'মাশরাফি ভাইয়ের মতো আমিও চেষ্টা করব'

মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো অনেক দিন ধরে খেলতে চান মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো
মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো অনেক দিন ধরে খেলতে চান মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো
>বিপিএলে তাঁর শুরুটা ভালো হয়নি। কিন্তু পরে সেটি এতটাই পুষিয়ে নিয়েছেন যে রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে ১২ ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে কাল পর্যন্ত মোস্তাফিজুর রহমানই ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। রংপুরের বিদায়ের পর প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের বাঁহাতি পেসার নিজেকে দেখলেন নিজের আয়নায়

প্রশ্ন: বিপিএলের শুরুতে আপনার পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল। টুর্নামেন্টে ২০ উইকেট নিয়ে কি একটা জবাব দেওয়া হলো?
মোস্তাফিজুর রহমান: না, ঠিক তা নয়। কী করলে আরও ভালো করতে পারি, সেটাই চেষ্টা করেছি। কে কী বলল, এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। তাহলে আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন: এ টুর্নামেন্টে কাটারের ধারটাও কি ফিরে এল?
মোস্তাফিজ: এমন তো নয় যে প্রতি বলেই উইকেট পাব। সবাই এখন আমার বোলিংটা খুব ভালো জানে। তাই বোলিংয়ে আর কী কী যোগ করা যেতে পারে, আমি সেসব নিয়ে কাজ করছি।

প্রশ্ন: কদিন আগে নির্বাচক হাবিবুল বাশারও বলেছেন, আপনি বড় অনুমেয় হয়ে যাচ্ছেন। বোলিংয়ে নতুন কী যোগ করছেন, যেটা ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারে?

মোস্তাফিজ: প্রথম কাজ, ভালো জায়গায় বোলিং করা। এখন ৬৫ শতাংশ করতে পারি। এটা কীভাবে ৮০-৯০ শতাংশে নিতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বৈচিত্র্যগুলোতে যেন ভালো নিয়ন্ত্রণ থাকে। যেটাই করি না কেন, ধরুন স্লোয়ার করলে সেটিও নিখুঁত হতে হবে। ইয়র্কার করলে সেটি প্রত্যাশিত স্পটে, দুর্দান্ত হতে হবে।

প্রশ্ন: বিপিএলে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা তৃপ্ত?
মোস্তাফিজ: সময়টা যে রকম খারাপ যাচ্ছিল, সে হিসেবে খুশি। তবে চাওয়ার তো শেষ নেই। যদি আরেকটু গোছালো হতো তবে আরও ভালো লাগত। টি-টোয়েন্টিতে অনেক সময় ভালো বলেও মার খেতে হয়। কিন্তু বলটা আমি কোথায় করছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: রংপুরের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার দাসুন শানাকার কাছে এক ওভারে চার ছক্কা খাওয়ার পর কী মনে হয়েছিল?
মোস্তাফিজ: ওভারে ছক্কার সংখ্যা কীভাবে দুই, একে নামিয়ে আনা কিংবা ছক্কা একেবারেই না খাওয়া যায়, সেটি শুধু ভেবেছি। ব্যাটসম্যান তো মারতেই পারে। কেউ কি ছয় বলে ছয় ছক্কা খায় না!

প্রশ্ন: অনেকে সমালোচনা নিতে পারেন না। আপনি এটা কীভাবে সামলান?
মোস্তাফিজ: মন খারাপ হয়। কিন্তু খেলাটা তো এমনই। সব সময় ভালো যাবে না। ভালো-খারাপ দুই রকম সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেই ভালো। চিন্তা করি খারাপ সময়কে কীভাবে সুসময়ে রূপান্তর করা যায়।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই সাড়া ফেলেছিলেন। সে কারণেই কি প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে আপনাকে বেশি কথা শুনতে হয়?
মোস্তাফিজ: আসার পরই যেভাবে সফল হয়েছিলাম তাতে একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে যে মোস্তাফিজ বোলিং করলেই ৩-৪টা করে উইকেট পাবে। কিন্তু এটা সব সময় সম্ভব নয়। অভিষেকের পর টানা এক-দেড় বছর দেশের মাঠে খেলেছি। দেশের উইকেট আর দেশের বাইরের উইকেটে পার্থক্য থাকেই। আমার যে শক্তির জায়গা, সেটি সব কন্ডিশনে কাজে না-ও লাগতে পারে। বাধ্য হয়েই নিজের শক্তির জায়গা অনেক সময় কাজে লাগাচ্ছি না। এবার যেমন বিপিএলে অনেক ব্যাটসম্যান ভেবেছিল আমি বেশি বেশি স্লোয়ার করব। কিন্তু সেটা করিনি।

প্রশ্ন: মাশরাফি সেদিন বলছিলেন, ‘বাংলাদেশে মোস্তাফিজের অর্ধেক মানের বোলারও যদি থাকে, দেখান।’ শুনে কেমন লেগেছে?
মোস্তাফিজ: বড় ভাইয়েরা যখন এভাবে বলেন তখন ভীষণ ভালো লাগে। আরও মন খুলে কাজ করতে ইচ্ছে করে। তাঁদের এ ধরনের মন্তব্য অনেক উদ্বুদ্ধ করে, সাহস জোগায়।

প্রশ্ন: মাশরাফি ১৯ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলছেন। এ রকম লম্বা ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
মোস্তাফিজ: আমি অনেক দিন খেলতে চাই। শরীর যত দিন সায় দেবে, চেষ্টা করে যাব ইনশা আল্লাহ। মাশরাফি ভাইয়ের মতো আমিও চেষ্টা করব। আমাকে দিয়ে যদি বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারে, আমি যদি দেশের কাজে আসতে পারি, যত দিন পূর্ণ ফিট থাকব, খেলে যাব।

প্রশ্ন: এই পাঁচ বছরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিক হলেও টেস্টে এখনো নিয়মিত হতে পারেননি ঠিক কী কারণে?
মোস্তাফিজ: টেস্টে আমার বলে সুইং কম হয়। আমাকে আরও নিয়মিত বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলতে হবে।

প্রশ্ন: অনেক সময় বলা হয় বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট খেলার জন্য আপনি ফিট নন।
মোস্তাফিজ: আসলে পুরোপুরি ফিট না থাকতে পারলে শতভাগ চেষ্টা করা যায় না। কিছু কিছু সময় নিজ আগ্রহেই বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। সব ক্রিকেটারই চায় সব সংস্করণে ভালো খেলতে। আমিও ব্যতিক্রম নই।

প্রশ্ন: পাকিস্তান সফর নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। দল গেলে আপনি যাবেন তো?
মোস্তাফিজ: যদি স্কোয়াডে রাখে, যাব না কেন! তার আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।