সতীর্থ মানের কারণে মেসিকে হারাতে পারেননি ফন ডাইক

একটু এদিক-ওদিক হলে মেসি নন, লুকা মদরিচের (বাঁয়ে) হাত থেকে পুরস্কারটা নিতে পারতেন ফন ডাইকই (ছবিতে নেই)। ছবি: এএফপি।
একটু এদিক-ওদিক হলে মেসি নন, লুকা মদরিচের (বাঁয়ে) হাত থেকে পুরস্কারটা নিতে পারতেন ফন ডাইকই (ছবিতে নেই)। ছবি: এএফপি।
>ব্যালন ডি’অরের ভোটে মেসির চেয়ে মাত্র সাত পয়েন্ট কম পেয়েছেন ফন ডাইক। আফ্রিকা অঞ্চলের ভোট মানের বাক্সে না গিয়ে তাঁর বাক্সে গেলেই হয়ে যেতেন বর্ষসেরা।

মাত্র সাত ভোটের এদিক-ওদিক। লিওনেল মেসি ৬৮৬ ভোট পেয়ে বর্ষসেরা, মাত্র সাত পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় ভার্জিল ফন ডাইক। ক্যারিয়ারে যে ছয়টি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি, তার কোনোটিই এত কম ব্যবধান ছিল না। একটু এদিক-ওদিক হলেই তো মেসির হাতে না উঠে পরশু প্যারিসে বর্ষসেরা ফুটবলারের এই পুরস্কারটা উঠতে পারত ফন ডাইকের হাতে।

লিভারপুলের ডাচ ডিফেন্ডারের হাতে যে পুরস্কারটা ওঠেনি, তার কারণ ক্লাব সতীর্থ ও সেনেগালের ফরোয়ার্ড সাদিও মানে। ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর দেওয়া এই পুরস্কার নির্ধারিত হয় বিশ্বজুড়ে ১৭৬টি দেশের ১৭৬ জন সাংবাদিকদের ভোটে, তাতে আফ্রিকা অঞ্চলের ভোটগুলো মানের বাক্সে যাওয়াতেই কমে গেছে ফন ডাইকের ভোট। ইংলিশ দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের বিশ্লেষণ তা-ই বলছে।

জিতলে তিন কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, ম্যাথিয়াস সামার ও ফাবিও কানাভারোর পর ইতিহাসে মাত্র চতুর্থ ডিফেন্ডার হিসেবে বর্ষসেরা হওয়ার গর্ব সঙ্গী হতো ফন ডাইকের। অবশ্য গত বছরটা তো তাঁর তেমন চোখধাঁধানোই কেটেছে! লিভারপুল যে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পাশাপাশি লিগেও শিরোপার নিশ্বাস দূরত্বে চলে গিয়েছিল, তার অন্যতম বড় কারণ ফন ডাইকই—ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল লিগে শুধু একটি ম্যাচে হারের মুখ দেখা লিভারপুল। জাতীয় দল নেদারল্যান্ডসের হয়ে ফন ডাইক খেলেছেন উয়েফার নতুন টুর্নামেন্ট নেশনস কাপের ফাইনালেও।

সেটির স্বীকৃতি ভোটের তালিকায় কিছুটা আছেও বটে! ব্যালন ডি’অর ভোটে একজন ভোটদাতা তাঁর চোখে সেরা পাঁচজনের নাম লিখতে পারেন এক থেকে পাঁচ—এই ক্রম মেনে। প্রথম ভোটের জন্য পাঁচ পয়েন্ট, দ্বিতীয় ভোটে চার...এভাবে এক পয়েন্ট করে কমতে থাকে। তাতে ভোটারদের প্রথম পছন্দ হিসেবে মেসির চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ফন ডাইকই। ১৭৬ ভোটের মধ্যে মেসি ৬১ ভোটারের চোখে সেরা, ৬৯ ভোটারের চোখে ফন ডাইক। তাহলে পার্থক্যটা হলো কোন জায়গায়? প্রায় সব ভোটারের সেরা পাঁচেই কোনো না কোনো অবস্থানে (এক থেকে পাঁচ) মেসি ছিলেন, কিন্তু ফন ডাইকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তা নয়।

আর পার্থক্য হয়েছে আফ্রিকা অঞ্চলের ভোটে। ফিফা বিশ্বকে ছয়টি ফুটবল অঞ্চলে ভাগ করে রেখেছে—এশিয়া, ইউরোপ, ওশেনিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। তা এই অঞ্চলভেদে ভোটের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইউরোপ ও এশিয়ার ভোটে এগিয়ে আছেন ফন ডাইক। বাকি চার অঞ্চলের ভোটে দাপট মেসির।

এর মধ্যে সাদিও মানে কীভাবে এলেন? আফ্রিকা অঞ্চলের ভোটের হিসেবে! আফ্রিকা অঞ্চলের ভোটারদের বেশির ভাগেরই সেরা দুইয়ে হয় মেসি নয়তো সেনেগালের মানে। শুধু সেই অঞ্চলের ভোটে মেসির চেয়ে ১৬ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়েছেন ফন ডাইক। অন্য পাঁচ অঞ্চলের ভোটের গড়ে সেরা দুইয়ে মেসি আর আর ফন ডাইকই। তার মানে আফ্রিকা অঞ্চলের ভোটে যদি মানে আর ফন ডাইকের ভোটে অদল-বদল হতো, প্যারিসে পরশু মঞ্চ রাঙাতেন ফন ডাইকই।

মানে অবশ্য বলতে পারেন, এখানে তো আর আমার কিছু করার নেই! ফন ডাইকও সেরা না হওয়ার ব্যাপারটা সেদিন মেনে নিয়েছিলেন দারুণ ঔদার্যে। বলেছিলেন, ‘আপনার সামনে যখন সেরাদের একজন থাকবে, নিজ আসনে বসে তাঁকে হাততালিতে অভিনন্দন জানানোটাও গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে ফন ডাইক সেরা হতে না পারায় একটু মনঃকষ্ট থাকলেও তালিকার সেরা দশে তাকালে লিভারপুলের গর্ব না হয়ে পারে না। ফন ডাইকের পাশাপাশি সেরা পাঁচে আছেন লিভারপুলের আরও দুজন—মানে (চতুর্থ) ও মোহামেদ সালাহ (পঞ্চম)। এঁদের সঙ্গে গোলকিপার আলিসনকে (সপ্তম) নিয়ে সেরা দশে লিভারপুলের চারজন। সেরা বিশে ছয়জন (ফিরমিনো ১৭তম, আলেক্সান্ডার-আরনল্ড ১৯তম)। সেরা ত্রিশে আছেন জর্জিনিও ভাইনালডামও (যৌথভাবে ২৬তম)। সেরা পাঁচ, সেরা দশ বা সেরা ত্রিশে লিভারপুলের যত খেলোয়াড়, আর কোনো দলের তত নেই।

ফন ডাইকের হয়তো মঞ্চ রাঙানো হয়নি, তবে প্যারিসের পরশু রাতটা অনুচ্চারে ঘোষণা করে দিয়ে গেছে লিভারপুলের জয়জয়কার।

ব্যালন ডি'অরে কার কত ভোট (সেরা দশ):
১. লিওনেল মেসি ৬৮৬
২. ভার্জিল ফন ডাইক ৬৭৯
৩. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৪৭৬
৪. সাদিও মানে ৩৪৭
৫. মোহামেদ সালাহ ১৭৮
৬. কিলিয়ান এমবাপ্পে ৮৯
৭. আলিসন ৬৭
৮. রবার্ট লেভানডফস্কি ৪৪
৯. বার্নার্দো সিলভা ৪১
১০. রিয়াদ মাহরেজ ৩৩