ঢাকার ফুটবলও দেখছে যে নতুন আইন

ফুটবলের নতুন আইন দেখা যাবে বাংলাদেশের ফুটবলেও। ছবি: এএফপি
ফুটবলের নতুন আইন দেখা যাবে বাংলাদেশের ফুটবলেও। ছবি: এএফপি

চতুর্থ রেফারি খেলোয়াড় বদল করতে বোর্ড উঁচিয়ে ধরলেন। মাঠ থেকে যিনি বেরোবেন, তিনি চতুর্থ রেফারির পাশ দিয়ে চলে এলেন বাইরে। অনেক সময় খেলোয়াড়টি সময় নষ্ট করেন দলের কৌশল হিসেবে। কিন্তু এখন আর মাঠে এক প্রান্ত থেকে সময় নষ্ট করে টেকনিক্যাল অঞ্চল দিয়ে বাইরে আসার প্রয়োজন নেই। খেলোয়াড়টি যেখানে আছেন সবচেয়ে কাছের পার্শ্বরেখা বা গোল লাইন দিয়ে দ্রুত বাইরে চলে যাবেন। এতে সময়ের অপচয় ও খেলার গতি কমিয়ে দেওয়ার কৌশল কিছুটা হলে বন্ধ হবে। এই নিয়ম না মানলে রেফারি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে রেফারি কার্ড দেখাবেন।

রেফারিদের হাতে আরও অনেক ক্ষমতা দিয়ে ফুটবল আইনের অনেক কিছুই বদল করেছে ফিফা। ফুটবল ম্যাচে ১৭ আইনের মধ্যে ৩, ৪, ৫, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৪, ১৬ ধারায় এসেছে উল্লেখযোগ্য বদল। ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড বা আইএফএবি গত এপ্রিলে এই আইন পাশ করেছে। ফিফা জুন থেকে তা কার্যকর করেছে। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন তার অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে ২০ আগস্ট থেকে কার্যকর করতে বলেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন আইন কার্যকর হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ফেডারেশন কাপ দিয়ে।

নতুন আইনগুলো বেশ চমকপ্রদ। যেমন আগে সাইড বেঞ্চে কোচ-কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করতেন রেফারি, মাঠে বাইরে পাঠাতে পারতেন ( ডিসব্যন্ড)। নতুন নিয়মের ৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধ বিবেচনায় কর্মকর্তাকে সতর্ক, হলুদ কার্ড, লাল কার্ড দেখানো যাবে। কোচকেও এখন থেকে কার্ড দেখানো হবে। বেঞ্চে কোনো ঘটনা ঘটল কিন্তু রেফারি দেখেননি। সহকারী রেফারি বা চতুর্থ রেফারি তাঁর নজরে আনলে কোচ-কর্মকর্তারা বা খেলোয়াড়কে শাস্তি দেবেন রেফারি। ওদিকে বেঞ্চের খেলোয়াড়কে কার্ড দেখানোর নিয়মটা অপরিবর্তিতই আছে।

ঢাকায় ফেডারেশন কাপ শুরুর আগে ক্লাবগুলোকে ফিফার নতুন আইন সম্পর্কে ধারণা দিতে কর্মশালা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তাতে সাবেক ফিফা রেফারি ইব্রাহিম নেসার, তৈয়ব হাসান, আজাদ রহমানরা অংশ নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, নতুন আইনের মাধ্যমে ফিফা ফুটবলকে আরও আকর্ষণীয় করতে চায়।

নতুন আইন বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ফিফা চায় মাঠে একটা শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে। আগে যেমন ফুটবলাররা যেমন ইচ্ছা হাত মোজা বা ইনার পরতে পারতেন। কিন্তু এখন হাতার রঙের মতো ইনার হতে হবে। হাতা শুধু কালো হলে কালোই পরতে হবে। সাদা ও কালো হলে সাদা-কালো যে কোনো একটা রং বাছা যাবে এবং সবাই একই রং পড়বেন।

আগে টস জেতা অধিনায়ক ঠিক করতেন মাঠের কোন প্রান্ত নেবেন। এখন প্রান্ত পছন্দ এবং কিক অফ দুটির যে কোনো একটি নিতে পারবেন। এত দিন গোল কিকের সময় বল পেনাল্টি অঞ্চলের বাইরে গেলে তবেই খেলা শুরু হতো। নতুন নিয়মে বল বক্সের বাইরে আসা জরুরি নয়। গোল কিকের জন্য বলে পা ছোঁয়ালেই খেলা শুরু। গোলকিপার বক্সে পাসও দিতে পারবেন। তখন অবশ্য প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে বক্সের বাইরে থাকতে হবে। আগে গোলকিপার আগে হাত দিয়ে বল ছুড়লে গোল হতো। এখন হাত দিয়ে কোনো গোল হবে না।
গোলকিপারের জন্য সতর্কতাও। পেনাল্টি কিকের সময় আগে গোলকিপারের দুই পা-ই গোললাইনের ওপর থাকতে হতো। এখন যে কোনো একটা পা সামনে পেছনে নেওয়া যাবে। কিন্তু দুই পা কখনো গোল লাইনের পেছনে নেওয়া যাবে না। তবে খেলোয়াড়দের সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। পেনাল্টির শট যিনি নেবেন, তাঁর কোনো চিকিৎসার দরকার হলে এত দিন মাঠের বাইরে যাওয়া লাগত। এখন মাঠেই তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে, যদি তিনি চিকিৎসা চান।

ফ্রি-কিকের সময় তৈরি করা দেয়ালের ব্যাপারে কিছু বিধি জারি করা হয়েছে। এখন অন্তত ১০ গজ দূরে মানব দেয়াল তৈরি করে দাঁড়াতে হয়। আগে আক্রমণে থাকা দলের খেলোয়াড় দেয়ালে ঢুকে হুড়োহুড়ি করত। নতুন আইনে ফ্রি-কিক নেওয়া দলের অন্তত ৩জন থাকলে সেটা দেয়াল হবে। সবাই দেয়ালের এক মিটার দূরে থাকবেন। না থাকলে রেফারি রক্ষণ দলের পক্ষে ইন ডাইরেক্ট ফ্রিকিক দেবেন।

আগে অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল অপরাধযোগ্য ছিল না। এখন অনিচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনাবশত কারও হাতে বল লাগলে এবং সেই দল আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গেলে রেফারি খেলা বন্ধ করবেন। আবার কোনো খেলোয়াড় চোট পেলে আগে দুই দলই খেলা চালিয়ে যেতে পারত। বল বাইরে পাঠিয়ে খেলা বন্ধ করা হতো। এখন রেফারি খেলা বন্ধ করতে পারবেন। রেফারি ভিডিও দেখতে চাইলে এবং কোনো ফুটবলারও ভিডিও দেখতে চেয়ে রেফারিকে অনুসরণ করলে ফুটবলারকে হলুদ কার্ড দেখানো যাবে। রেফারির রিভিউ অঞ্চলে কোনো কর্মকর্তা গেলে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখাতে পারবেন। ভিডিও অপারেশনস রুমে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ যে কেউ গেলে তাঁর জন্য বড় শাস্তি সরাসরি লাল কার্ড।

আগে ‘ড্রপ বল’ ছিল যে পারে আগে টাচ করবে। এখন দুই দলের খেলোয়াড়েরা ৪ মিটার দূরে থাকবেন। যিনি ড্রপ বলে অংশ নেবেন তিনিই সামনে থাকবেন। রেফারির গায়ে বল লেগে জালে গোল হতো আগের আইনে। এখন গোল হবে না। রেফারির গায়ে বল লেগে কোনো দল সুবিধা পেলেও আগে খেলা চলত। এখন রেফারি খেলা বন্ধ করবেন।

ফিফা দেখতে চায় এতে কতটা হচ্ছে। ভবিষ্যতে বসে এটি আবার পর্যালোচনা করা হবে। সাবেক ফিফা রেফারি আজাদ রহমানের বিশ্বাস এর ফল আসবে মাঠে। তাঁর কথা, ‘ফুটবলের নতুন এই আইন জানলে খেলোয়াড়েরাই সুবিধা পাবে। শুধু রেফারি নয়, খেলোয়াড়, সংগঠক, দর্শক সবাইকে এটা জানতে হবে।’

জানাটা আসলে এখন সময়ের দাবিই।