গোলের খাতা খুলেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা

গোলের পর হামজার উল্লাস। ছবি : এএফপি
গোলের পর হামজার উল্লাস। ছবি : এএফপি
>

পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার পর কখনো গোল করা হয়ে ওঠেনি লেস্টার সিটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তারকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরীর। গত রাতে সে আক্ষেপটাও মিটেছে। নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে ৩-০ গোলে হারানোর ম্যাচে দলের হয়ে শেষ গোলটা করেছেন হামজা

যে পজিশনে খেলেন, সে পজিশনে থেকে গোল করা একটু কষ্টকরই বটে।

ভেবে দেখুন, জীবনে কাসেমিরো, সার্জিও বুসকেটস, এনগোলো কান্তে, জেনারো গাত্তুসো, জিলবার্তো সিলভা, ক্লদ ম্যাকেলেলে - এদের কয়বার গোল করতে দেখেছেন? রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডারদের কাজটাই এমন। আগে ঘর সামলাও, তারপর দলের আক্রমণ রচনায় সাহায্য কর। সাহায্য পেয়ে আক্রমণভাগে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে থাকা খেলোয়াড়েরা যেন গোল করতে পারে।

লেস্টার সিটিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হামজা চৌধুরীর ভূমিকাটা এমনই। দুই সেন্টারব্যাকের মধ্যে থেকে দলের রক্ষণভাগকে অটুট রাখা ও দুই ফুলব্যাককে ওপরে ওঠার 'লাইসেন্স' দেওয়াটাই তাঁর কাজ মূলত। গোল আর করা হয়ে ওঠে কোথায়? যে কারণে ২০১৭ সালে অভিষেক হলেও এত দিন গোল করা হয়ে ওঠেনি এই তারকার। লিগে অভিষেকের পর ৩৬ ম্যাচ খেলেছেন, এফএ কাপ, কারাবাও কাপের ম্যাচগুলো তো আছেই। কখনই গোল করা হয়ে ওঠেনি। পেশাদার ক্যারিয়ারের ৩৭ তম ম্যাচে এসে সে আক্ষেপ ঘুচল হামজার। গত রাতে লিগের ম্যাচে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে গোল করেছেন তিনি। লেস্টারও জিতেছে ৩-০ গোলে। বাকি দুই গোল আরেক ইংলিশ মিডফিল্ডার জেমস ম্যাডিসন ও স্প্যানিশ উইঙ্গার আয়োজে পেরেজের।

হামজা গোলটা করেছেনও দুর্দান্ত। ৮৭ মিনিটে গোলের প্রায় ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া জোরালো এক শটে চমৎকার গোলটা করেন হামজা। প্রথম গোল হিসেবে এর থেকে সুন্দর গোল হয়তো হামজা নিজেও চাননি!

২০১৫-১৬ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লেস্টার সিটিতে এখন প্রায়ই একাদশে দেখা যায় হামজাকে। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জায়গা করে নিয়েছেন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে। অনূর্ধ্ব-২১ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। ঝাঁকড়া চুলের হামজা এখন ইংলিশ যুব দলের গুরুত্বপূর্ণ মিডফিল্ডার। অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলা মানে মূল জাতীয় দল থেকে এক পা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন ‘বাংলাদেশের’ হামজা। জন্ম বাংলাদেশে না হলেও বাঙালি পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে বাংলার আলো-বাতাস সঙ্গী করে বড় হয়েছেন। বাংলাদেশে তাঁদের বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামে। ছয় মাস বয়স থেকে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু হয় হামজার। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে আসা হয়েছে ২০ বারের মতো। সর্বশেষ এসেছিলেন চার বছর আগে। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর চাপ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত বাংলাদেশে আসা-যাওয়া কম।

সে হামজাই নতুন বছর শুরু করলেন গোল দিয়ে। কে জানে, লেস্টারের নিয়মিত রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার উইলফ্রিয়েড এনদিদি বা ইংল্যান্ড জাতীয় দলের মূল রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইসের জায়গায় এই বছর থেকেই নিয়মিত হামজাকে দেখা যায় কি না!