'কানেরিয়া টাকার জন্য যেকোনো কথা বলতে পারে'

ইনজামাম উল হক ও জাভেদ মিয়াঁদাদ। এএফপি ফাইল ছবি
ইনজামাম উল হক ও জাভেদ মিয়াঁদাদ। এএফপি ফাইল ছবি
>

দানিশ কানেরিয়া তাঁর ধর্মবিশ্বাসের কারণে পাকিস্তান জাতীয় দলের কিছু ক্রিকেটারের কাছ থেকে বৈষম্যমূলক আচরণ পেয়েছেন, শোয়েব আখতারের এমন মন্তব্যের পর হইচই শুরু হয়েছে দেশটির ক্রিকেটমহলে। কানেরিয়ার সমালোচনা করেছেন ইনজামাম উল হক এবং জাভেদ মিয়াঁদাদ

দানিশ কানেরিয়াকে নিয়ে শোয়েব আখতারের ‘বোমা’য় নড়েচড়ে বসেছে পাকিস্তান ক্রিকেট। দেশটির জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম উল হকের দাবি, তিনি নেতৃত্বে থাকতে অমুসলিম কোনো ক্রিকেটার কখনোই বাজে আচরণের শিকার হননি। এদিকে পাকিস্তানের আরেক সাবেক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ দুষেছেন কানেরিয়াকেই। তাঁর মতে, টাকার জন্য কানেরিয়া যেকোনো কথাই বলতে পারে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘পিটিভি স্পোর্টস’-এর ‘গেম অন হ্যায়’ অনুষ্ঠানে বোমাটা ফাটান শোয়েব। কিংবদন্তি এ পেসার জানান, পাকিস্তানের কিছু ক্রিকেটার কানেরিয়ার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। কানেরিয়ার ধর্মবিশ্বাসের কারণে তার সঙ্গে খেতে চাইতেন না কিছু খেলোয়াড়। পরের শোয়েবের দাবির পক্ষে সবকিছু স্বীকার করে সমর্থন জানান কানেরিয়া। পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি কানেরিয়া দেশটির জাতীয় দলে খেলা দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার। তাঁর মামা অনিল দালপুত ছিলেন পাকিস্তান দলে খেলা প্রথম হিন্দু ক্রিকেটার।

শোয়েব এমন তথ্য জানানোর পর হইচই পড়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেটমহলে। দেশটির ক্রিকেট সাংবাদিক সাজ সাদিক এ নিয়ে টুইটারে প্রকাশ করেছেন ইনজামামের মন্তব্য। সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘কানেরিয়া যে অধিনায়কের অধীনে বেশি সময় খেলেছে সে ব্যক্তিটি আমি। তখন কখনোই মনে হয়নি দলে এমন কিছু আছে যেমন, অমুসলিম কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কেউ বাজে ব্যবহার করবে। দলে একবারের জন্যও এমন কিছু চোখে পড়েনি।’

ইনজামামের আরও তিনটি মন্তব্য প্রকাশ করেছেন সাজ সাদিক। দ্বিতীয় মন্তব্যে ইনজামামের ভাষ্য, ‘দানিশ কানেরিয়ার কথা আমি মেনে নিতে পারছি না যে, আমরা ছোট হৃদয়ের, কাউকে মেনে নিতে পারি না। পাকিস্তানিরা বড় হৃদয়ের, আমরা সবাইকে হৃদয়ে স্থান দিতে পারি।’ পরের মন্তব্যে ইনজামাম বলেছেন, ‘শারজার মতো কোথাও সফরে গেলে ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা এক হোটেলে থেকেছে, একে-অন্যের কামরায় গিয়ে আড্ডা দিয়েছে, একসঙ্গে খাবার খেয়েছে। তাই “একসঙ্গে খায়নি” এমন কিছু কখনোই চোখে পড়েনি।’

শেষ মন্তব্যে মুশতাক আহমেদের উদাহরণ টেনেছেন ইনজামাম, ‘মুশতাক আহমেদ আমার শৈশবের ভালো বন্ধু। কিন্তু তার বদলে আমি কানেরিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছি কারণ সে ছিল পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আর মুশতাক আমার নেতৃত্বেই দল থেকে বাদ পড়েছিল। তাই শুধু নামাজ পড়লেই দলে নেওয়া হবে এমন কোনো কিছুই ছিল না।’

ইনজামামের মন্তব্য টুইটে প্রকাশ করেছেন সাজ সাদিক। ছবি: টুইটার
ইনজামামের মন্তব্য টুইটে প্রকাশ করেছেন সাজ সাদিক। ছবি: টুইটার

সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) মিয়াঁদাদ বলেছেন, ‘তাদের কী উদ্দেশ্য বুঝতে পারছি না। তবে কানেরিয়ার ব্যাপারে বললে এটুকু জানি, সে টাকার জন্য যেকোনো কিছুই বলতে পারে। ক্রিকেটে তাকে বিশ্বাস করার কোনো জায়গা নেই।’ ২০০০ সালে পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষিক্ত কানেরিয়া ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে জড়িয়ে পড়েন স্পট ফিক্সিংয়ে। ইসিবি তাঁকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে। ২০১০ সালের পর পাকিস্তানের হয়ে আর খেলার সুযোগ পাননি ৩৯ বছর বয়সী এ লেগ স্পিনার।

কানেরিয়ার স্পট ফিক্সিংয়ে জড়ানোর প্রসঙ্গ তুলে মিয়াঁদাদের যুক্তি, ‘ক্রিকেটে দুর্নীতি করে আজীবন নিষিদ্ধ হওয়া কাউকে বিশ্বাস করবেন কীভাবে? দেশের মুখে কালিমা লেপেছে কে? ২০০০ সালের শুরুর দিকে আমি প্রধান কোচ ছিলাম, তখন কানেরিয়ার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এমন একটা ঘটনাও মনে করতে পারছি না।’ মিয়াঁদাদ আরও বলেন, ‘পাকিস্তানই তাকে অনেকভাবে পরিচিতি ও স্বীকৃতি দিয়েছে। সে ১০ বছর টেস্ট খেলেছে। তার ধর্ম নিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে এটা সম্ভব হলো কীভাবে?’

শুধু ইনজামাম ও মিয়াঁদাদই নয়, মুখ খুলেছেন মোহাম্মদ ইউসুফও। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলে অভিষিক্ত হওয়ার সাত বছর পর খ্রিষ্টান থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন সাবেক এ ব্যাটসম্যান। টুইটারে তিনি মন্তব্য করেন, ‘পাকিস্তান দলে সংখ্যালঘু খেলোয়াড়দের প্রতি বৈষম্য নিয়ে করা মন্তব্যের নিন্দা করছি। আমি পাকিস্তান দলে খেলেছি এবং সতীর্থ-ম্যানেজমেন্টের ভালোবাসা পেয়েছি।’