রোনালদো-মেসিদের কাছে নারী ব্যালন ডি'অরজয়ীর চাওয়া

লিওনেল মেসি, ইব্রাহিমোভিচ ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (বাঁ থেকে)। ছবি: সংগৃহীত।
লিওনেল মেসি, ইব্রাহিমোভিচ ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (বাঁ থেকে)। ছবি: সংগৃহীত।
ফুটবলে বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে সব সময়ই সরব মেগান র‍্যাপিনো। যুক্তরাষ্ট্রের ফরোয়ার্ড এবার হয়েছেন মেয়েদের বর্ষসেরা। সেখানেই বক্তব্যে মেসি-রোনালদোদের আহ্বান জানালেন ফুটবলে যত অন্যায়, তার বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হতে।


মাঠে যতটা, তার চেয়ে বেশি মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডের জন্য মেগান রাপিনোর নাম অধিক আসে সংবাদের শিরোনামে। কখনো যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলায় ছেলেদের সমান বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবি তুলেছেন, তো কখনো আওয়াজ তুলেছেন বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই মেগান রাপিনোর কণ্ঠে একই কথা থাকল ব্যালন ডি’অর জয়ের পরও।

প্যারিসে গত সোমবার বর্ষসেরা নারী ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন রাপিনো। এরপর ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফরোয়ার্ড রীতিমতো আকুতি জানিয়েছেন এ সময়ের সেরা পুরুষ তারকাদের কাছে। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ইব্রাহিমোভিচদের মতো খেলোয়াড়দের প্রতি তাঁর আহ্বান, তাঁরাও যেন সোচ্চার হন ফুটবলের অনিয়মের বিরুদ্ধে।

ফুটবলে তাঁর অর্জন কম ছিল না কখনোই। যুক্তরাষ্ট্রের ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপজয়ী মেয়েদের দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন, সোনা জিতেছেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকও। ২০১১ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েছে রাপিনোর যুক্তরাষ্ট্র। এবারের ব্যালন ডি’অরেও মেসির পাশে মঞ্চে আলো ছড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের দলের ফরোয়ার্ড।

তবে রাপিনো বছর দুয়েক ধরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসছেন মাঠের বাইরের কাজের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের খেলাধুলার ক্ষেত্রে বেতন-বোনাসে ছেলেদের সমান বেতন চেয়ে আন্দোলনের অন্যতম বড় মুখ ৩৪ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্প্যানিশ প্লেমেকার হুয়ান মাতা দাতব্য কাজের উদ্দেশে যে ‘কমন গোল’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন, তাতেও নারী ফুটবলারদের মধ্যে সবার আগে যোগ দিয়েছেন তিনি আর তাঁর সতীর্থ অ্যালেক্স মরগান। রাপিনোর কণ্ঠ সব সময় সরব ছিল বর্ণবাদ ও লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে।

একই সুর থাকল ব্যালন ডি’অর জেতার পর ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও। রাপিনোর কথা, ‘আমি চিৎকার করে বলতে চাই, ক্রিস্টিয়ানো (রোনালদো), লিওনেল (মেসি), জ্লাতান (ইব্রাহিমোভিচ), আমাকে সাহায্য করো! আমার পাশে এসে দাঁড়াও।’ ছেলেদের ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই তারকাদের নিয়ে একটু অভিযোগও আছে তাঁর, ‘এই বড় তারকারা (অনিয়মের বিরুদ্ধে) কোনো কিছুতে জড়ায় না। অথচ ছেলেদের ফুটবলেও কত কত সমস্যা আছে!’

লিওনেল মেসির সঙ্গে ব্যালন ডি’অর হাতে মেগান রাপিনো (ডানে)। গত সোমবার প্যারিসে। ছবি: সংগৃহীত।
লিওনেল মেসির সঙ্গে ব্যালন ডি’অর হাতে মেগান রাপিনো (ডানে)। গত সোমবার প্যারিসে। ছবি: সংগৃহীত।

মেসি-রোনালদোদের কখনো কেন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু বলতে তেমন শোনা যায় না, সেটিরও একটা সম্ভাব্য কারণ দাঁড় করিয়েছেন রাপিনো, ‘ওরা কি ভয় পায় যে ওরা যত সম্মান, যত প্রাপ্তি সব হারিয়ে ফেলবে? ওরা হয়তো এটা বিশ্বাস করে, কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয়। বর্ণবাদ বা লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বললে কি মেসি বা রোনালদোকে ফুটবল ইতিহাস থেকে কেউ মুছে দিতে পারবে?’

ব্যালন ডি’অর জেতা তাঁর নিজের আওয়াজ আরও জোরালভাবে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে বলেই বিশ্বাস রাপিনোর, ‘এই ব্যালন ডি’অরটা দুটি দিককেই পুরস্কৃত করছে। একদিকে এটার স্বীকৃতি যে, আমি খুব ভালো একজন ফুটবলার। অন্যদিকে মাঠের বাইরে আমার কাজগুলো মানুষকে টানে। কারণ তাঁরা বোঝেন যে আমি সমাজের সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করছি। আমি ভাগ্যবান যে আমার এমন একটা (ফুটবলে) প্রতিভা আছে, যেটা এসব দিকে নেতৃত্ব দেওয়া সহজ করে দেয়।’