মেসি যেভাবে দিয়েছিলেন সেই মহা বিপদের সংকেত

অ্যানফিল্ডে সেই ম্যাচের পর বিধ্বস্ত মেসি। ছবি: সংগৃহীত
অ্যানফিল্ডে সেই ম্যাচের পর বিধ্বস্ত মেসি। ছবি: সংগৃহীত

অ্যানফিল্ডের সেই ম্যাচ। এতটুকু শুনেই বার্সেলোনা সমর্থকদের মন বেদনায় ছেয়ে গেছে কি না কে জানে! গত এপ্রিলের ওই ম্যাচের দুঃসহ স্মৃতির ঘা যে তাদের মনে এখনো দগদগে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ৩-০ গোলে জেতা বার্সেলোনা তখন নিজেদের ইতিহাসের তৃতীয় ট্রেবলের উদ্‌যাপন আগেভাগেই শুরু করেই দিয়েছে। কিন্তু অগ্রিম সেই উদ্‌যাপন এভাবে বুমেরাং হয়ে ফিরবে, তা হয়তো ভাবতেও পারেনি কেউ! নিজেদের মাঠে রূপকথা লিখে বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল, শেষ পর্যন্ত ইউরোপসেরা হওয়ার গর্ব সঙ্গী হয়েছে ইংলিশ ক্লাবটিরই।
বার্সেলোনার কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকা ওই ম্যাচটির বিরতিতেই কিন্তু সতীর্থদের বেশ সতর্ক করে দিয়েছিলেন ‘দলের নাম্বার টেন’ লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার গত মৌসুমের ড্রেসিংরুমের ভিডিও নিয়ে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছে ক্লাবের স্পনসর রাকুটেনের টিভি চ্যানেল রাকুটেনটিভি। সেখানে ‘ম্যাচডে’ নামের প্রামাণ্যচিত্রে এসেছে অ্যানফিল্ডের সেই ম্যাচের বিরতির সময়ের আর ম্যাচের পরের চিত্র।
চ্যাম্পিয়নস লিগে এমন দুঃস্বপ্নে অবশ্য বার্সেলোনার অভিজ্ঞতা বেশ ঋদ্ধই এখন। টানা চার মৌসুম ধরেই তো ইউরোপ-সেরা টুর্নামেন্টটির নকআউট পর্বে ধাক্কা খেয়ে ফিরছে কাতালানরা! গতবার সেমিফাইনালে, তার আগের তিনবার কোয়ার্টার ফাইনালেই। তবে সর্বশেষ দুবার যেভাবে লজ্জায় মাথা নত করে বিদায় হয়েছে, সেটিই বুকে শেল হয়ে বিঁধছে বার্সার।

২০১৭-১৮ মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালেও নিজেদের মাঠে ইতালিয়ান ক্লাব রোমাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিয়ে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল বার্সার, কিন্তু রোমার মাঠে দ্বিতীয় লেগে বার্সা বিধ্বস্ত ৩-০ গোলে! গত মৌসুমে নিজেদের মাঠে লিভারপুলের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জয়ের পরও তাই বার্সায় শঙ্কার রেণু ছিলই—এবার এমনটা হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু লিভারপুল তা আর হতে দিলে তো!

>

লিভারপুলের মাঠে বিধ্বস্ত হয়ে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বিদায় নিয়েছিল বার্সা। সেই ম্যাচের বিরতিতে সতীর্থদের মেসি কী বলেছিলেন, সেটি উঠে এসেছে নতুন প্রামাণ্যচিত্রে।

অ্যানফিল্ডে বার্সার দুঃস্বপ্নযাত্রার শুরু হয়েছিল ম্যাচের ৭ মিনিটে ডিভক অরিগির গোলে। বিরতিতে ব্যবধান ছিল ১-০-ই, দুই লেগ মিলিয়ে তখনো ৩-১ গোলে এগিয়ে বার্সা। তবু লিভারপুলের প্রেসিং ফুটবলের সামনে যেভাবে খাবি খাচ্ছিল বার্সা, তাতে রোমার মতো আরেকটি দুঃস্বপ্নের শঙ্কা ছিলই।

মেসিও হয়তো সেটি টের পাচ্ছিলেন। দলের অধিনায়ক তিনি, বিরতিতে সতীর্থদের উদ্দেশে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড দিলেন মহাবিপদের সংকেত, ‘কাম অন! চলো আরেকটা ধাপ এগোনোর (ফাইনালে ওঠার) চেষ্টা করি। এই সুযোগটা আমরা হাতছাড়া হতে দিতে পারি না। দ্বিতীয়ার্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে আমাদের।’ রোমা-দুঃস্বপ্নের মনে করিয়ে দিয়ে তেমন কিছুর ব্যাপারে সতর্কও করে দিয়েছিলেন, ‘মনে রেখো, রোমাতে যেটা হয়েছিল, সেটার দায় শুধু আমাদেরই। অন্য কারও নয়। একই রকম কিছু আরও একবার হতে দিও না।’
সেটা আর সম্ভব হলো কই! ৫৪ থেকে ৫৬—তিন মিনিটে বদলি নামা জর্জিনিও ভাইনালডামের দুই গোল, আর ৭৯ মিনিটে বার্সাকে ঘোল খাওয়ানো কর্নার থেকে অরিগির দ্বিতীয় গোলে লিভারপুল ম্যাচটা জিতল ৪-০ গোলে, দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে গেল ফাইনালে। শিরোপাও এল লিভারপুলেরই ঘরে। বার্সার জন্য রইল শুধু দীর্ঘশ্বাস।