কী চেয়ে কী পেল সৌদি আরব
>সুপারকোপার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা মুখোমুখি হবে, মেসি-রামোসদের দেখার জন্য উপচে পড়বে কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস স্টেডিয়াম, এমনটাই আশা ছিল সৌদি কর্তাদের। অ্যাটলেটিকোর জন্য সে আশা পূরণ হলো কই!
সৌদি দর্শকদের ঘরের মাঠে এল ক্লাসিকো দেখার সাধ অন্তত এই বছর পূরণ হলো না।
নিজ দেশের দর্শকদের মাঝে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চেয়ে চেয়েছিলেন সৌদি কর্তারা। যে কারণে তিন বছর স্পেনে নয়, বরং সৌদিতে সুপারকোপা আয়োজিত হবে—এমন একটা চুক্তি স্প্যানিশ ফেডারেশনের সঙ্গে করেছে তাঁরা। প্রতি বছর সুপারকোপা আয়োজন করার জন্য ৪০ মিলিয়ন ইউরো করে পাবে স্প্যানিশ ফেডারেশন, মোটমাট ১২০ মিলিয়ন ইউরো।
সুপারকোপায় আগে যে ফরম্যাট ছিল, সে ফরম্যাট মানলে এবার টুর্নামেন্টটা খেলাই হতো না রিয়াল মাদ্রিদের। সুপার কোপা আগে ছিল দুই লেগের ম্যাচ, লিগের চ্যাম্পিয়ন আর কোপা দেল রের চ্যাম্পিয়ন মুখোমুখি হতো সুপারকোপায়। কখনো এই দুই চ্যাম্পিয়ন যদি একই দল হলে, সে ক্ষেত্রে কোপা দেল রের আরেক ফাইনালিস্ট খেলত সে ম্যাচ। সেটি হতো মৌসুমের শুরুতে।
এবার তা ঘটেনি। মৌসুম এখন মাঝপথে। এবার লা লিগা ও কোপা ডেল রের দ্বিতীয় সেরা দলকেও এ টুর্নামেন্টে সংযুক্ত করা হয়েছে। লা লিগায় দ্বিতীয় হওয়ায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ সুযোগ পেয়েছে। আর লা লিগা চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা কোপা দেল রের ফাইনাল খেলায় সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদকে বেছে নেওয়া হয়েছে সেমিফাইনাল খেলা দুই দলের মধ্যে বেশি সফল দল হওয়ায়। সহজ-সরল নিয়ম বাদ দিয়ে এত পেঁচিয়ে দলগুলোকে কেন সেমিফাইনাল খেলিয়ে ফাইনালে তুলতে হবে, সেটা সৌদি বা স্প্যানিশ ফেডারেশন না বললেও বুঝে নিতে সমস্যা হয় না।
ফাইনালে স্পেনের ইতিহাসের দুই সফল দল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা মুখোমুখি হবে, সৌদির ফুটবল পাগল দর্শকেরা সে ম্যাচ দেখে উন্মাতাল হবেন, উপচে পড়বে স্টেডিয়াম—সৌদি কর্তাদের আশা ছিল সেটাই। সে আসার অর্ধেক রিয়াল মাদ্রিদ সফলভাবে পূরণ করলেও আটকে গেছে বার্সেলোনা। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে গত রাতে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ৩-২ গোলে হেরেছে তারা। আর হেরে গিয়ে বলতে গেলে সৌদির দর্শকদের আশায় একদম পানিই ঢেলে দিয়েছেন মেসি-সুয়ারেজরা।
স্পেনের সবচেয়ে সফল দুই ফুটবল দলকে নিজের দেশে এনে সুপারকোপা খেলিয়ে ব্যবসা করাটাই যে সৌদির মূল উদ্দেশ্য ছিল, সেটা বুঝেছেন বার্সেলোনার কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দেও। সেমিফাইনালের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘মূল কথা হলো ফুটবল ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। আর ব্যবসা করলে তো আয় করতেই হবে। এ কারণেই আমরা এখানে (সৌদি আরব)। আমরা যে সংস্করণে মানিয়ে নিয়েছিলাম তার চেয়ে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। এটা ছিল মৌসুমের প্রথম শিরোপা। আমার কাছে তা ভালোই ছিল। পাল্টানোর পর দেখা যাক কী ঘটে। চারটা দল নিয়ে খেলা ভালোই তবে ক্রীড়াসুলভ দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা ভালো তা আমি জানি না।’
সেমিফাইনালেও বোঝা গেছে রিয়াল ও বার্সার জনপ্রিয়তা। মাঠে যখনই মেসির পায়ে বল যাচ্ছিল, চিৎকার করে সমর্থন দিচ্ছিলেন সৌদির দর্শকেরা। ভ্যালেন্সিয়া বা অ্যাটলেটিকোর মতো দলগুলোকে যেন তাদের থোড়াই কেয়ার! মাঠে এসব দলগুলোর বলতে গেলে কোনো সমর্থনই ছিল না। গতকাল ম্যাচের শেষেও মাঠে অনাহূত দর্শক ঢুকে গিয়েছিলেন, মেসির সঙ্গে দেখা করার জন্য। দুই দলের জনপ্রিয়তা সৌদিতে যে কতটুকু, এই উদাহরণগুলোর মাধ্যমেই বোঝা যায়।
কিন্তু হাজারো চেষ্টা করেও জনপ্রিয় এই দুই দলকে অন্তত এই বছরে সুপারকোপার ফাইনালে খেলাতে পারল না সৌদি আরব। দেখা যাক, সামনের দুই মৌসুমে সৌদি দর্শকদের আশা পূরণ হয় কি না!