'বাংলাদেশে মোস্তাফিজের অর্ধেক যদি থাকে, দেখান'

মোস্তাফিজের দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়ানোয় দলের নির্বাচকদের সমালোচনা করেছেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
মোস্তাফিজের দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়ানোয় দলের নির্বাচকদের সমালোচনা করেছেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো

নভেম্বরে ভারত সফরেই মোস্তাফিজুর রহমানের শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকে। বাঁহাতি পেসার ছন্দে নেই, তাঁর বোলিংয়ে আগের ধার নেই, জোর করে তাঁকে খেলানো যাচ্ছে— গত বছরের শেষ দিকে বারবার সমালোচকদের চাবুক ছুটছিল মোস্তাফিজের দিকে।

শুধু সংবাদমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই নয়, মোস্তাফিজকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন স্বয়ং বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশার, যিনি এবার বিপিএলে টেকনিক্যাল উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন তাঁরই দল রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে। বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দাসুন শানাকার হাতে মার খাওয়ার পর গত ১২ ডিসেম্বর হাবিবুল সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘মোস্তাফিজ এক বছর ধরে মিসিং! … সে একটু বেশি অনুমেয় হয়ে যাচ্ছে। এটাই আমার চিন্তা। ব্যাটসম্যানরা ওকে পড়ে ফেলছে যে সে কী করতে যাচ্ছে।’

টুর্নামেন্টে বাজে শুরুর পর সে মোস্তাফিজই এখন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ২০ উইকেট। ইকোনমি যদিও তাঁর আরেকটু ভালো হতে পারত—৭.০১। নিজের দল রংপুর ভালো না করলেও মোস্তাফিজের বিপিএলটা মোটেও খারাপ যায়নি।

মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রশ্ন, যখন বাঁহাতি পেসার ছন্দে ছিল না, তখন তাঁকে নিয়ে কেন প্রকাশ্যে সমালোচনা করবেন মোস্তাফিজের দায়িত্বে থাকা লোকেরা, ‘মোস্তাফিজের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। খারাপ করলে আপনারা সংবাদমাধ্যম কিংবা দর্শকেরা সমালোচনা করতেই পারেন। কিন্তু আমি যখন মোস্তাফিজের দায়িত্বে আছি তখন তাকে নিয়ে কেন সাংবাদিকদের সামনে সমালোচনা করব। আমি বরং তাকে আগলে রাখব। বাংলাদেশে মোস্তাফিজের অর্ধেক (দক্ষতায়) যদি থাকে, দেখান। সে বিশ্বকাপে ২১ উইকেট (২০ উইকেট) পেয়ে এসেছে। হ্যাঁ, সেখানে ওর ইকোনমি রেট কিংবা অনেক কিছু নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। এ জিনিসটা ঠিক করার নিশ্চয়ই পদ্ধতি আছে। পৃথিবীর অনেক খেলোয়াড় ছন্দ হারিয়ে ফেলে। তারা ফিরেও আসে। আমাদের দেশে কেন হচ্ছে না? মোস্তাফিজকে নিয়ে যারা কাজ করছে তারা মাঠে সাংবাদিকদের ভাষায় কথা বলছে। তাঁদের সেই নিজস্ব চিন্তাভাবনা কই যে মোস্তাফিজকে ঠিক করবে।’

খেলোয়াড়দের দায়িত্বে থাকা কেউ যখন প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন, তখন ক্রিকেটারদের মনে কী বিরূপ প্রভাব পড়ে সেটি বললেন মাশরাফি, ‘মোস্তাফিজকে নিয়ে আপনাদের সামনে সমালোচনা করে পরের দিন সকালে মাঠে আবার তাকেই নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। মোস্তাফিজ কি মানুষ না? মনের সমস্যাটা সে ওই মানুষের সঙ্গে আবার কীভাবে শেয়ার করবে? ২৪ ঘণ্টা আগে মোস্তাফিজকে নিয়ে আপনি সমালোচনা করে এসেছেন। খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চাঙা করার দরকার আছে, যেটা করতে দেখি না। এবার বিপিএলে যে বোলাররা ছন্দে আছে তারা আরও দুই ধাপে কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেটি নিয়ে কাজ করা উচিত। সবার মতো তাঁরাও যদি স্রোতে গা ভাসান বাংলাদেশ ক্রিকেট এভাবে চলতে থাকবে।’

মোস্তাফিজকে নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হয়েছে মাশরাফির ক্ষেত্রেও কি সেটা হয়েছে? বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক বললেন, ‘না, আমার ক্ষেত্রে হয়নি। আমার ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে সেটা অগোচরে। মোস্তাফিজেরটা সবার সামনে। আপনারা পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করছেন, সেটা ঠিক আছে, আপনাদের কাজই এটা। দর্শকদের সমালোচনাও ঠিক আছে। তারা চাইবে আমরা যেন ভালো খেলি, না হলে সমালোচনা করবে। মোস্তাফিজের সঙ্গে যখন কাজ করছি আমার কাজ তাকে ঠিক করিয়ে আনা। যখন সমালোচনা করছি তখন আমিই তো সমালোচিত হতে পারি যে আমি কী কাজ করছি। প্রশ্ন হচ্ছে এটাই।’

বিপিএলের বিভিন্ন দলের সঙ্গে থাকা জাতীয় দলের সংশ্লিষ্টরা কি মাশরাফির কথার অর্থ বুঝতে পারছেন?