বাফুফেকে টেক্কা দিল বিসিবি
>সদ্য সমাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে একটা অদৃশ্য সাফল্যের প্রতিযোগিতা ছিল দেশের জনপ্রিয় দুই খেলার সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মধ্যে। সেখানে দুটি সোনা জয় করে বাফুফেকে ভালোই টেক্কা দিল বিসিবি।
এসএ গেমসের মতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কিন্তু অনেক সময় দেশের অভ্যন্তরে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রূপ নেয়। কোন ক্রীড়া সংস্থা অন্যকে টেক্কা দিয়ে বেশি পদক জয় করতে পারে, এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিন্তু খুব অস্বাভাবিক নয়। এবারের এস এ গেমসে ১০ ইভেন্টের প্রতিটিতে সোনা জিতে নিশ্চিত করেই নিজেদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে আর্চারি ফেডারেশন।কারাতে, ভারোত্তলন, তায়কোয়ান্দো, ফেন্সিংয়ে সোনা জয় নিশ্চিত করেই এই ফেডারেশনগুলোর মর্যাদা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন।
উল্টো পিঠে আছে শুটিং, সাঁতার আর অ্যাথলেটিকসের মতো ফেডারেশনগুলো। কোনো সোনার পদক তারা জিততে পারেনি, পদকের সংখ্যাও দিন দিন কমছে; তবে সফলতা ও ব্যর্থতার দিক দিয়ে ফুটবল ও ক্রিকেটের বিপরীতমুখী অবস্থানটা বড় করেই চোখে পড়ছে সবার। এসএ গেমসে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই ক্রীড়া সংস্থার অলিখিত লড়াইয়ে বাফুফে হেরে গেছে বিসিবির কাছে। পুরুষ ও নারী দুই বিভাগেই সোনা জিতেছে ক্রিকেট। ফুটবল উঠতে পারেনি ফাইনালেই। ৫ দলের মধ্যে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ব্রোঞ্জ নিয়েই। নারী ফুটবলে তো দল পাঠানোরই সাহস করেনি বাফুফে।
ক্রিকেটে শক্তিশালী দলই পাঠিয়েছিল বিসিবি। নারী বিভাগে তো খেলেছে জাতীয় দলই। ছেলেদের ক্রিকেটে সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন, সাইফ হাসান, মোহাম্মদ নাঈমদের মতো জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে দল তৈরি হয়েছিল। প্রথম দিকে পুরুষ ক্রিকেট দলে সৌম্যদের মতো খেলোয়াড় খেলানো নিয়ে সমালোচনা ছিল। কিন্তু সোনা জিতে সেই সমালোচনাকে চাপা দেওয়া গেছে। নারী ক্রিকেটে দুইবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সোনা জিতে দেশের মানুষকে আনন্দিতই করেছেন সালমা-জাহানারারা। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটে অংশ নেয়নি। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দুই সেরা শক্তির অনুপস্থিতির সুযোগটা পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছে বিসিবি।
ফুটবলেরও তেমন পরিকল্পনাই ছিল। ফুটবলেও ছিল না ভারত-পাকিস্তান। বিশেষ করে ভারতের অনুপস্থিতি আশার ফানুস তৈরি করেছিল বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য খেলার মধ্যে থাকা জাতীয় দলটিকেই নেপালে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। প্রথম ম্যাচে হারতে হয়েছে ভুটানের কাছে। শেষ ম্যাচে নেপাল। মাঝখানে মালদ্বীপের সঙ্গে ১-১ ড্র আর শ্রীলঙ্কাকে ১-০ গোলে হারালেও ফাইনালে উঠতে না পারার ব্যর্থতা পোড়াচ্ছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। সবচেয়ে বড় কথা, এসএ গেমসে দেশের ফুটবলের করুণ চেহারাটাই আবারও বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
অথচ বাংলাদেশের এই অনূর্ধ্ব-২৩ দলটিই আশার আলো দেখিয়েছিল। ২০১৮ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে আর থাইল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র করে প্রথমবারের মতো এশিয়াড ফুটবলের নক আউট পর্বে নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রায় সেই দলটিই যখন এসএ গেমসে নেপাল-ভুটানের কাছে হারে, তখন সেটি ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বড় হতাশারই কারণ হয়। এই তো কিছুদিন আগেও বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে জামালদের লড়াকু পারফরমেন্স প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যেই এসএ গেমসে এমন অগোছালো ফুটবল দল কীভাবে খেলল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চারদিকে।
এসএ গেমসে নারী ফুটবলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তটা হতাশ করেছে ফুটবলপ্রেমীদের। এর পেছনে বাফুফে কারণ দেখিয়েছিল মেয়েদের শক্তিশালী জাতীয় দল না থাকা। মেয়েদের দল না পাঠানো সম্পর্কে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছিলেন, ‘মেয়েদের পূর্ণাঙ্গ একটি জাতীয় দল গড়ে তুলতে আমাদের আরও সময় লাগবে। তাই আমরা এই এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠাচ্ছি না। আসলে আমাদের দল এখনো ভারত, নেপালকে হারানোর পর্যায়ে যায়নি। মেয়েদের দলটি পরিণত হতেও সময় প্রয়োজন। নেপালে গিয়ে খারাপ করলে এই মেয়েরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। ’
অথচ ২০১০ এসএ গেমসের নারী ফুটবলে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেই ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে গুয়াহাটিতে শেষ এসএ গেমসেও বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছিল ব্রোঞ্জ। এত দিনেও শক্তিশালী একটি জাতীয় দল গঠন করতে না পারার দায়ভারটা আসলে কার?
১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসে (এখন এসএ গেমস) মাত্র দুটি সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। এর একটি ছিল ফুটবল। তাও দীর্ঘ ১৫ বছর চেষ্টার পর। ফুটবলের সেই সোনা গেমসে বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্যর্থতাকে ঢেকে দিয়েছিল। ২০১০ সালে ঢাকায় এসএ গেমসে ১৮ সোনার একটি ছিল ক্রিকেট, অন্যটি ফুটবলে। এই দুটি খেলার সাফল্যই গেমস আয়োজনকে পূর্ণতা দিয়েছিল। এবার ক্রিকেট সোনা জিতলেও ফুটবলের ব্যর্থতা এসএ গেমসের রেকর্ড ১৯ সোনা জয়ের আনন্দকে অনেকটাই যেন ঢেকে দিয়েছে।