ম্যাচ তিন দিনে নিতে পারবে বাংলাদেশ?

কোহলির দুর্দান্ত ব্যাটিং বাংলাদেশকে কোন সুযোগ দিচ্ছে না। ছবি: এএফপি
কোহলির দুর্দান্ত ব্যাটিং বাংলাদেশকে কোন সুযোগ দিচ্ছে না। ছবি: এএফপি

ইডেন গার্ডেনসে আজ দিবারাত্রির টেস্টে দ্বিতীয় দিনে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে ভারত। এতে প্রথম ইনিংসেই ২৪১ রানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০.৩ ওভার খেলে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট হয়েছিল সফরকারি দল। আজ বাকি সময়ে ন্যূনতম ৪৪ ওভার ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রথম ইনিংসে বাজে ব্যাটিং এবং সন্ধ্যায় গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ সামলানো বিচারে প্রশ্নটা তাই ওঠেই, মুমিনুলরা ম্যাচটা তিন দিনে টেনে নিতে পারবেন তো?

বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম দিনের তুলনায় আজ ভালো বোলিং করেছেন। বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি পেলেও ভারতের শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতে দেয়নি বাংলাদেশ। কাল ৩ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান তোলা ভারত আজ ৬ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৭৩ রান। পেসাররাই তুলনামূলক বেশি ভালো করেছেন। ৩টি করে উইকেট আল–আমিন ও এবাদত হোসেনের। ২ উইকেট আবু জায়েদের, ১ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল।

এর আগে দিনের শুরুতেই ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণী, ‘সেঞ্চুরি করবেন বিরাট কোহলি।’ দিনের প্রথম সেশনে রান তোলার কাজটা কঠিন। এ সময় আগের রাতের জড়তা কাটিয়ে একজন ব্যাটসম্যান অনায়াসে আরও ৪১ রান তুলে ফেলবেন, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। কিন্তু কোহলিকে নিয়ে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করতে একটুও দ্বিধা হলো না কারও। কারণ? একটি নয় দুটি।

প্রথম কারণটি ব্যাটসম্যানটি হলো বিরাট কোহলি, দ্বিতীয় কারণ বাংলাদেশের বোলিং। মৃদু কণ্ঠে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের কথাও বলা যেত। সেটা আর কেউ উচ্চারণ করেনি। ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হয়নি। প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরি হয়ে গেছে কোহলির। কোহলির ব্যাটে লিডটাও ধীরে ধীরে পাহাড়ে রূপ নিয়েছে। কোহলি ১৩৬ রানে থাকতে তাঁকে দুর্দান্ত ক্যাচে ড্রেসিং রুমে ফেরান তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পর প্রথম ওভারেই তাঁকে তুলে নিতে পেরেছেন এবাদত হোসেন।

দিনের শুরুতে তাইজুলকে ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। যে সিদ্ধান্তই দলের থিংক ট্যাংকের বিবেচনাবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। গোলাপি বলে ভারত দলের হয়ে রবীন্দ্র জাদেজা এক ওভার করেছেন শুধু। গতকালও বাংলাদেশের হয়ে যা একটু সাফল্য পেসাররাই পেয়েছেন। কিন্তু আজ দিনের শুরুতে আল আমিন হোসেনের অন্য প্রান্তে কিনা তাইজুল! দুই উইকেট নেওয়া এবাদত হোসেন নন, এ বলে যা একটু সুইং তোলা আবু জায়েদও নন।

তাইজুলের ওপর দলের এমন আস্থা বিস্ময় জাগায়। না, এ টেস্টে পেসাররা ভালো করছেন শুধু এ কারণেই নয়। এ টেস্টে যে তাইজুল মূল একাদশেই ছিলেন না! নাঈম হাসানের চোট দ্বিতীয় বদলি হিসেবে তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে। ম্যাচের আগে অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়া এক বোলারকে এখন মূল বোলার ভেবে সব আশা তাঁর কাঁধে সমর্পন করে দিয়েছে বাংলাদেশ দল।

আশা সমর্পনেই অবশ্য কাজ শেষ। বোলিং বা ফিল্ডিং সাজানোয় কোনো প্রেরণা দেখা যায়নি। কাল সন্ধ্যায় যে হাল ছেড়ে দেওয়া দেহভঙ্গি চোখে জ্বলুনি ধরিয়েছিল সেটা আজ দুপুরেও দেখা গেল। হার মেনে নেওয়া সব কাঁধ, ফিল্ডিংয়েও নেই কোনো প্রাণের চিহ্ন। গোলাপি বলের টানে পঞ্চাশ হাজার দর্শকের মাঠে আসার আগ্রহে পানি ঢেলে দেওয়া পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে বাংলাদেশ।

এমন পারফরম্যান্সের ফাঁকে কোহলি যে আরও দ্রুত রান তোলেননি এটাই বেশি। রাহানেকে নিয়ে প্রায় অনায়াসভঙ্গিতে রান তুলেছেন প্রথম ঘণ্টায়। ৯৯ রানের জুটিটা ভেঙেছে রাহানের খামখেয়ালিপনায়। তাইজুলের একটি বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে থাকা এবাদতের কাছে ক্যাচ দিয়েছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ক্যাচটি ধরে বেশ আগ্রাসী উদ্‌যাপন দেখিয়েছেন এবাদত। দুই ঘন্টার সেশনে ওই এক মুহূর্তই যা একটু উজ্জীবিত দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। এরপর আবারও সেই পুরোনো ছবি। এর মাঝেই পঞ্চম উইকেট জুটিতে জাদেজাকে নিয়ে ৫৩ রান তোলা হয়ে গেছে কোহলির।