ইনজামাম বললেন, পাকিস্তানিরা বড় হৃদয়ের মানুষ

দানিশ কানেরিয়া ও ইনজামাম-উল-হক। যখন একসঙ্গে খেলতেন। এএফপি ফাইল ছবি
দানিশ কানেরিয়া ও ইনজামাম-উল-হক। যখন একসঙ্গে খেলতেন। এএফপি ফাইল ছবি
>

দানিশ কানেরিয়াকে নিয়ে শোয়েব আখতারের বিস্ফোরক মন্তব্যের পর তোলপাড় চলছে পাকিস্তানের ক্রিকেটমহলে।

দানিশ কানেরিয়াকে তোলপাড় চলছে পাকিস্তানের ক্রিকেটমহলে। দেশটির সাবেক পেসার শোয়েব আখতার এর আগে টিভি অনুষ্ঠানে বলেছেন, পাকিস্তানের কিছু ক্রিকেটার কানেরিয়ার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। কানেরিয়ার ধর্মবিশ্বাসের কারণে তার সঙ্গে খেতে চাইতেন না কিছু খেলোয়াড়। এরপর থেকে শুরু হয়েছে হইচই। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হকের দাবি, তিনি নেতৃত্বে থাকতে অমুসলিম কোনো ক্রিকেটার কখনোই বাজে আচরণের শিকার হননি। ধর্মবিশ্বাস যাই হোক, পাকিস্তানিদের হৃদয় যে বড় তা নিয়ে উদাহরণও দিয়েছেন কিংবদন্তি এ ব্যাটসম্যান।

ইনজামামের উদ্ধৃতি প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’। কানেরিয়া পাকিস্তানের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি খেলেছেন ইনজামামের অধীনে। এ কথা ইনজামাম নিজেই জানিয়ে জাতীয় দলে উদারমনা সংস্কৃতির একটি উদাহরণও টেনেছেন, ‘ইউসুফও কিন্তু দলে ছিল, সে ছিল অমুসলিম। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সে মুসলিম হয়ে মোহাম্মদ ইউসুফ হয়েছে। তার আগে ইউসুফ ইয়োহানা থাকতে সে কখনোই বাজে কোনো অভিজ্ঞতা পায়নি কিংবা ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও এমন কিছু ঘটেনি। এমন কিছু ঘটলে আমার মনে হয় না সে ধর্মান্তরিত হতো।’

অবসর নেওয়ার পর কোচিং ও নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করা ইনজামাম মনে করেন, পাকিস্তানিরা বড় হৃদয়ের মানুষ। এর পক্ষেও উদাহরণ দিয়েছেন ৪৯ বছর বয়সী সাবেক এ ব্যাটসম্যান, ‘২০০৪ সালে ১৫ বছর পর পাকিস্তান সফরে এসেছিল ভারতীয় দল। পাকিস্তানিরা তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনাই জানিয়েছিল। খাবার খেতে, কেনাকাটা করতে কিংবা ট্যাক্সি করে তারা (ভারতীয় ক্রিকেটার) যেখানেই গিয়েছে কেউ টাকা নেয়নি। এক বছর পর আমরা ভারত সফরে যাই। এ দুটি সফরেই আমি অধিনায়ক ছিলাম। ভারতের কাছ থেকেও আমরা একই অভ্যর্থনা পেয়েছি। আতিথেয়তা দিতে তাদের দরজা খোলা ছিল। তারা খাবার তৈরি করেছে আমাদের জন্য, কেনাকাটায় এক পয়সাও নেয়নি।’

এর আগে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘পিটিভি স্পোর্টস’-এর ‘গেম অন হ্যায়’ অনুষ্ঠানে শোয়েব জানান, পাকিস্তানের কিছু ক্রিকেটার কানেরিয়ার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। নিষিদ্ধ থাকা এ লেগির ধর্মবিশ্বাসের কারণে তার সঙ্গে খেতে চাইতেন না কিছু খেলোয়াড়। পরে শোয়েবের দাবির পক্ষে সব স্বীকার করে সমর্থন জানান কানেরিয়া। পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি কানেরিয়া দেশটির জাতীয় দলে খেলা দ্বিতীয় হিন্দু ক্রিকেটার। তাঁর মামা অনিল দালপুত ছিলেন পাকিস্তান দলে খেলা প্রথম হিন্দু ক্রিকেটার।

কানেরিয়ার মন্তব্য নিয়ে টুইট করেছেন সাজ সাদিক। ছবি: টুইটার
কানেরিয়ার মন্তব্য নিয়ে টুইট করেছেন সাজ সাদিক। ছবি: টুইটার

‘একসঙ্গে খেতে না চাওয়া’র তথ্যটি খণ্ডন করে ইনজামামের মন্তব্য, ‘একসঙ্গে খেতে পছন্দ না করার যে দাবি করা হয়েছে, সেটি নিয়ে বলছি—২০০৫ সালে ভারত সফরের আগে একটি শুটিংয়ের জন্য আমি কলকাতায় যাই। ভারতীয় দল থেকে সেখানে (সৌরভ) গাঙ্গুলী ছিল। তার (শুটিংয়ের) আগে আমি ও শচীন মিলে সৌরভের একটি রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করেছিলাম। সৌরভ তার রেস্তোরাঁ থেকে আমাকে খাবার পাঠাত এবং আমি তা খেয়েছি।’

পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে কথোপকথনের একটি উদাহরণও টেনেছেন ইনজামাম, ‘প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ একবার আমাদের দাওয়াত করলেন। সেখানে তিনি আমাকে বললেন, শুনেছি যেসব ক্রিকেটার নামাজ পড়ে, দাঁড়ি রাখে তারা ছাড়া তুমি অন্য কাউকে দলে টানো না। এ কথা শুনে হেসে ফেলি। মোশাররফ সাহেব আমাকে ভালোবাসতেন, জানতে চাইলেন আমার জবাব দিচ্ছি না কেন? বললাম, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর ক্রিকেট ক্রিকেটের জায়গায়। এ দুটো বিষয় কখনো মেশে না আর আমার তাতে বিশ্বাসও নেই। যদি মনে করি আমি দ্বীনের পথে আছি তাহলে আমার দ্বীন বলে, বিচারের সময় কে মুসলিম কে অমুসলিম তা না দেখে বিচার করতে হয়।’

২০০০ সালে পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষিক্ত কানেরিয়া ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে জড়িয়ে পড়েন স্পট ফিক্সিংয়ে। ইসিবি তাঁকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করে। ২০১০ সালের পর পাকিস্তানের হয়ে আর খেলার সুযোগ পাননি ৩৯ বছর বয়সী এ লেগ স্পিনার। এদিকে কানেরিয়ার মন্তব্য টুইটারে প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের ক্রিকেট সাংবাদিক সাজ সাদিক, ‘আমি দেশ বিক্রি করিনি কিংবা দেশ বেচে টাকা নিইনি। যারা দেশ বেচে টাকা নিয়েছে কিংবা জেলেও গিয়েছে তাদের দলে ফেরানো হয়েছে। ফিক্সিংয়ে যাদের নাম এসেছে তাদের টিভি চ্যানেলে কিংবা পিসিবিতে ডাকা হয়।’

কানেরিয়া বর্তমানে আর্থিকভাবে মোটেও ভালো নেই। এর আগে পাকিস্তানের ক্রিকেট সংগঠক থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছেও সাহায্য চেয়েছেন তিনি। সাজ সাদিকের টুইটে এ নিয়ে আরেকটি মন্তব্য রয়েছে কানেরিয়ার, ‘গত ১০ বছর ধরে বেকার বসে আছি। কোনো আয়-রোজগার নেই। কে সাহায্য করেছে? আমার তো পরিবার আছে। কে সাহায্য করবে? দয়া করে টিভি চ্যানেলে গিয়ে আমাকে নিয়ে মিথ্যা না বলে সত্য কথাটা বলুন।’