প্রথম দিনের প্রাপ্তি মাঞ্জরেকারের ধন্যবাদ

আরেকটি হতাশামাখা দিন শেষ হলো বাংলাদেশ দলের। ছবি: এএফপি
আরেকটি হতাশামাখা দিন শেষ হলো বাংলাদেশ দলের। ছবি: এএফপি
>
  • বাংলাদেশ: ১০৬
  • ভারত: ১৭৪/৩
  • প্রথমবারের মতো এক টেস্টে দুজন খেলোয়াড়ের বদলি নামানো হলো

এবাদত হোসেনের হাতে বল তখন। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৩৫ মিনিট পরেও খেলা চলছে। দিনের (বলা ভালো রাতের) শেষ ওভার করছিলেন বাংলাদেশি পেসার। এমন সময় দিবারাত্রির টেস্টের প্রথম দিন নিয়ে সন্তুষ্টির একপর্যায়ে ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার প্রসঙ্গক্রমে টানলেন বাংলাদেশকেও। কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া দিবারাত্রির টেস্ট ও গোলাপি বলের খেলা রাজি হওয়াতে বাংলাদেশ দল ও ক্রিকেট বোর্ডকে ধন্যবাদ জানালেন মাঞ্জরেকার। প্রথম দিনেই স্বাগতিক ভারতের চেয়ে ৬৮ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের আজকের প্রাপ্তি সম্ভবত অতটুকুই।

শুনতে নেতিবাচক ঠেকতে পারে। মাত্রই একটি টেস্ট শুরু হয়েছে। অনিশ্চয়তার খেলাতে বাকি চার দিনে অনেক কিছুই হতে পারে। এখনই হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। সবই ঠিক আছে। কিন্তু ভারত সফরে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পারফরম্যান্সের চিত্র বলছে, ইডেনে প্রকৃতির হস্তক্ষেপ না হলে, এ টেস্ট তিন দিনের বেশি গড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। প্রথম দিনেই নিচু হয়ে পড়া এগারোটি কাঁধ হার মেনে নেওয়ার চিত্রটাই ফুটিয়ে তুলল মাঠে।

টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ১০৬ রানে অলআউট হওয়ার হতাশা কম নয়। রোহিত শর্মাকে মাত্র ১২ রানে আউট করার সুযোগ পেয়েও ক্যাচ ফেলে দেওয়ার দুঃখটাও পোড়ানোর মতো। কিন্তু প্রথম দিনেই যেভাবে কাঁধ ঝুলে গেল বাংলাদেশের ফিল্ডারদের সেটা মেনে নেওয়াটা কঠিন। ঠিক যেমন মেনে নেওয়া কঠিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউট হওয়ার দৃশ্যও, অন্তত কৃত্রিম আলোতে ভারতের ব্যাটিং দেখার পর।

বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের একপর্যায়ে টিভি ক্যামেরা মাঝে কিছুক্ষণ মাহমুদউল্লাহকে খুঁজে নিয়েছে। সহজ বল হাতছাড়া করে কিংবা অন্যের ফিল্ডিং মিস করার পর মাহমুদউল্লাহর হতাশা আর হাল ছেড়ে দেওয়া শরীরী ভাষাটা বড্ড চোখে লাগছিল। শুধু মাহমুদউল্লাহ কেন। দলের সবার মধ্যেই যেন হতাশা ভর করেছিল। অথচ ক্রিকেটারদেরই সবার আগে জানার কথা, এটা টেস্টের মাত্র প্রথম দিন। মাত্রর তিনটি সেশন খারাপ গেলেও হাতে এখনো সময় আছে। কিন্তু বাংলাদেশ দল যেন হারার আগেই হেরে যাচ্ছে ভারতের কাছে।

অথচ আশা করার মতো অনেক কিছুই ছিল। আগের ম্যাচে ২৪৩ রান করা মায়াঙ্ক আগারওয়াল (১৪) ভুল এক শটে উইকেট উপহার দিয়েছেন। ১২ রানে জীবন পেয়েও রোহিত শর্মার মতো ব্যাটসম্যান ২১ রানে ফিরে গেছেন। সেট হয়েও ফিফটির পরই ফিরে গেছেন চেতেশ্বর পূজারার (৫৫) মতো ব্যাটসম্যান। অধিকাংশ সময়ই লাইন লেংথের বালাই না থাকলেও মাঝে মাঝে দু-একটা বলে ভালোই কাজ দেখাচ্ছিলেন এবাদত-আল আমিন ও আবু জায়েদ। কিন্তু দিনের শুরুটাই যে ম্যাচের সমাপ্তি টেনে দিয়েছে দেড় সেশনের মাঝে।

গোলাপি বল নিয়ে এত আলোচনার কারণ, এ বলে বাড়তি সুইং পাওয়া যায়। আর কৃত্রিম আলোতে বাতাসে বাড়তি মুভমেন্ট হয়। এ সবই কিন্তু দিনের আলো ফুরালে। কিন্তু বাংলাদেশ দল যে এর আগেই শেষ। শুরুতেই বলের লাইন না বুঝে এলবিডব্লু হয়েছেন ইমরুল কায়েস। শুধু আউটই হননি, রিভিউ নিয়ে সেটা নষ্টও করেছেন এই ওপেনার। কিন্তু নষ্ট হওয়া রিভিউ নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ হয়নি। এর আগেই যে দলের টপ ও মিডল অর্ডার শেষ। অযথা বল খেলতে গিয়ে কেউ স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন, কেউবা স্টাম্পে টেনে এনেছেন। ৩৮ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হয়ে শুধু লিটনই (২৪*) একটু সাহসী ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু সাপার বিরতির (লাঞ্চের দিবারাত্রি সংস্করণ) একটু মাথায় দুবার আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাঁকেও।

এখন কনকাশন (মাথায় আঘাত পাওয়া) বদলি নামানোর সুযোগ পায় দলগুলো। স্কোয়াডে আর কোনো ব্যাটসম্যান না থাকায় মেহেদী হাসান মিরাজকেই নামিয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ ও নাঈম হাসান মিলেই দলকে পার করেছেন। দলের সর্বোচ্চ স্কোরার দলকে ৩৮ রানে ফেরা সাদমান (২৯)।

ফিল্ডিং নামার আগেই ইতিহাস করে ফেলেছে বাংলাদেশ। ১৯ রানের ইনিংস খেলার পথেই মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন নাঈম। ফলে ফিল্ডিংয়ে তাঁর কনকাশন বদলি হিসেবে নেমেছেন তাইজুল ইসলাম। ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টেস্টে ১৩জন খেলানোর রেকর্ডকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি বানানোর পণ করেছেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা।

গোলাপি বল নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় কারণ ছিল রাতে বল দেখতে পারা নিয়ে অনিশ্চয়তা। কিন্তু স্থানীয় সময় সাড়ে আটটার পর দিনের শেষ বলের আগের বলেই যে ড্রাইভ করেছেন রাহানে তাতে পরিষ্কার হয়ে গেছে, ভারতের ব্যাটসম্যানদের এ বল দেখতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বাংলাদেশের বোলারদের গতি বা বাউন্সের অভাবও নিশ্চিত করেছে গোলাপি বলের বাড়তি সুবিধা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে। ইনিংসের পুরোটা সময় কৃত্রিম আলোতে ব্যাট করেছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে কখনো অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায়নি। শুধু এবাদতের প্রথম ওভারেই বাড়তি গতি বাউন্সে রোহিত আউট হয়েছেন আর স্লিপ দিয়ে দুবার বল গিয়েছিল।

আল আমিনের প্রথম ধাক্কার পর বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন এবাদত। এর মাঝে আবু জায়েদের বলে রোহিতের ক্যাচ ফেলেছিলেন আল আমিন। কিন্তু এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। এ ছাড়া টানা তিনটি বল ভালো জায়গায় করতে দেখা যায়নি বাংলাদেশের বোলারদের। চকচকে বলটা যত পুরোনো হয়েছে, ভারতের রান তোলা অত সহজ হয়েছে। বিরাট কোহলি (৫৯ *) যেভাবে অনায়াসে একের পর এক ড্রাইভ করেছেন, তাতে বাংলাদেশের বোলারদের লেংথ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এরই ফাঁকে ভারত বাংলাদেশের মামুলি সংগ্রহকে টপকে গেছে ভারত। আর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কাঁধও ধীরে ধীরে নিচু হয়েছে।

আগামীকাল উজ্জ্বল এক দুপুরের অপেক্ষায় এখন বাংলাদেশ। না হলে প্রতিদিন মাঞ্জরেকারের ধন্যবাদেই সন্তুষ্ট হতে হবে বাংলাদেশকে।