বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কী করছেন বিপিএলে

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংসটি মুশফিকুর রহিমের। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংসটি মুশফিকুর রহিমের। ছবি: প্রথম আলো
>বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এবার নিয়মিতই রান উৎসব দেখা যাচ্ছে। সেই রান উৎসবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কতটা পারছেন নিজেদের মেলে ধরতে?

চট্টগ্রামের টি-টোয়েন্টি উপযোগী নিখাদ রানপ্রসবা উইকেটে ২০০ পেরোনো কিংবা ২০০ ছুঁইছুঁই ইনিংস দেখা গেছে প্রায় প্রতিদিনই। ‘মনের মতো’ উইকেট পেয়ে ব্যাটসম্যানরা সুযোগ পেয়েছেন রান উৎসব করার। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের ছয়টিই এসেছে চট্টগ্রামে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট যে দুটি সেঞ্চুরি দেখা গেছে, দুটিই চট্টগ্রামে। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের এ রান উৎসবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বিদেশিদের চেয়ে বেশ পিছিয়ে।

স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা যে একেবারে রান পাচ্ছেন না, তা নয়। ইমরুল কায়েস ৭ ম্যাচে ২ ফিফটিতে করেছেন ২৩৫ রান। তামিম ইকবাল ৫ ম্যাচে ২ ফিফটিতে করেছেন ২০৪ রান। কিন্তু দুজনের কেউ সেরা চারে নেই। প্রায় অর্ধেক পথ পেরোনো বঙ্গবন্ধু বিপিএলে এখনো বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান পাননি তিন অঙ্কের দেখা। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সেঞ্চুরি করেছেন সিলেটের আন্দ্রে ফ্লেচার আর কুমিল্লার ডেভিড ম্যালান। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু মুশফিকুর রহিমই সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বর জহুর আহমেদে রাজশাহীর বিপক্ষে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন ৯৬ রানে। মুশফিক বাদে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান পৌঁছাতে পারেননি ৯০-এর ঘরে। ৮০-এর ঘরে যেতে পেরেছেন মাত্র একজন—১১ ডিসেম্বর মিরপুরে চট্টগ্রামের বিপক্ষে মোহাম্মদ মিঠুন অপরাজিত ছিলেন ৮৪ রানে।

এবারের বিপিএলকে ধরা হচ্ছে স্থানীয় ক্রিকেটারদের মেলে ধরার আদর্শ এক মঞ্চ। এ মঞ্চেই সবার জন্য দারুণ সুযোগ লম্বা ইনিংস খেলে নিজেদের দারুণভাবে তুলে ধরা। প্রায় প্রতি ইনিংসে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থিতু হচ্ছেন, কেউ কেউ সেঞ্চুরির আশাও জাগাচ্ছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইনিংসের সুন্দর পরিণতি পাচ্ছে না। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি করা সব সময়ই কঠিন। সেই কঠিন কাজটা বিদেশি ব্যাটসম্যানরা যেভাবে করছেন, স্থানীয়রা কেন পারছেন না? এটা ঠিক, ভালো ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরিই একমাত্র মানদণ্ড নয়। কিন্তু একজন ব্যাটসম্যানের তিন অঙ্ক ছোঁয়ার অভ্যাস থাকলে দলীয় স্কোরটা যে অনায়াসে ২০০ পেরোয়। নিয়মিত ২০০ পেরোনো ইনিংস, ২০ ওভারের ক্রিকেটে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার অভ্যাস থাকলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রানের পাহাড় গড়া কঠিন হয় না।

লম্বা ইনিংস না খেলতে পারার বিষয়টি তো আছেই। ব্যক্তিগত রান সংগ্রহেও বিপিএলে এখনো স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা বিদেশিদের ছাপিয়ে যেতে পারেননি। খুলনা টাইগার্সের রাইলি রুশো এখনো কোনো সেঞ্চুরি পাননি। কিন্তু গত বিপিএলের মতো এবারও এই দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান ধারাবাহিক রান করে চলেছেন। ৬৪*, ৪২, ৬৬*, ৫২ ও ৩৫—৫ ইনিংসে ৮৬.৩৩ গড়ে ২৫৯ রান করে আছেন দুইয়ে। এই ধারাবাহিকতাও স্থানীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে কই?

বেশির ভাগ দলই টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রায় অর্ধেক ম্যাচ খেলে ফেলেছে। এখনো অর্ধেক পথ বাকি। শেষ চার কিংবা ফাইনালে খেলা দলগুলো পাবে আরও বেশি ম্যাচ। টুর্নামেন্টের বাকি অংশে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিশ্চয়ই সুযোগ থাকবে আরও দ্যুতি ছড়ানোর। সুযোগ থাকবে বিদেশি ব্যাটসম্যানদেরও ছাড়িয়ে যাওয়ার। সুযোগটা স্থানীয়রা কতটা কাজে লাগাতে পারেন, সেটিই দেখার।