টুখেলের অন্য রকম 'মণিহার' নেইমার

পিএসজির অনুশীলনে হাস্যোজ্জ্বল নেইমার। ছবি: এএফপি
পিএসজির অনুশীলনে হাস্যোজ্জ্বল নেইমার। ছবি: এএফপি

রবীন্দ্রসংগীত টমাস টুখেলের শোনার কথা নয়। যদি রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় থাকত, তাহলে হয়তো একটা গান এখন গুনগুন করে গাইতেন পিএসজির এ কোচ—‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে—/ এরে পরতে গেলে লাগে, এরে ছিঁড়তে গেলে বাজে।।’

টুখেল কেন এ গান গাইতেন আর তাঁর এই ‘মণিহার’ কে? পিএসজি আজ রাতে রিয়াল মাদ্রিদের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচটি খেলতে নামবে। এই ম্যাচ নিয়ে স্পেন ও ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন টুখেল কী রকম সমস্যায় আছেন নেইমারকে নিয়ে। পিএসজির ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সত্যিকার অর্থেই টুখেলের কাছে গানের ওই ‘মণিহারের’ মতো! আজ রিয়ালের বিপক্ষে তাঁকে একাদশে রাখাও মুশকিল, আবার না রাখাও মুশকিল!

স্পেনের সংবাদমাধ্যম ফলাও করে খবর ছাপছে, এ ম্যাচে কোনোভাবেই নেইমারের শুরুর একাদশে থাকা উচিত হবে না। টুখেলের উচিত শুরুর একাদশে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াকে খেলানো। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক উইঙ্গার ডি মারিয়া এ মৌসুমে যেমন ছন্দে আছেন, তাঁকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের সঙ্গে নেইমারকেও শুরুর একাদশে খেলাতে হলে বেঞ্চে রাখতে হবে এডিনসন কাভানিকে। কারণ, ছন্দে রয়েছেন এ মৌসুমেই ইন্টার মিলান থেকে পিএসজিতে নাম লেখানো আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দি।

>

আজ রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলতে নামছে পিএসজি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর এ ম্যাচে নেইমারকে একাদশে রাখা না–রাখা নিয়ে দোটানায় পড়ে গেছেন কোচ টমাস টুখেল

ডি মারিয়া, কিলিয়ান এমবাপ্পে, নেইমার ও ইকার্দি—এই চারজনকে একসঙ্গে খেলানোও আরেক সমস্যা। টুখেলকে সরে আসতে হবে অনেক দিন ধরে সাফল্য পেয়ে আসা ৪-৩-৩ ফর্মেশন থেকে। তাহলে নেইমারকে নিয়ে আজ কী করবেন পিএসজির জার্মান কোচ? এ তো ওই ‘মণিহার’ সমস্যার মতোই—পরতে গেলে লাগে আর ছিঁড়তে গেলে বাজে! আর নেইমারকে একাদশে রাখতে ফর্মেশনও বদলাতে হবে টুখেলকে, অন্যদিকে এমন বড় একটি ম্যাচে তাঁকে একাদশে না রেখে হারলে সইতে হবে সমালোচনা।

শুধু কি আজকের ম্যাচের একাদশ গড়ার ক্ষেত্রেই নেইমারকে নিয়ে সমস্যা টুখেলের? নেইমারকে সামলানোটাও যে কঠিন এক ব্যাপার। চোটের কারণে এ মৌসুমে পিএসজির হয়ে মাত্র ৬ ম্যাচে মাঠে নামতে পেরেছেন নেইমার। খুব একটা ছন্দেও নেই তিনি। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন ফরাসি লিগ ওয়ানে লিলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। গত শুক্রবার ২-০ গোলে জেতা ম্যাচে ৬৫তম মিনিটে বদলি হয়েছেন। এই বদলি হওয়াও মেনে নিতে পারেননি নেইমার। মাঠ থেকে নেমে টানেল ধরে সোজা চলে গেছেন ড্রেসিংরুমে।

গত সপ্তাহে আরও এক ‘অন্যায়’ করেছেন নেইমার। কোচের নিষেধ সত্ত্বেও তিনি ডেভিস কাপে রাফায়েল নাদালের ম্যাচ দেখতে চলে গেছেন স্পেনে। এ নিয়ে টুখেলকে মুখোমুখি হতে হয়েছে সাংবাদিকদের প্রশ্নের। কোচকে কীভাবে অমান্য করলেন নেইমার—এ প্রশ্নের দিতে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে নেইমারকে নিয়ে টুখেলের অসহায়ত্ব, ‘আমি কী করতে পারি! আমি তার বাবা নই, আমি পুলিশও নই। আমি তো শুধুই একজন কোচ। একজন কোচ হিসেবে আমি তার এভাবে স্পেনে যাওয়া নিয়ে খুশি? কখনোই না। এখন কি পাগলাটে আচরণ করার সময়? মোটেই না।’

টুখেলের এই অসহায় ভাব দেখে রবীন্দ্রনাথের ‘এ মণিহার’ গানের আরেকটি অন্তরাও হয়তো মনে পড়বে অনেকের—‘তাই তো বসে আছি,/ এ হার তোমায় পরাই যদি তবেই আমি বাঁচি।’ তা নেইমার নামের ‘মণিহার’ টুখেল কার গলায় পরিয়ে বাঁচবেন? বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের গলায়! বার্সায় তো নেইমার যেতেই চেয়েছিলেন, কিন্তু নেইমারকে কেনার মতো অর্থ বার্সা সর্বশেষ দলবদলের বাজারে দিতে পারেনি। ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো দিয়ে কেনা একজন খেলোয়াড়কে তো আর পানির দরে বিক্রি করতে পারে না পিএসজি! এ ছাড়া খেলোয়াড় বিকিকিনিতে আরও কত হিসাবও তো জড়িয়ে থাকে। নেইমারকে বেচার ক্ষেত্রে সেসব যে মেলাতে পারছে না পিএসজি!

তাহলে দাঁড়াল কী? নেইমার নামের ‘মণিহার’ পরতে গেলে যেমন লাগছে, ছিঁড়তে গেলেও তেমনই বেজে যাচ্ছে!