সব সময় এভাবেই খেলতে চান ইমরুল

এমনভাবেই খেলে যেতে চান ইমরুল। ছবি: প্রথম আলো
এমনভাবেই খেলে যেতে চান ইমরুল। ছবি: প্রথম আলো
>

টেস্টে গত ১০ ইনিংসে মাত্র দুবার দুই অঙ্কের দেখা পেয়েছেন। ওয়ানডে দলে তো গত এক বছর সুযোগই পাচ্ছেন না। এ রকম সময়ে যা হয়, ইমরুল কায়েসও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিকার হচ্ছিলের ব্যঙ্গবিদ্রুপের। কিন্তু বিপিএলে পুরো অন্য চেহারায় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন সেসব নিয়েই...

প্রশ্ন: বিপিএলে রানের মধ্যে আছেন। রহস্যটা বলবেন?
ইমরুল: আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করছি। নিজের মনের মতো ব্যাটিং করতে পারলে সব সময় আত্মবিশ্বাস থাকে। বড় ব্যাপার হলো, প্রথম ম্যাচে রান পেয়েছি। যেকোনো টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে রান পেলে আমার জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়।

প্রশ্ন: নিজের খেলা খেলেই রান করছেন। এতে নিশ্চয়ই ভালো লাগাটা বেড়ে যাচ্ছে...
ইমরুল: আমি এভাবে খেলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এভাবেই রান করেছি। সব সময় এভাবেই খেলতে চাই। অনেক সময় সফল হই, অনেক সময় হই না।

প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ের বিশেষ কিছু নিয়ে কি কাজ করেছেন?
ইমরুল: টেকনিক্যাল জিনিস নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণেই আমি পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। ব্যাটিং ভালো করার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা, এটা আসলে ভালো না। আমার ক্ষেত্রে এটা হচ্ছিল। যেকোনো কিছু নিয়েই বেশি চিন্তা করতাম। ক্রিকেট নিয়ে বেশি চিন্তা করলে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়। টেকনিক নিয়ে বেশি চিন্তা করলে আপনার ব্যাটিংয়ে বাজে প্রভাব পড়বে। অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে এসব ভেবে। এখন আর চিন্তা করি না। যা আসে, যেভাবে আছে, এভাবেই খেলব।

প্রশ্ন: তাহলে মানসিকতার পরিবর্তনটাই আসল...
ইমরুল: অবশ্যই। আমি অনেক বড় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, কোচদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের যে মতামত পেয়েছি, এসব অনেক কাজে লেগেছে।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাও কি ভালো বুঝতে পারছেন এখন?
ইমরুল: আসলে যত বেশি খেলবেন, ততই অভিজ্ঞতা হবে। আমি বিপিএল ছাড়া টি-টোয়েন্টি খেলি না। আমার তাই এই খেলাটায় উন্নতির জায়গাও নেই। আমি মূলত কাজ করি ওয়ানডে আর টেস্ট নিয়ে। আপনি দেখবেন গত বছর ছাড়া প্রতিবছরই ধারাবাহিকভাবে রান করেছি। ছন্দ হয়তো একেক সময় একেক রকম থাকে। এবার ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স হচ্ছে।

প্রশ্ন: সেদিন বলছিলেন অধিনায়কত্ব ব্যাটিংয়ে সাহায্য করে, একটু বিস্তারিত বলবেন?
ইমরুল: মাঠে যখন মনোযোগী থাকবেন, তখন একটা সময় পর সেটা অভ্যাসে পরিণত হবে। ব্যাটিংয়ে যখন যান, তখন ওই মনোযোগটা কাজে দেবে। আমার ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্ম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসছে না। এটার কারণ কী?
ইমরুল: কয়েকটা টেস্টে আমি ভালো খেলিনি। জানি না কেন হয়েছে। হয়তো একটু বেশি চিন্তা করে ফেলেছিলাম। তবে যদি গত কয়েক বছরের ওয়ানডে দেখেন, আমার মনে হয় না আমি সফল নই। যখনই খেলেছি, যেখানে খেলেছি, রান করেছি। আমার ক্যারিয়ারই এ রকম। ২০১০ সালের দিকে দলে ধারাবাহিক ছিলাম। তখন প্রায় ১ হাজারের মতো রান করি। আপনি যখন ধারাবাহিকভাবে খেলবেন, বাদ পড়ার ভয় থাকবে না, তাহলে সব এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাদ পড়ার ভয় থাকে না। পারফর্মও করা যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। জাতীয় দলে আমি সব সময় আসা-যাওয়ার ভেতরে থাকি। এভাবে পারফর্ম করাটা কঠিন হয়ে যায়।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে অধিনায়কত্ব করছেন বলে একাদশে আপনার জায়গা নিশ্চিত। এ জন্যই নির্ভার খেলতে পারছেন?
ইমরুল: হ্যাঁ, অবশ্যই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো সহজ না। বাইরে থেকে এসে একটা ম্যাচ খেলবেন, আবার চলে যাবেন, আবার আসবেন। এভাবে ভালো করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনাকে নিয়ে অনেক ট্রল হচ্ছে। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
ইমরুল: আমি এগুলো আমি দেখি না। আর কে কী বলল না বলল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি পাত্তাই দিই না। দিন শেষে আমার ক্যারিয়ার, আমার জীবন-সবকিছুই আমার। ভালো, খারাপ যা-ই খেলি না কেন, সবকিছু আমার কাছে। কে আমাকে বড় করল, ছোট করল, এসবে মাথাব্যথা নেই।

প্রশ্ন: কিন্তু কোনো না কোনোভাবে এসব তো আপনার কানে পৌঁছায়...
ইমরুল: অনেকে এসে বলে, তোমাকে নিয়ে ট্রল বানিয়েছে। সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলাম, বিখ্যাত হলেই মানুষ এ রকম করে। আমার বলার অর্থ ছিল, আমি ভালো করলে মানুষ কথা বলবে, খারাপ করলেও কথা বলবে। কিছু না করলে তো কথা বলবে না।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই সংস্কৃতিটাকে কীভাবে দেখেন?
ইমরুল: এটা ঠিক নয়। একজন ক্রিকেটার অনেক কিছু ত্যাগ করে এই জায়গায় আসে। এরপর এসে যদি সে বাদ পড়ে, তার কিন্তু পুরো ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। অনেকের জীবনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর যদি আবার একজন ক্রিকেটারকে নিয়ে মানুষ এভাবে চিন্তা করে, সেটি দুঃখজনক। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে ছেলেরা আসে। ভালোবাসা থেকে আসে। গালি খাওয়ার জন্য আসে না।