গোলাপি টেস্টের আগে তাঁদের গোলাপি বল-দর্শন

বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহ। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে মুমিনুল হক ও মাহমুদউল্লাহ। ছবি: এএফপি

অভিজিৎ ভট্টাচার্যের কাছে গোলাপি বল আর লাল বলে তেমন পার্থক্য নেই। গোলাপি বলের সম্ভাব্য অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে যত কথা হচ্ছে, সেসবের সঙ্গে ভালোই দ্বিমত তাঁর। অভিজিৎ বরং বলছেন, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির সাদা বলের চেয়েও গোলাপি বলে সুইং-মুভমেন্ট কম।

যাঁর কাছ থেকে গোলাপি বল সম্পর্কে এতগুলো কথা নেওয়া হলো, সেই অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে নিশ্চয়ই চিনতে পারছেন না। তিনি ভারতের একজন আম্পায়ার। ভারতে গোলাপি বল নিয়ে যতবার আলোচনা হবে, ততবারই বলতে হবে তাঁর নাম। ২০১৬ সালে প্রেমদীপ চ্যাটার্জির সঙ্গে সিএবি সুপার লিগ ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনা করেছিলেন অভিজিৎ। এই ইডেন গার্ডেনেই ভবানীপুর ও মোহনবাগানের মধ্যে হওয়া সেই ফাইনাল ছিল ভারতের মাটিতে গোলাপি বলে প্রথম চার দিনের ম্যাচ।

গোলাপি বলের ব্যাপারে কিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও। ইন্দোরে দুই দিন ও কলকাতায় এসে দুই দিন—আজ থেকে শুরু গোলাপি টেস্টের আগে মোট চার দিন অনুশীলনের সুযোগ পেলেন তাঁরা এই বলে। তা কেমন হলো গোলাপি বলে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি? বলটাকেই-বা কেমন দেখলেন ব্যাটসম্যান-বোলাররা? দলের কয়েকজন ক্রিকেটার সেটিই জানিয়েছেন প্রথম আলোকে।

মুমিনুল হক
অনুশীলনে আমার কাছে মনে হয়েছে, লাল বলের চেয়ে গোলাপি বল আরও ভালো দেখা যায়। মুভমেন্টে পার্থক্য মনে হয়নি, ব্যাট করাটা সহজ। সব বলেই শুরুর দিকে একটু মুভমেন্ট থাকে, পরে কমে যায়। গোলাপি বলেও তা-ই। তবে অনুশীলনে সবকিছু বোঝা সম্ভব নয়। ম্যাচের ২০-৩০ ওভার যাওয়ার পর এই বল কেমন আচরণ করবে, সেটা আমরা এখনো জানি না। তবে দিবারাত্রির খেলা যেহেতু, ফ্লাডলাইট একটা ভূমিকা রাখবে। আর শিশির পড়লে বল ধরতে সমস্যা হবে।

মাহমুদউল্লাহ
গোলাপি বল আর লাল বলে খেলায় কিছু তো পার্থক্য আছেই। সবচেয়ে বড় পার্থক্য, এই বলে আমরা আগে কখনো খেলিনি। তবে অনুশীলনে ব্যাটিংয়ে খুব বেশি সমস্যা বোধ করিনি। ক্যাচ প্র্যাকটিসেও মনে হয়নি আলাদা কিছু। সুইং একটু বেশি হয়, বিশেষ করে বিকেলে বা সন্ধ্যায়। রাতের বেলা কেমন হবে, সেটাও একটা ব্যাপার। এই বলে অভ্যস্ত হতে আমি নেটে কিছু বাড়তি সময় দিয়েছি। আমার মনে হয় এখানে মানসিক প্রস্তুতিটাই আসল।

>

অনুশীলনে কেমন দেখলেন গোলাপি বল, প্রথম আলোকে সে অভিজ্ঞতার কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা

ইমরুল কায়েস
সত্যি বলতে কি, এই কয়টা সেশন অনুশীলন করে যা বুঝলাম, গোলাপি বলে সুইং-মুভমেন্টটা একটু বেশি হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার আগের সময়টায় বল বোঝা খুব কঠিন। ওই সময় বলের রং আর আলো মিলিয়ে ফিল্ডিংয়েও একটু সমস্যা হয়। তবে এত অল্প অনুশীলনে আর কতটুকুই বোঝা যায়! ম্যাচে নামলেই আসলে বোঝা যাবে কোনটা সমস্যা আর কোনটা সমস্যা নয়। তবে লাল বল, সাদা বলে এত খেলেও আমরা ভুল করে বসি। আর গোলাপি বলে তো খেলব এই প্রথম!

সাদমান ইসলাম
আমার কাছে কোনো পার্থক্যই মনে হয়নি। শুধু এই বলটার রং গোলাপি, এতটুকুই পার্থক্য। সুইং, মুভমেন্টও আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়নি। খেলতে গেলে হয়তো আসল অবস্থাটা বোঝা যাবে। ভারতীয় পেসাররা বলটাকে কীভাবে ব্যবহার করে, সেটা একটা বিষয়। তবে আমি মনে করি, এটা নিয়ে বেশি ভাবলেই চাপ। নয়তো কিছু না।

মোহাম্মদ মিঠুন
আমার কাছে বলকে বলের মতোই মনে হচ্ছে, শুধু রংটা ভিন্ন (হাসি)। সুইং, মুভমেন্ট বাড়তি কিছু মনে হয়নি যে খেলতে অসুবিধা হবে। তবে হ্যাঁ, গোলাপি বল একটু শক্ত। তাই বাউন্স বেশি হয়। এটুকুই ভিন্নতা দেখেছি। বাকি সব ঠিক আছে।

আল আমিন হোসেন
লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলের সিম শক্ত এবং বলটাকে উজ্জ্বল করা যায় খুব সহজে। ভালো সুইং আছে। বলটা একটু ভিন্নভাবে তৈরি। পেসারদের জন্য এটা ভালো। ব্যাটসম্যানদের জন্য এই বলে খেলাটা চ্যালেঞ্জ হবে। আমার ধারণা, নতুন বলের চেয়ে পুরোনো বলে চ্যালেঞ্জটা বেশি। অনুশীলনেই দেখেছি, সন্ধ্যায় যখন ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন বলের মুভমেন্ট অনেক বেড়ে যাচ্ছে। যত ভালো জায়গায় বল ফেলা যাবে, ব্যাটসম্যানদের তত বেশি সমস্যা হবে।

আবু জায়েদ
এই কয় দিনের অনুশীলনে আমরা মোটামুটি অভ্যস্ত হয়েছি গোলাপি বলে। তবে এটুকুই যথেষ্ট নয়। এই বল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা হলো, এতে সুইং-মুভমেন্ট একটু বেশি। ঔজ্জ্বল্যও বেশি। বলের গ্রিপ একটু অন্য রকম। আমার মনে হয় পেসারদের খুব একটা সমস্যা হবে না, বরং ভালোই হবে। বাকিটা ম্যাচে বোঝা যাবে।

ইবাদত হোসেন
এসজি গোলাপি বলের গ্রিপটা একটু অন্য রকম। অন্য বলের চেয়ে বল গ্রিপ করতে হয় একটু অন্যভাবে। শুরুতে আমার সমস্যা হচ্ছিল। পরে কোচ দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে ধরতে হবে। এখন আর সমস্যা নেই। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণও মোটামুটি এনেছি, ম্যাচে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে পেসারদের জন্য। তবে শিশির বেশি পড়লে কী হবে জানি না।

তাইজুল ইসলাম
স্পিনারদের জন্য গোলাপি বল কেমন হবে, সেটা আসলে ম্যাচ না খেললে বোঝা যাবে না। অনুশীলনে তো বল অতটা পুরোনো হয় না। তবে দেখেছি পেসাররা ভালোই সুবিধা পাচ্ছে। মুভমেন্ট, সুইং বেশি। আমরা এই বলের কিছু ম্যাচ দেখেছি। সেসব ম্যাচেও পেস বোলারদের বলে সুইং-মুভমেন্ট বেশি হয়েছে।

মেহেদী হাসান মিরাজ
শুরুর দিকে যে সুইং একটু বেশি হবে, এটা বোঝাই যাচ্ছে। বল কাটও করতে পারে। তবে একটা সুবিধা হলো, এই বল ব্যাটে লাগলেও দ্রুত যায়। স্পিনারদের বল গোলাপি বলে বেশি স্কিড করতে পারে। আমার ধারণা, বাউন্স, টার্নও থাকবে। গোলাপি বলে যতটুকু অনুশীলন করেছি, এটাই দেখেছি। বলে বাউন্স হচ্ছে। ম্যাচেও এ রকম থাকলে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা হতে পারে।

তো এই হলো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের গোলাপি বল-দর্শন। একেকজনের অভিধানে সেই গোলাপিই ধরা দিচ্ছে একেক রূপে। তবে গোলাপি ইডেনে গোলাপি বলের সামনে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা কী বর্ণ ধারণ করেন, সেটি জানতে অপেক্ষা করুন আরেকটু।