৩৫ বছর পরেও ওয়াসিমকে তাড়ায় সেই ভুতুড়ে বিকেল

>প্রথম সাফে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন ওয়াসিম ইকবাল। সেবার ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে এক ভুতুড়ে ফাইনালে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সে স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় দেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই রাইট উইঙ্গারকে।
খেলোয়াড়ি জীবনে ওয়াসিম ইকবাল । ছবি: সংগৃহীত
খেলোয়াড়ি জীবনে ওয়াসিম ইকবাল । ছবি: সংগৃহীত

কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে লাল-সবুজ পতাকা ওড়ার দৃশ্যটা আজও অনেক ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ে অমলিন। ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবরের সেই আনন্দময় বিকেলে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস ফুটবলে প্রথমবার সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। কাঠমান্ডুর উল্টো পিঠে আছে হতাশাও। ১৯৮৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম সাফ গেমসের ফাইনালই হতাশ করেছিল ফুটবল দলকে। গ্রুপ পর্বে যে নেপালকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ, ফাইনালে সে নেপালের কাছেই ৪-২ গোলে হেরে রুপার পদক হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। কাঠমান্ডুর সে বিকেলের প্রেতাত্মা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় বাংলাদেশের সে দলের অধিনায়ক ওয়াসিম ইকবালকে।

বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা রাইট উইঙ্গার বলা হয়ে থাকে ওয়াসিমকে। দেশের ফুটবল সমর্থকেরা যাকে চিনতেন ড্রিবলিং মাস্টার হিসেবে। টাচ লাইন দিয়ে বল নিয়ে দ্রুত গতিতে পৌঁছে যেতেন বিপক্ষ সীমানায়। সে ওয়াসিমের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছিল সাফ গেমস থেকে ফুটবলের প্রথম বিজয়-নিশাল ওড়ানোর মিশন। আজ ৩৫ বছর পর সেই স্মৃতি আক্ষেপে পোড়ায় এই সাবেক তারকাকে। সেই ভুতুড়ে ফাইনালটি আজও হয়ে আছে ওয়াসিমের ক্যারিয়ারের অন্যতম দুঃসহ অধ্যায় হিসেবে।


কাল থেকে এই কাঠমান্ডুতেই শুরু হয়েছে আরও একটি দক্ষিণ এশীয় গেমস। সাফ গেমস নাম বদলে এখন এসএ গেমস। দেশের ফুটবলের নতুন কাঠমান্ডু পর্ব শুরু হওয়ার আগে বারবার ফিরে যেতে হচ্ছে ১৯৮৪ সালের প্রথম সাফ গেমসে। দুর্দান্ত শুরু করা বাংলাদেশের শেষটা হয়েছিল যেন ডানা ভেঙে পড়ার মধ্যে দিয়ে। সেবার অংশ নিয়েছিল কেবল চারটি দেশ বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান। এর মধ্যে তখনো ফিফার সদস্যপদ না পাওয়ায় ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচে ছিল না আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। প্রথম ম্যাচেই মালদ্বীপের বিপক্ষে ৫-০ গোলের বড় জয়ে শুরু বাংলাদেশের। গ্রুপ পর্বে নেপালের বিপক্ষেও ৫-০ গোলের বড় জয়। সে জয়টি বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে নেপালের বিপক্ষে পাওয়া সবচেয়ে বড় জয়।
সে ফাইনালে দুটি আত্মঘাতী গোল হজম করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। হারতে হয়েছিল ৪-২ গোলে। দেশের পক্ষে দুটি গোল করেছিলেন আশরাফউদ্দিন চুন্নু। ওটাই আবার নেপালের বিপক্ষে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল হজম। ওয়াসিম মনে করেন নিজেদের দোষেই সে ম্যাচে এমনভাবে হারতে হয়েছিল বাংলাদেশকে,‘আমরা গ্রুপ পর্বে সবাইকে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু ফাইনালে গিয়ে কি যে হলো। নিজেদের দোষেই হেরে গেলাম। আমরা ওদের গোল উপহার দিয়েছিলাম। না হলে প্রথম গেমসেই সোনা জিতে ইতিহাস হয়ে থাকতে পারতাম আমরা।’

গ্রুপপর্বে নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল ছিল ওয়াসিমের। সেদিন বাংলাদেশ নেপালের ওপর এমনই প্রভাব বিস্তার করে খেলেছিল, যে ইচ্ছা করলে হ্যাটট্রিকও করতে পারতেন বলে জানালেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের ঘরের ছেলে বলে পরিচিত এই সাবেক তারকা, ‘আমাদের সেদিন গোলের নেশায় পেয়েছিল। ফাইনালের আগে নেপালকে ৫ গোল দিলাম। দুই গোল করেছিলাম আমি। ইচ্ছে করলে হ্যাটট্রিকও করতে পারতাম। আমরা একটা পর্যায়ের পর একটু ঢিলে দিয়েছিলাম।’

শুধু প্রথম সাফ নয়, ১৯৮৭ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় সাফ গেমসের ফুটবলেও বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব ছিল ওয়াসিমের কাঁধে। কিন্তু সেবার ফাইনালও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় সাফ গেমসে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। নেপাল ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে ব্রোঞ্জটাও জেতা হয়নি সেবার। তবে কলকাতা গেমসের একমাত্র সান্ত্বনা ছিল ভুটানের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়। কলকাতার বিখ্যাত সল্টলেক স্টেডিয়ামে এটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয়।

খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে অনেক দিন আড়ালে থাকা ওয়াসিম ব্রাদার্সের কোচ হয়েই আবার ফিরেছিলেন ফুটবলে। প্রিয় দলটির ডাগআউটও সামলেছেন কয়েক বছর। বর্তমানে তৃতীয় বিভাগের দল লিটল ফ্রেন্ডসের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন।