আর কত ব্যাখ্যা দেবেন মুমিনুল!

>কলকাতার দিবারাত্রি টেস্টেও সোয়া দুই দিনে ইনিংস হার। ইনিংসে হারতে হয়েছে ইন্দোরেও। হঠাৎ অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুল হক রীতিমতো ক্লান্ত বাজে পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা দিতে দিতে।
ভারত সফরের টেস্ট সিরিজে ব্যাটসম্যানদের নিয়মিত চিত্র। ছবি: এএফপি
ভারত সফরের টেস্ট সিরিজে ব্যাটসম্যানদের নিয়মিত চিত্র। ছবি: এএফপি

যেভাবে বাংলাদেশ টেস্ট দলের ভার তাঁর কাঁধে উঠেছে, নিজেও ভাবতে পারেননি মুমিনুল হক! সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ায় আকস্মিকভাবে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন। পেয়েছেনও এমন এক সিরিজে, যেটি শুধু কঠিন বললেও যেন কম হবে।

আন্তর্জাতিক আঙিনায় আসার পর যাঁকে ব্যাটিংয়ের বাইরে আর কিছু ভাবতে হয়নি, তাঁকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অগ্নি পথে। যে পথে পা বাড়িয়ে মুমিনুল শুধুই পরাজয়ের বেদনায় পুড়েছেন। এই টেস্ট সিরিজে তাঁকেই বারবার সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে হলো, যিনি কখনোই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন। অধিনায়ক হিসেবে সমালোচনার তির তাঁকেই বেশি বিদ্ধ হতে হলো।

দল বারবার ব্যর্থ হচ্ছে, অসহায় আত্মসমর্পণ করে তিন দিনেই টেস্ট হেরে যাচ্ছে—মুমিনুল আর কত ব্যাখ্যা দেবেন! তবুও আজ বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন ২০ মিনিটের বেশি হলো। ইডেনের সংবাদ সম্মেলনে হতাশার সিরিজটা মুমিনুল আরেকবার ফিরে দেখলেন—


নিজের পারফরম্যান্স
‘আমার ব্যাটিং গড় নিয়ে বেশি ভাবছি না। দলের ফল নিয়ে হতাশ। সেটা স্বাভাবিকও। যখন এমন ফল হয় তখন খারাপ লাগা স্বাভাবিকই। হয়তো আমি এখন ভুগছি। দুঃসময় থেকেই মানুষ ভালো কিছু পায়। হয়তো আমিও পাব।’

কেন বাংলাদেশ টেস্টে এমন এলোমেলো, ছন্নছাড়া
‘টেস্ট আমরা খুব নিয়মিত খেলি না। সামনের বছর আমাদের অনেক টেস্ট ম্যাচ আছে। প্রায় ১০টা টেস্ট আছে। আমরা যখন টানা টেস্ট খেলব তখন এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারব।’

কোনটা কঠিন—গোলাপি না লাল বল
‘লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলে চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। বিশেষ করে নতুন বলে চ্যালেঞ্জটা বেশি থাকে। যখন শিশির পড়া শুরু হয়েছিল তখন কিন্তু খেলা সহজ হয়ে গিয়েছিল। আমরা যদি নতুন বলটা ঠিকঠাক সামলাতে পারতাম তাহলে আরও ভালো করতাম। গোলাপি নতুন বলে চ্যালেঞ্জ একটু বেশি, আমরা সেটা নিতে পারিনি। যে কারণে আমরা অনেক বেশি পিছিয়ে গেছি।’

ব্যাটসম্যানদের ঘাটতি
‘এই সিরিজ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এই মানের বোলারদের সামলাতে কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন, কীভাবে খেলবেন। দল হিসেবে আমার মনে হয়, সবাই শিক্ষাটা নেবে। এ শিক্ষা পরের সিরিজে অনেক বেশি কাজে দেবে।’

এরপরও বোলিংয়ে স্পিন-নির্ভরতা থাকবে?
‘অবশ্যই আমাদের স্পিন নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। আমার মনে হয়, এই সিরিজে পেসাররা খুব ভালো বোলিং করেছে। দেশে ও বাইরে নিয়মিত যখন তাদের খেলানো হবে তখন বোঝা যাবে তারা কতটা উন্নতি করেছে। দেশে-দেশের বাইরে যদি পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয় আমার মনে হয় ওরা ধীরে ধীরে উন্নতি করবে।’

ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেট
‘গত দুই বছর ধরে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটে বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। স্পোর্টিং উইকেট হচ্ছে। প্রত্যেকটি দল তিন-চারটা করে পেসার খেলাচ্ছে। ধীরে ধীরে আমাদের পেস বোলার বের হয়ে আসছে।’

টস জিতে কেন ব্যাটিং
‘টস জিতে আমি যদি ফিল্ডিং করতাম ওরা ঠিকই…(বড় স্কোর গড়ত)। পরে আমাদের একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতো। লাল বলের চেয়ে নতুন গোলাপি বলে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। যখন শিশির পড়ে, বল ভেজে তখন এর কাজটা অনেক কমে আসে।’

গোলাপি বলে ঘরোয়া ক্রিকেট
‘বোর্ড এই ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। এটা পুরোপুরি বোর্ডের ব্যাপার। বোর্ডকে গোলাপি বলে ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাব দেব আমরা।’

টেস্টে উন্নতি কেন হয়নি
‘এখন থেকে হয়তো উন্নতি হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে, সেখান থেকে পেস বোলার বের হয়ে আসছে। যদি পেস বোলিং ইউনিটের উন্নতি হয় তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতি হবে। পেস বোলাররাও যখন বের হচ্ছে ধীরে ধীরে আমার মনে হয় টেস্টে আমাদের উন্নতি হবে।’