কলকাতায় বাংলাদেশও 'স্বাগতিক'

কলকাতায় নিজেদের ‘স্বাগতিক দল’ ভাবতেই পারে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
কলকাতায় নিজেদের ‘স্বাগতিক দল’ ভাবতেই পারে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
>শুক্রবার থেকে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে শুরু হতে যাওয়া দিবারাত্রির টেস্টকে দুই বাংলার ‘গোলাপি বন্ধন’ বলছেন অনেকেই।

ইডেন গার্ডেনকে মনে হচ্ছে বিরাট এক উৎসবের মঞ্চ। মঞ্চ প্রস্তুত করতে আয়োজকেরা ভীষণ ব্যস্ত। আর একদিন পরই ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইডেন গার্ডেনে হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক, ভীষণ আলোচিত গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট। টেস্ট তো নয়, আয়োজকেরা বলছেন, দুই দেশের ‘গোলাপি বন্ধন’!

পরশু থেকে ইডেনে শুরু দিবারাত্রির টেস্ট আসলে শুধুই ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নেই। এটি রূপ নিয়েছে বিরাট এক উৎসবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। থাকছেন দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। পুরো টেস্টজুড়ে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রিকেট কিংবদন্তিদের পদচারণায় কলকাতার ‘স্বর্গীয় কানন’ কদিনের জন্য রূপ নেবে উৎসবের উদ্যানে!

এবার এপার-ওপার সব বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীকে একটু অন্যভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে ইডেন টেস্ট। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) নতুন সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীর চোখেমুখে আনন্দ আর প্রাপ্তির ছোঁয়া। বিকেলে ইডেনে এসে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলে গেলেন, ‘(বাংলাদেশের) প্রধানমন্ত্রী, (পশ্চিমবঙ্গের) মুখ্যমন্ত্রী ঘণ্টা বাজাবেন। লাঞ্চ বিরতিতে ভারতীয় কিংবদন্তিরা টিভি শো করবে। (সুনীল) গাভাস্কার, শচীন (টেন্ডুলকার), রাহুল (দ্রাবিড়), অনিল (কুম্বলে) থাকবে। চা বিরতিতে সাবেক অধিনায়কেরা মাঠের চারদিকে ল্যাপ অব অনার দেবে। চা বিরতিতে গানের অনুষ্ঠান থাকবে। রুনা লায়লা গাইবে। জিৎ গাঙ্গুলি গাইবে। একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমি খুব রোমাঞ্চিত।’

সৌরভ রোমাঞ্চিত। সিএবির সম্পাদক অভিষেক ডালমিয়া তো আবেগতাড়িত। সিএবির কার্যালয়ে ঢুকতেই পড়ে আইসিসি ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার বিরাট এক ছবি। তাঁরই ছেলে অভিষেক এখন বেঙ্গল ক্রিকেট সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। ধারণা করা হচ্ছে, সৌরভের পর তিনিই হতে যাচ্ছেন সিএবির সভাপতি। কাল রাতে বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন অভিষেক, ‘বাংলাদেশ যখন টেস্ট মর্যাদা পায় আমার বাবা তখন আইসিসির সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বড় ভূমিকা ছিল তখন। তিনি তখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রক্রিয়াটা ১৯৯৮ থেকে শুরু। পদক্ষেপটা ঢাকায় নকআউট টুর্নামেন্ট (মিনি বিশ্বকাপ) থেকে শুরু। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ব্যাপারে অনেক দেশ বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সমর্থন ছিল। আমার বাবা আইসিসিতে তাঁর শেষ মিটিংয়ে এটার নিষ্পত্তি করে তবেই তাঁর পর্ব শেষ করেছেন। অবশ্যই আমার জন্য এটা একটা নস্টালজিক মুহূর্ত। প্রায় ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ইডেনে বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে। বাংলার মানুষেরা ২০ বছর বঞ্চিত ছিল।’

অভিষেকের কাছে বাংলাদেশকে ‌‌ ‘সফরকারী’ দল মনে হয় না। কলকাতার এই তরুণ প্রভাবশালী ক্রিকেট প্রশাসকের কাছে বাংলাদেশকে মনে হচ্ছে নিজেদেরই দল, ‘আমাদের কাছে মনে হচ্ছে নিজেদেরই দল এসেছে সফরকারী দল হয়ে। কাগজ-কলমে বাংলাদেশ বিদেশি দল হিসেবে ইডেন টেস্ট খেলবে। তবে মনের দিক দিয়ে আমরা সবাই বাঙালি। আমাদের কাছে খেলাটা হোম টিম বনাম হোম টিমের। আশা করব বাংলাদেশ ভালো খেলবে। ঐতিহাসিক মুহূর্তটা সবাই উপভোগ করবে।’

উপভোগের কথা বলছেন, কিন্তু ইডেনের বাতাসে কান পাতলে যে শোনা যাচ্ছে—তিন দিনে শেষ হয়ে যাবে দিবারাত্রির টেস্ট! ইডেনের সবুজ উইকেট আর গোলাপি বলের জটিল আচরণ এমন ভাবতে বাধ্য করছে। ইডেনের কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় আজ মাঠে এসেছেন গোলাপি টি-শার্ট পরে। ইডেনের গোলাপি আবহে এমন পোশাকই তো মানন সই!

গোলাপি বলে যে অজানা আতঙ্ক, সুজনের কথায় সেটি কিছু কমে যাওয়ার কথা ক্রিকেটারদের, ‘কলকাতার উইকেট স্পোর্টিং হয়। গত তিন বছর ধরে যত ম্যাচ হয়েছে, এখানে সবার সহায়তা থাকে। সে রকম উইকেট বানিয়েছি যাতে সবার জন্য কিছু থাকে।’ ঘাস শুধু পেসারদের দিকে তাকিয়ে রাখা নয়, খেলাটা জমিয়ে তুলতেই উইকেট সবুজ করা হয়েছে বলে জানালেন সুজন, ‘গোলাপি বলে যারা খেলেছে, তাদের কাছেই শুনেছি উইকেটে একটু ঘাস ও শক্ত থাকলে ভালো হয়।’

উইকেট যেমনই হোক, গোলাপি বল যেমন আচরণ করুক—বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট নাকি ইন্দোরের মতো রক্ষণাত্মক কৌশলে নয়, ইডেনে খেলতে নামবে আক্রমণাত্মক মনোভাবে। সেটিই যদি হয়, রোমাঞ্চকর এক ইডেন টেস্টের অপেক্ষায় থাকতেই হয়।