ে পরিবার ছেড়ে চলে এসেছেন বাংলাদেশে।

ফিনল্যান্ডপ্রবাসী এই ফুটবলারের বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব বসুন্ধরা কিংসে স্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে নাম লেখানো চূড়ান্ত হয়েছিল আগেই। কিন্তু ঝুলে ছিল তাঁর নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ায় কেটে গিয়েছে সে বাঁধাটাও। বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ায় এখন স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার, ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে আমি খুব গর্বিত। এখানেই আমার শেকড়। ছোট বেলা থেকে বাবার মুখে বাংলাদেশের গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। সেই থেকে বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা। এখন আমার দুটি বাড়ি। একটি ফিনল্যান্ডে, আরেকটি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার খবরে আমি খুবই আবেগী হয়ে পড়েছিলাম।’

বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন দেখছেন ফিনল্যান্ডের প্রবাসী ফুটবলার তারিক কাজী। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার স্বপ্ন দেখছেন ফিনল্যান্ডের প্রবাসী ফুটবলার তারিক কাজী। ছবি: ফেসবুক

তারিকের বাবা কাজী শহিদুল আলমের দেশের বাড়ি নওগাঁ। ফিনল্যান্ডের ট্যাম্পেরে শহরের ‘ট্যাম্পের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স’ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন তিনি। তারিকের জন্মও ট্যাম্পেরে। তাঁর বাবা বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করলেও খুব ছোটবেলায় মাত্র একবার আসা হয়েছিল তারিকের। আর এবার বসুন্ধরা কিংসের হয়ে বাংলাদেশ অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। ঘরোয়া ফুটবলে ভালো পারফরম্যান্স করে জায়গা করে নিতে চান জাতীয় দলেও। বসুন্ধরা ক্লাবে নিজের রুমে বসে নিজের স্বপ্নের কথা ভাঙা ভাঙা বাংলায় প্রথম আলোকে শোনালেন তারিক, ‘বাবার সঙ্গে সব সময় আমি বাংলাতেই কথা বলি। বাবার ইচ্ছে আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলি। এটাই এখন আমার স্বপ্ন। এর জন্য যত পরিশ্রম করতে হয়, আমি করব। আমি বসুন্ধরা কিংসে জাতীয় দলের ফুটবলারদের সঙ্গে অনুশীলন করেছি। তারা অনেক ভালো ফুটবলার। তবে মনে হয় না আমিও তাদের থেকে পিছিয়ে আছি।’ বসুন্ধরা কিংস ক্লাব-সংশ্লিষ্টরাও মনে করেন, জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা রাখেন তারিক।

বাংলাদেশের বর্তমান অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ডেনমার্ক প্রবাসী। জামালের মতোই প্রবাসজীবন থেকে দেশের ফুটবলে এসেছেন ঘটছে তারিকের। সে যে বসুন্ধরায় নাম লেখাতে যাচ্ছেন, তা জানা আছে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডেরও। মাঠে সরাসরি তারিকের খেলা না দেখলেও ভিডিও ফুটেজ দেখে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন জেমি। কিংসের জার্সিতে ভালো খেলতে পারলে তারিকের জন্য জাতীয় দলের দরজা খোলা বলে প্রথম আলোকে জানিয়ে রাখলেন জেমি, ‘আমি শুনেছি, তারিক নামে এক প্রবাসী ফুটবলার বসুন্ধরা কিংসে খেলতে যাচ্ছে। তার ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে ভালো খেলোয়াড়। তবে সরাসরি খেলা না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ক্লাবের হয়ে খেললেই দেখতে পারব, সে এখানে কেমন করছে। ভালো করলে অবশ্যই জাতীয় দলে আসার সুযোগ রয়েছে।’

ফিনল্যান্ড অনূর্ধ্ব ‘-১৯ দলের হয়ে খেলা এক ফুটবলারের যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। শুধু দেখার অপেক্ষা বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারেন তিনি। এর ওপরেই নির্ভর করছে তাঁর স্বপ্ন পূরণ! তবে যে স্বপ্নের পেছনে ছুটছেন তারিক, তাঁর সেই স্বপ্নটা পূরণ হোক, এ আশাটা আমরাও তো করতে পারি।