বিপিএলে মিরাজ-নাঈমদের কী হলো

স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদু এবার বিপিএলে কমই দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হতাশ করছেন বাংলাদেশ দলের স্পিনাররা।
স্পিনারদের ঘূর্ণি জাদু এবার বিপিএলে কমই দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হতাশ করছেন বাংলাদেশ দলের স্পিনাররা।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে একাদশে লেগ স্পিনার খেলানোর নিয়ম বা নির্দেশনা মানার বিষয়টি এখন অপ্রাসঙ্গিকই মনে হবে! প্রসঙ্গটা তুললে উল্টো প্রশ্ন উঠবে—লেগ স্পিনার বাদ দেন, জাতীয় দলের কোন স্পিনার নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন?

আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় সাকিব আল হাসান নেই। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম সুযোগ পেয়েছেন ৩টি ম্যাচ। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলেছেন নাঈম হাসানও। যাকে দেখে বলা হচ্ছিল লেগ স্পিনার নিয়ে বাংলাদেশ দলের হাহাকার বুঝি ঘুচল—সেই আমিনুল ইসলাম বিপ্লব খুলনার হয়ে খেলেছেন মাত্র ২ ম্যাচ। আরাফাত সানি খেলেছেন ৩ ম্যাচ। সে তুলনায় মেহেদী হাসান মিরাজই সবচেয়ে বেশি সুযোগ পেয়েছেন। খুলনা যে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে প্রতিটির একাদশে ছিলেন ২২ বছর বয়সী এ অফ স্পিনার।

স্পিনারদের পারফরম্যান্স এতটাই বিবর্ণ, প্রায় মাঝ পথ পেরোনো টুর্নামেন্টে সেরা ১৫ বোলারের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো স্পিনারই নেই। জাতীয় দলের বাইরে ঢাকা প্লাটুনের অফ স্পিনার মেহেদী হাসানের বোলিং যা একটু বলার মতো, ৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৫ উইকেট। অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার অলক কাপালিও খারাপ করছেন না, ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৪ উইকেট। বিসিবির নির্বাচকেরা যদি এখন পাকিস্তান সফরের টি-টোয়েন্টি দল করতে বসেন, স্পিনার বাছাই করতে নিশ্চিত তাঁদের গলদঘর্ম অবস্থা হবে! এক সঙ্গে সবাই ছন্দ হারিয়ে ফেললে কাকে বেছে নেবেন তাঁরা? মিরাজ এখনো উইকেটের দেখা পাননি, ইকোনমি ৭.১২। তাইজুল ৩ ম্যাচে পেয়েছেন ১ উইকেট, ইকোনমি ৮.১৬। আরাফাত সানি ৩ ম্যাচে উইকেটশূন্য, ইকোনমি ৯.৪৫। গত ভারত সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ভালো খেলা আমিনুল ২ ম্যাচে পেয়েছেন ১ উইকেট, ইকোনমি ৯.১৬। নাঈম হাসান ৩ ম্যাচে নিয়েছেন ২ উইকেট, ইকোনমি ৭.৬৬।

বাংলাদেশ দলের কোনো স্পিনার এখনো আলো ছড়াতে পারেননি এই বিপিএলে। উইকেটের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের স্পিনারদের ভালো করতে পারেন কমই। এবার বেশির ভাগ ম্যাচ হচ্ছে ন্যাড়া, ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য না থাকলে এ ধরনের উইকেটে ভালো করা কঠিন। শুধু বাংলাদেশের স্পিনাররাই নন, বিদেশি স্পিনাররাও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না টুর্নামেন্টে। স্পিনারদের মধ্যে কুমিল্লার মুজিব উর রহমান যা একটু সফল—৬ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে আছেন তিনি। স্পিনারদের তুলনায় পেসাররাই বেশি সফল হচ্ছেন। দুর্দান্ত বোলিংয়ে যেমন চমকে দিয়েছেন মেহেদী হাসান রানা। ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে আছেন সবার ওপরে। ৬ ম্যাচ ৮ উইকেট নিয়ে বাঁহাতি ওপেনার সৌম্য সরকার পর্যন্ত চলে এসেছেন সেরা পাঁচে!

বিপিএলে যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছে আইসিসির টুর্নামেন্ট কিংবা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বেশির ভাগ ম্যাচ খেলা হয় এমন ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেই। কিন্তু দেশের মাঠে হওয়া একটা টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশের স্পিনাররা যদি নিজেদের মেলে ধরতে না পারেন, বিদেশের মাঠে কিংবা বড় মঞ্চে আলো ছড়ানোর আশা বাংলাদেশ পাবে কী করে? টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে চার-ছক্কার বৃষ্টি হবেই। এ রান উৎসবে যে স্পিনার দুর্দান্ত বোলিং করতে পারেন, তাঁকে নিয়েই তো দেখা যায় বড় স্বপ্ন।