৩৯ ক্লাবের মন ভেঙে হরলান্ড গেলেন ডর্টমুন্ডে

২০২৪ সাল পর্যন্ত হরলান্ডকে নিজেদের করে নিল ডর্টমুন্ড। ছবি: ডর্টমুন্ড টুইটার
২০২৪ সাল পর্যন্ত হরলান্ডকে নিজেদের করে নিল ডর্টমুন্ড। ছবি: ডর্টমুন্ড টুইটার

মাত্র ১৯ বছর বয়স। কিন্তু ফুটবলকে ধ্যানজ্ঞান মানা এক ফুটবলারের ঘুম ভাঙে চ্যাম্পিয়নস লিগের সুরে! মাঠেও নিজের দক্ষতা এমনভাবে দেখালেন যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে নেমে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিলেন আর্লিং ব্রট হরলান্ড। এমনই অবস্থা চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে লিভারপুল-রেড বুল সালজবুর্গের ম্যাচে হরলান্ড কেমন খেলেন, সেটা দেখার জন্য মাঠে উপস্থিত ছিলেন চল্লিশটা ক্লাবের স্কাউট!

এবারই প্রথম খেলতে এসেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, এসেই করেছেন বাজিমাত। গ্রুপপর্বের প্রথম পাঁচ ম্যাচেই করেছেন আট গোল। এর মধ্যে আবার একটা হ্যাটট্রিকও আছে। বড় ক্লাবগুলো তো তাঁকে নিয়ে টানাটানি করবেই! কিন্তু দৌড়ে এগিয়ে ছিল মাঝারি মানের দুটি ক্লাব, রেড বুলেরই আরেক দল লাইপজিগ ও তাদের জার্মান প্রতিপক্ষ বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। দুই দলেরই কোচ তরুণ প্রতিভা সামলাতে দক্ষ। একদিকে নাগেলসম্যান, ওদিকে ফাভরে। শেষ পর্যন্ত ফাভরেকেই মনে ধরেছে হরলান্ডের। নিজের ভবিষ্যৎ ক্লাব হিসেবে ডর্টমুন্ডকে বেছে নিয়েছেন এই স্ট্রাইকার। ২০ মিলিয়ন ইউরোতে দলবদল হয়েছে। যদিও অনেক বড় ক্লাব এর দ্বিগুণ দিয়ে হলেও হরলান্ডকে পাওয়ার জন্য বসে ছিল।

হরলান্ডের শারীরিক সক্ষমতা দেখলে মনেই হবে না তাঁর বয়স এত কম। উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি, শক্তির দিক দিয়েও বেশ এগিয়ে আছেন এই তরুণ। সাধারণত লম্বা-চওড়া শক্তিশালী স্ট্রাইকারদের মুভমেন্ট অত ভালো হয় না, কোনোভাবে ডি-বক্সের মধ্যে গোলটাই করতে পারেন, গোল করা ছাড়া দলের আক্রমণ রচনায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। কিন্তু হরলান্ডের সে ক্ষমতাও আছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান ম্যানেজার ওলে গুনার সুলশার যখন নরওয়ের ক্লাব মল্ডের ম্যানেজার ছিলেন, হরলান্ড তখন সে ক্লাবে খেলতেন। তাই হরলান্ডকে পাওয়ার আশা দেখছিল ইউনাইটেডের সমর্থকেরা। কিন্তু বড় ক্লাবে গিয়ে এখনই চাপের মুখে না পড়ে আগে ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিতেই ডর্টমুন্ডে যাচ্ছেন হরলান্ড।

তরুণ প্রতিভাদের তারকা বানানোর সুনাম আছে ডর্টমুন্ডের। রবার্ট লেভানড্‌ফস্কি, পিয়েরে অবামেয়াং, ওসমান ডেমবেলে বা বর্তমানে জাডোন সাঞ্চোরা এরই প্রমাণ। তাই জুভেন্টাসের মতো ক্লাবের আগ্রহকেও গুরুত্ব দেননি হরলান্ড। অবশ্য সুপার এজেন্ট মিনো রাইওলা পরবর্তী আরও অর্থশালী ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার সময় বাড়তি কমিশন পাওয়ার আশাতেও ডর্টমুন্ডকে বেছে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

হরলান্ড অবশ্য ডর্টমুন্ডের সিগনাল ইদুনা পার্কে খেলার লোভ আর নিজের দক্ষতার উন্নতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন, ‘আমি ক্লাব ও খেলা বিভাগের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছি। বিশেষ করে হান-জোয়াকিম ওয়াতস্কি, মাইকেল যোর্ক ও লুসিয়ান ফাভরের সঙ্গে। প্রথম তখন মনে হচ্ছিল ক্লাব যদি বদলাই তবে এই পথেই যাব এবং ডর্টমুন্ডের অবিশ্বাস্য এই আবহে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে খেলব। আম্মার আর তর সইছে না।’

ডর্টমুন্ডেরও যে তর সইছে না সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরই মাঝে এই দলবদলকে ক্লাবের টুইট অ্যাকাউন্ট বলছে, ‘বড় দিনের ইচ্ছাপূরণ।’ মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরোতে ইউরোপের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত তরুণ স্ট্রাইকারকে পাওয়াকে অবশ্য ইচ্ছাপূরণ বলা যেতেই পারে!