মুশফিক কোথায় নামলে ভালো চার না পাঁচ

মুশফিকুর রহিম। কাল তাঁর দৃঢ়তায় খেলা তৃতীয় দিনে টানতে পেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
মুশফিকুর রহিম। কাল তাঁর দৃঢ়তায় খেলা তৃতীয় দিনে টানতে পেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি

কলকাতা টেস্ট দুই দিনেই শেষ হবে এমন ভেবেছিলেন অনেকে। মুশফিকুর রহিমের দৃঢ়তায় তা হয়নি। স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে ম্যাচটা তৃতীয় দিনে টেনে নেন এ ব্যাটসম্যান। মুশফিকের এমন লড়াই নতুন কিছু না। বড় দলগুলোর বিপক্ষে অনেকবারই সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন টেকনিক্যালি দেশের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত মুশফিক। যদিও একটা প্রশ্ন বেশ কিছুদিন ধরেই উঠছে, মুশফিক কি ব্যাটিং অর্ডারে আরেকটু ওপরে নামতে পারেন না?

বেশির ভাগ দলেই সেরা ব্যাটসম্যানেরা তিনে কিংবা চারে নেমে থাকেন। যেখান থেকে দলের ব্যাটিংয়ে হালটা ধরা যায়, গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং প্রতিপক্ষ দলের সেরা বোলারদেরও সামলাতে হয়। তাতে দলই লাভবান হয় সবচেয়ে বেশি। ইন্দোর কিংবা কলকাতা টেস্টের কথাই ধরুন। এ দুটি টেস্টে বাংলাদেশের চার ইনিংসে প্রতিবারই পাঁচে ব্যাট করেছেন মুশফিক। অর্থাৎ দলীয় ব্যাটিংয়ের গতিপথ ঠিক হয়ে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নামতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কিংবা এভাবেও বলা যায়, শুরুতে নতুন বলে প্রতিপক্ষ বোলারদের ঝড়-ঝাপটা শেষ হওয়ার পর ব্যাট করতে নামছেন মুশফিক।

খ্যাতনামা ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলের চোখে পড়েছে বিষয়টি। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকের সঙ্গে মুশফিকের বেশ মিল খুঁজে পাচ্ছেন ভোগলে। দলের সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার পর মিসবাহ টেস্টে কখনো তিনে কিংবা চারে ব্যাট করেননি। সিনিয়র ব্যাটসম্যান হিসেবে একটু ওপরে নেমে শুরুর পতন ঠেকানোর কাজটা তাঁকে খুব কমই করতে দেখা গেছে। আর তাই মুশফিকের ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভোগলে। তাঁর টুইট, ‘মিসবাহর মতো সম্ভবত মুশফিকুর রহিমও মনে করছে পাঁচ নম্বরেই সে সেরাটা নিংড়ে দিতে পারে। কিন্তু এটা কি দলের জন্য সবচেয়ে ভালো?’

ইন্দোর টেস্টে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ব্যাট করতে নামেন মুশফিক। যদিও শুরুর বিপর্যয়ের জন্য বাংলাদেশের ইনিংস কত দূর যেতে পারে তা মোটামুটি মুশফিক নামার আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়া তারই প্রমাণ। দ্বিতীয় ইনিংসেও দল ৩৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে নেমেছেন মুশফিক। ওই ইনিংসে বাংলাদেশ তুলেছে ২১৩ রান। এ টেস্টে দলের দুই ইনিংসেই মুশফিক সর্বোচ্চ স্কোরার।

এবার আসা যাক ইডেন টেস্টে। প্রথম ইনিংসে মুশফিক কোনো রান করতে পারেননি। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমেছেন দল ১৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমেছেন দল যখন ৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এখান থেকে মুশফিকের অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংসের কল্যাণে ম্যাচ তৃতীয় দিনে টেনে নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। এবার একটু কল্পনার সাহায্য নেওয়া যাক।

>

টেকনিক্যালি দলের সেরা ব্যাটসম্যান হয়েও মুশফিকুর রহিম কেন তিন বা চার নম্বরে ব্যাটিং করতে নামছেন না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে।

ধরে নেওয়া যাক, এ দুই টেস্টেই মুশফিক তিনে কিংবা চারে ব্যাটিংয়ে নামলেন। তাহলে শুরুর বিপর্যয় কি এড়ানো যেত না? অন্তত তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের ওপর ভরসা রেখে বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমী কিন্তু ইতিবাচক জবাবই দেবেন। এ ছাড়াও উইকেটে আরও বেশি সময় থাকার সুযোগ পাচ্ছেন মুশফিক। প্রতিপক্ষের সেরা বোলারদের সামলাতে সেরা ব্যাটসম্যানদেরই কিন্তু লাগে। ঠিক এ কারণে ব্যাটিংয়ে তিন ও চার নম্বর পজিশনকে বলা হয় ‘মেরুদণ্ড’। এ দুটি পজিশনের ব্যাটসম্যানেরাই মূলত দলীয় ইনিংসের সুর-তাল-লয় বেঁধে দেন। অথচ টেকনিক্যালি বাংলাদেশের স্বীকৃত সেরা ব্যাটসম্যানটি নামছেন এই সুর-তাল-লয় ঠিক হয়ে যাওয়ার পর। কালকের ইনিংসটির কথাই ধরুন, মুশফিক এক কিংবা দুই ধাপ ওপরে নেমে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করলে স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের চেহারা কি আরেকটু ভালো থাকত না?

হর্ষ ভোগলের টুইট। ছবি: টুইটার
হর্ষ ভোগলের টুইট। ছবি: টুইটার

ভোগলে তাই ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না। ক্রিকবাজের হয়ে বিশ্লেষণে বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে মুশফিকের সামর্থ্যের পার্থক্যটা ধরিয়ে দেন এ বিশ্লেষক। এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, দল যখন শুরুতে ভুগছে মুশফিক তখন পাকিস্তানের মিসবাহ, অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক ও শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের মতো পাঁচে ব্যাট করতে নামছেন। যখন ম্যাচ প্রায় শেষ হয়ে গেছে কিংবা ভাগ্য প্রায় ঠিক হওয়ার পথে। ভোগলের ভাষায়, ‘তাঁরা বেশির ভাগ সময় পাঁচ নম্বরেই এসেছেন যখন ম্যাচ (প্রায়) শেষ। এখান থেকে ম্যাচ জেতানোর মতো কিছু করার থাকে না। সর্বোচ্চ খেলাটা শেষ হতে দেরি করানো যায়।’

আলোচনায় ভোগলের সঙ্গী ভারতের সাবেক স্পিনার মুরালি কার্তিকও বলেছেন, ‘এটা অদ্ভুত। উইকেটরক্ষক হলে না হয় বুঝতাম, অনেকক্ষণ কিপিং করেছে, তাই দেরিতে নামছে। কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললে এবং সেটা যদি হয় সেরা ব্যাটসম্যান তাহলে আগে নামা উচিত।’

ইন্দোর ও ইডেন টেস্টে ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলছেন মুশফিক। ব্যাটিং অর্ডারে তিনি যে কখনো তিনে কিংবা চারে নামেননি তা নয়। সবশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে চারে নেমেছিলেন মুশফিক। তার আগে টানা ১০ ইনিংস নেমেছেন পাঁচে কিংবা ছয়ে। ২০০৫ সালে টেস্টে অভিষিক্ত মুশফিক এ সংস্করণে প্রথম চারে ব্যাটিং করেন এত দশক পর ২০১৫ সালে ফতুল্লা টেস্টে এই ভারতেরই বিপক্ষে। এ পর্যন্ত ৬৯ টেস্টে ১২৯ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১৪বার চারে নেমেছেন মুশফিক। টেস্টে তাঁকে কখনো তিনে ব্যাট করতে দেখা যায়নি।