বাংলাদেশ ইডেনে মিস করবে সাকিবের 'আর্ম বল'

ইডেন গার্ডেনসের উইকেটে গোলাপি বলে সুবিধা পাবেন স্পিনাররাও। ছবি: এএফপি
ইডেন গার্ডেনসের উইকেটে গোলাপি বলে সুবিধা পাবেন স্পিনাররাও। ছবি: এএফপি

হাইলাইটস: কাল ইডেন গার্ডেনসে দিবারাত্রির টেস্টে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ খেলা হবে গোলাপি বল। স্পিনারদের বল ধরতে কোনো অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্পিনারদের ঝুলিতে আর্ম বল, ফ্লিপার ও কুইকার থাকলে খেলতে অসুবিধা হবে ব্যাটসম্যান


ইডেন গার্ডেনসে দিবারাত্রির টেস্টে গোলাপি বল সরবরাহ করছে এসজি। ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান বল পরিদর্শক ওয়াসিউল্লাহ খান জানিয়েছেন, এসজি-র গোলাপি বল ‘গ্রিপ’(ধরা) করতে অসুবিধা হবে না স্পিনারদের। এ বলের সিম সিনথেটিক ও লিনেনে তৈরি, যা লাল বলের তুলনায় বেশি স্পষ্ট। লিনেন শিশির শোষণ করায় স্পিনারদের আঙুল সহজেই বল গ্রিপ করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের টেস্ট দলে রয়েছেন দুই বিশেষজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। গোলাপি বলে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য এই প্রথম। খুব স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে একটু চিন্তায় থাকার কথা স্পিনারদের। গোধূলিতে শিশির পড়লে বল ঠিকঠাক গ্রিপ করবে কি না, ইডেনের উইকেটে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঘাস থাকায় প্রত্যাশিত বাঁক পাওয়া নিয়েও সন্দেহে ভোগার কথা তাঁদের। তবে ঝুলিতে ‘আর্ম বল’ এবং ‘ফ্লিপার’ কিংবা ‘কুইকার’ ডেলিভারি থাকলে সুবিধা পেতে পারেন স্পিনারেরা।

২০১৬ সালে এই ইডেনেই সিএবি লিগে চার দিনের ম্যাচে প্রথম গোলাপি বলে খেলা হয়েছে। গোটা ভারতেই সেটা ছিল প্রথম গোলাপি বলের ম্যাচ। সে ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার ছিলেন প্রেমদীপ চট্টোপাধ্যায়। বিসিসিআইয়ের প্যানেলভুক্ত এ আম্পায়ার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সাধারণ স্পিন ডেলিভারির তুলনায় আর্ম বল এবং ফ্লিপার খেলতে বেশি অসুবিধা হবে ব্যাটসম্যানদের। ঠিক এ কারণেই ফের উঠে আসছে সাকিব আল হাসানকে না পাওয়ার আক্ষেপ।

আর্ম বল—শব্দটা বাঁ হাতি স্পিনারদের ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহার করা হয়। ডান হাতি অফ স্পিনারদের ঝুলিতেও এ ডেলিভারি থাকে। আর্ম বলের বৈশিষ্ট্য হলো বল স্পিন না করে ডেলিভারির সময় হাতের আঙুল যেদিকে থাকবে সেদিকে যাবে। সিম পজিশন সোজা থাকায় বল অনেক সময় সুইংও করে। বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ও কার্যকর আর্ম বল করে থাকেন সাকিব। স্কিডও করাতে পারেন। কিন্তু জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে নিষিদ্ধ হওয়ায় আপাতত জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন নিয়মিত এ অধিনায়ক।

নিষিদ্ধ হওয়ায় জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো
নিষিদ্ধ হওয়ায় জাতীয় দলের বাইরে রয়েছেন সাকিব। ছবি: প্রথম আলো

তাইজুলের ঝুলিতে রয়েছে আর্ম বল। তবে ব্যবহারের মাত্রা একেবারেই কম। একই কৌশল জানা আছে মিরাজেরও, কিন্তু এ অফ স্পিনার বেশির ভাগ সময়ই ফ্লাইট ও সাধারণ স্পিনে ভালো জায়গায় বল ফেলতে বিশ্বাসী। ইডেনের উইকেটে একটু বেশি ঘাস থাকায় এ ধরনের ডেলিভারি থেকে তেমন একটা বাঁক পাবেন না মিরাজ। একটু জোরের ওপর কুইকার, খানিকটা স্কিড করানো কিংবা আর্ম বল বেশি কার্যকর হবে।আর তাই বাংলাদেশের স্পিনাররা বল করার সময় সাকিবকে মনে পড়তে পারে ক্রিকেটমোদীদের।

স্পিনাররা কেমন সুবিধা পেতে পারেন তা নিয়েই কথা বলেছেন প্রেমদীপ, ‘একটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারি এসজি ও কুকাবুরা বলের সিমে অনেক পার্থক্য আছে। এসজির সিম অনেক বেশি স্পষ্ট। আর তাই এসজি বল গ্রিপ করতে সুবিধা হবে স্পিনারদের।’ প্রেমদীপ এরপর ব্যাখ্যা করেন, ‘ঘাস বেশি হলে ভুলে গেলে চলবে না স্পিনারদের ঝুলিতে আর্ম বল, ফ্লিপার ও কুইকার রয়েছে। আর ঘাস যেহেতু বেশিই থাকবে তাই বল এমনিতেই স্কিড করবে। পিচ থেকে স্কিড করা বল খেলতে অসুবিধা হবে ব্যাটসম্যানদের। তবে স্পিনাররা তেমন একটা বাঁক পাবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’

ভারতীয় দলে আছেন রবি চন্দ্রন অশ্বিনের মতো বৈচিত্র্যময় স্পিনার। সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজার আর্ম বলও ভোগাবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানের। আরও আছেন কুলদীপ যাদবের মতো বাঁ হাতি চায়নাম্যান স্পিনার। যাদবকে মাঝেমধ্যে ‘ফ্লিপার’-এর মতো একটু জোরের ওপর নিচু বাউন্সের ডেলিভারি ছাড়তে দেখা যায়। সব মিলিয়ে ভারতীয় স্পিনাররা বাংলাদেশের জন্য সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সাকিব থাকলে অন্তত স্পিন বোলিংয়ে আলাদা বৈচিত্র্য যোগ হতো বাংলাদেশের জন্য।