অবসর নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মাশরাফি

অবসর নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
অবসর নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো

মাশরাফি বিন মুর্তজা বাংলাদেশ দলের হয়ে আরও খেলা চালিয়ে যাবেন নাকি অবসর নেবেন—প্রসঙ্গটা আবার সামনে এসেছে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি সামনে রেখে। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক আজ বিকেলে ঢাকা-রংপুরের ম্যাচ শেষে খোলাখুলিই জানিয়েছেন অবসর নিয়ে নিজের ভাবনা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রাজনীতিতে নাম লেখানোর পরই মাশরাফি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন, ‘বিশ্বকাপকে ধরে পরিকল্পনা করছিলাম। আর সাত থেকে আট মাস বাকি আছে। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরের সাড়ে চার বছরে জানি না আমার অবস্থা কী হবে।’ তাঁর এই মন্তব্যের পর একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বকাপের পরই হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন মাশরাফি।

সেটা না হওয়ায় বিশ্বকাপের পর যে গুঞ্জনটা শোনা গেছে, দেশের মাঠে অবসর নেবেন মাশরাফি। গত সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশেষ সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ককে বিদায় দেওয়া হবে, এমনও শোনা গেছে। শেষ পর্যন্ত সবই গুঞ্জন হিসেবে থেকে গেছে। যেহেতু অবসর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি, নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে মাশরাফি থাকবেন কি থাকবেন—এ আলোচনায় সিদ্ধান্তটা তাঁর ওপরই ছেড়ে দিয়েছে বিসিবি। আজ বিপিএলের ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অবসর নিয়ে বলা মাশরাফির কথা হুবহু তুলে দেওয়া হলো:

প্রশ্ন: গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল, তখন আপনি অবসরের জন্য সময় নিয়েছিলেন। আবার ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ে আসছে ওয়ানডে সিরিজ আছে। একটা গুঞ্জন আছে অভিমান করে আপনি মাঠ থেকে বিদায় নেবেন না...
মাশরাফি: অভিমান…আপনাদের (সংবাদমাধ্যম) সঙ্গে এত দিন মিশেছি, এগুলো (অভিমান) নিয়ে চলিনি। আমি যখন (আন্তর্জাতিক) টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছি অনেক কারণই তো আপনাদের বলতে পারতাম। মনে হয় না কোনো কারণ কখনো বলেছি। অভিমান নিয়ে আমি চলি না। অবসরের কথা যেটা বললেন, আমার জায়গা থেকে বলতে পারি সবাই (এরই মধ্যে) আমাকে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে! আমি হয়তো শুধু খেলেই যাচ্ছি। আমি খেলাটা উপভোগ করছি। মাঠ থেকে অবসর নেব কি নেব না সেটা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। নিজের যদি ওরকম মনে হয়, ক্রিকেট বোর্ড যদি মনে করে চিন্তা ভাবনা করব। খেলাটা আমি যখন শুরু করেছিলাম তখন জাতীয় দল লক্ষ্য করে খেলিনি। কেউই শুরুটা এভাবে করে না। আমি এখন ওই জায়গায় ফিরে গিয়েছি। এখন বিপিএল খেলছি, উপভোগ করছি। সামনে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলব। সব সময় জাতীয় দলে খেলতে হবে, জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করলেই আপনি খেলোয়াড় বিষয়টা তা না। এখন হয়তো ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। কখনো ভাবি না যে মাঠ থেকে আমাকে সবাই বিদায় দেবে, ফুলের তোড়া নিয়ে আসবেন। আমি যেরকম আছি ভালো আছি, খুশি আছি। খেলা উপভোগ করছি। জাতীয় দল অনেক দূরের ব্যাপার।

প্রশ্ন: জাতীয় দলে যদি খেলার সুযোগ থাকে, চালিয়ে যেতে চান?
মাশরাফি: এখানে নির্বাচনের ব্যাপার আছে। বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ১ উইকেট পাওয়ার পরে ধরেই নিয়েছি যে জাতীয় দলের স্কোয়াডে নেই। নির্বাচকেরা যদি মনে করে আমাকে সুযোগ দেবে আমি আমার সেরাটা দিতে চেষ্টা করব। ৮ ম্যাচে ১ উইকেট নিয়ে এই মুহূর্তে কীভাবে বলি জাতীয় দলে সুযোগ পাব?

প্রশ্ন: আপনি তো বিশ্বকাপের শ্রীলঙ্কা সফরের বাংলাদেশ দলে ছিলেন...
মাশরাফি: শ্রীলঙ্কা সিরিজে ছিলাম কারণ আমার হয়তো ফেরার একটা সুযোগ ছিল। ওই সিরিজে সাকিবও ছিল না। একটা সুযোগ ছিল আমার জন্য। এরপর আমি আর খেলার ভেতরে নেই। আমি তো জানি না নির্বাচকদের কী চিন্তা-ভাবনা আছে। আমার সঙ্গে সেভাবে আলোচনা হয়নি। আমার সঙ্গে আসলে কারও কথা হয়নি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে যেভাবে চিন্তা করা উচিত ওভাবে খেলছি। যদি ওয়ানডে আসে, তাঁরা মনে করেন আমার খেলা উচিত তাহলে অবশ্যই খেলব। দিন শেষে আমার কাছে ক্রিকেটই সব। যেখানেই যা কিছু করি ক্রিকেটই আমার কাছে সব। ক্রিকেট এখনো মন দিয়ে খেলছি। বাদ বাকি নির্বাচকদের ব্যাপার, বোর্ডের সিদ্ধান্ত। অধিনায়কত্ব নিয়ে কী হবে তাঁরা যদি আমাকে বলেন, হয়তো আমার মতো চিন্তা করব।

প্রশ্ন: যদি নির্বাচকেরা জানতে চান, তুমি কি খেলতে চাও—কী বলবেন?
মাশরাফি: এখন আমি কী করছি? খেলছিই তো! জিম্বাবুয়ে সিরিজে যখন আমাকে বলেছিল, তখন বলেছিলাম আমি খেলব। আমার বিষয়টা বলতে পারি, আমি খেলতে চাই, খেলাটা ভালোবাসি। এটা জরুরি না যে জাতীয় দলে খেলতে হবে। বোর্ড যদি খেলাতে চায় আমি অবশ্যই খেলব। যাঁরা দায়িত্বে আছেন পারফরম্যান্সের বিষয়টিও ভাববেন।