'রোনালদোর কোনো প্রকৃতিদত্ত প্রতিভা নেই'

জিকিউ ইতালিয়ায় সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে ধুয়ে দিয়েছেন ইব্রাহিমোভিচ। পর্তুগিজ মহাতারকার জুভেন্টাসে যাওয়া, ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদোর সঙ্গে তুলনা টেনেছেনই। বললেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কোনো প্রকৃতিদত্ত প্রতিভাও নেই।
এক হাতে ইতালিয়ান লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, অন্য হাতে সেরা তিন ফরোয়ার্ডের একজন হওয়ার পুরস্কার হাতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত সোমবার ইতালিয়ান লিগের পুরস্কার  বিতরণী অনুষ্ঠানে। ছবি: এএফপি
এক হাতে ইতালিয়ান লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার, অন্য হাতে সেরা তিন ফরোয়ার্ডের একজন হওয়ার পুরস্কার হাতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত সোমবার ইতালিয়ান লিগের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। ছবি: এএফপি

লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলিয়ে মৌসুমে ১৬ ম্যাচে ৭ গোল। অন্য অনেক স্ট্রাইকারের জন্য মোটামুটি ভালো পারফরম্যান্স। কিন্তু নামটা যখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ফর্মটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না বলেই গণ্য হবে। তা জুভেন্টাসের পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের বয়স যতই ৩৪ হোক!

একদিকে ফর্মের এই অবস্থা, অন্যদিকে চোটও তাঁকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এক ম্যাচ খেলছেন তো, পরের ম্যাচ বিশ্রামে। মাঠে যখন সময়টা ভালো যাচ্ছে না, মাঠের বাইরেও রোনালদো পড়ছেন সমালোচনার কেন্দ্রে। সমালোচনাকারীও সময়ের ফুটবলে সেরাদের একজন—জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ! জিকিউ ইতালিয়া সাময়িকীতে গতকাল প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সুইডিশ স্ট্রাইকার রোনালদোকে যেন ধুয়েই দিয়েছেন। একে তো ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিওর সঙ্গে তুলনা টেনে ক্রিস্টিয়ানোকে ‘আসল রোনালদো’ বলতেই রাজি হননি। রোনালদো জুভেন্টাসে আসাকে যে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে দাবি করেন সব সময়, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন ৩৮ বছর বয়সী স্ট্রাইকার। এতটুকুতে থামলেও চলত! ইব্রা সোজা বলে দিলেন, পাঁচটি ব্যালন ডি’অরজয়ী রোনালদোর নাকি প্রকৃতিদত্ত প্রতিভাই নেই!

দুই মৌসুম যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) দল এলএ গ্যালাক্সিতে কাটিয়ে আবার ইতালিতে ফিরছেন ইব্রা, এতটুকু নিশ্চিত। এর আগে তো জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান, এসি মিলান সব ক্লাবেই খেলেছেন। এবার কোন ক্লাবে ফিরছেন, সেটি এখনো রহস্যে ঢাকা রাখছেন সুইডিশ স্ট্রাইকার। শুধু বলেছেন, এমন কোনো ক্লাবে ফিরতে চান যে ক্লাবটার আবার শিরোপা জয়ের পথে ফেরা দরকার, ইতিহাস নতুন করে লেখার দরকার। ইব্রার যে চ্যালেঞ্জের কথা বলছেন, এমন চ্যালেঞ্জ শুধু এসি মিলানেই পাওয়া যাবে।

তা তাঁর চ্যালেঞ্জ, ইতালিতে যাওয়ার কথা যখন আসছেই, ইতালিতে যাঁকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবেন, সেই রোনালদোর কথাও স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। রিয়াল মাদ্রিদকে টানা তিনটি ও পাঁচ বছরে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর পর গত বছর জুভেন্টাসে চলে এসেছেন রোনালদো। বলেছিলেন, ইংল্যান্ড আর স্পেনে অনেক কিছু জেতার পর নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজেই তাঁর ইতালিতে আসা। কিন্তু সে প্রসঙ্গ উঠতেই শুরু হলো ইব্রার চাঁচাছোলা কথা, ‘ও এমন একটা দলে এসেছে যে দলটা ও আসার আগেই টানা সাতবার সিরি “আ” (ইতালিয়ান লিগ) জিতেছে। এমন একটা ক্লাবে যাওয়া কখনোই চ্যালেঞ্জের কিছু নয়।’ তাহলে কখন চ্যালেঞ্জ বলা যাবে? ইব্রার উত্তর, ‘আমি যদি সত্যিই চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতাম, তাহলে জুভে যখন সিরি “আ” থেকে সিরি “বি”তে (ইতালির দ্বিতীয় বিভাগ) নেমে গিয়েছিল, তখন ক্লাবটাতে গিয়ে ওদের আবার শীর্ষ লিগে ফিরিয়ে আনতাম।’

ইতালিতে যাওয়ার পর তো রোনালদোর মুখোমুখি হতেই হবে, দুজনই ফিট থাকলে লিগে অন্তত দুবার দেখা হবে ইব্রা-রোনালদোর। তা সেখানে ‘আসল রোনালদো’র দেখা পাবেন কি না, এমন প্রশ্নে ইব্রা আরেকবার যেন উড়িয়ে দিলেন পর্তুগিজ মহাতারকার নামটাকে। রোনালদো নাজারিওর প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘আসল রোনালদো একজনই, তিনি ব্রাজিলিয়ান।’

ক্যারিয়ারজুড়ে সব সময়ই ব্রাজিলিয়ান রোনালদোর প্রতি নিজের মুগ্ধতা জানিয়েছেন সদা উদ্ধত ইব্রাহিমোভিচ। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে তুলনাতেও যে তিনি ব্রাজিলিয়ান রোনালদোকেই এগিয়ে রাখবেন তা তো জানা কথাই। তবে তাঁর শেষ কথাটা পর্তুগিজ মহাতারকার হৃদয়ে গিয়ে লাগার সম্ভাবনা। ক্যারিয়ারে এত এত অর্জন যাঁর, সমকাল ছাড়িয়ে যাঁকে সর্বকালের সেরাদের একজন ভাবা হয়, পাঁচটি ব্যালন ডি’অরজয়ী সেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে ইব্রাহিমোভিচের বিশ্লেষণ, ‘ওর প্রকৃতিদত্ত প্রতিভা নেই। যা করেছে, সেটা কঠোর পরিশ্রমের ফল।’

প্রতিভা না থাকলে শুধু পরিশ্রম দিয়ে হয়তো একজন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো হওয়া একটু কঠিনই।