যে ম্যাচ দিয়ে বার্সেলোনার মন জিতে নিয়েছিলেন সেতিয়েন

সেদিন মেসিদের আটকে দিয়েছিল বেতিস। ছবি : এএফপি
সেদিন মেসিদের আটকে দিয়েছিল বেতিস। ছবি : এএফপি
>গত বছর নিজেদের মাঠে লিগে রিয়াল বেতিসের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বসেছিল বার্সেলোনা। ন্যু ক্যাম্প থেকে মহামূল্যবান জয় তুলে নিয়েছিলেন তৎকালীন বেতিসের কোচ কিকে সেতিয়েন। সে সেতিয়েনকেই কোচের দায়িত্ব দিয়েছে বার্সেলোনা। কেমন খেলেছিল সেদিন বেতিস?

ম্যাচটা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিল না কারও। ন্যু ক্যাম্পে খেলতে এসেছিল রিয়াল বেতিস, স্প্যানিশ লিগে তখন দলটির অবস্থান ১৫তম। বার্সেলোনার মাঠে এসে কখনই তেমন ভালো খেলার রেকর্ড নেই বেতিসের। বরং সেদিন সবার আগ্রহ ছিল লিওনেল মেসিকে নিয়ে। চোট কাটিয়ে অনেক দিন পর সেদিন ফিরেছিলেন মেসি। কিন্তু মেসি নন, ম্যাচশেষে সবার আলোচনায় ছিলেন বেতিসের কোচ কিকে সেতিয়েন। তাঁর সফল রণপরিকল্পনায় বার্সেলোনা নিজের ঘরে ৪-৩ গোলে হেরে বসেছে রিয়াল বেতিসের কাছে!

ম্যাচ হেরে বার্সার সমর্থকেরা বেতিসকে গালমন্দ করবেন কী, উল্টো মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলেন তাদের খেলা। প্রশংসা করছিলেন সেতিয়েনের। ইয়োহান ক্রুইফকে গুরু মানা এ কোচ সেদিন এতটাই মুগ্ধ করেছিলেন নিজের কোচিং দিয়ে!

সেদিন চিরাচরিত ৪-৩-৩ ছকে মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। বার্সেলোনার এ কৌশলের জবাব দিতে দলকে ৩-৪-১-২ ছকে সাজিয়েছিলেন সেতিয়েন। ফলে বার্সার রক্ষণকে সব সময় ৫ থেকে ৬ জন বেতিস খেলোয়াড় ব্যস্ত রেখেছিলেন। বল পায়ে খেলোয়াড়দের রসায়ন, দ্রুত পাস আদান প্রদান ও কার্যকরী প্রতি আক্রমণে বার্সেলোনাকে সেদিন বিবশ বানিয়ে দিয়েছিল বেতিস। এতটাই, যে প্রথমার্ধেই অন্তত এক হালি গোল খেতে পারত সেদিন বার্সা।

একবার স্প্যানিশ উইঙ্গার হোয়াকিন ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি, আরেকবার বার্সারই সাবেক খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ান তেয়োর শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন বার্সার গোলরক্ষক টের স্টেগেন। ১৯ মিনিটে কারভালহোর ডিফেন্সচেরা পাসে বার্সা রক্ষণ খালি হয়ে যায়। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ শটে ক্যাম্প ন্যুকে স্তব্ধ করে দেন জুনিয়র ফিরপো। ৩৩ মিনিটে ফিরপোরই ক্রস থেকে তেয়োর পাস খুঁজে পায় হোয়াকিনকে। বার্সা রক্ষণ ও মিডফিল্ডের মাঝে বিশাল ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা হোয়াকিন ঠান্ডা মাথায় ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।

৬৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান কমিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ৩ মিনিট পরে লো চেলসোর এক শট হাস্যকরভাবে গ্লাভসের মধ্য দিয়ে যেতে দেন স্টেগেন। ৭৫ মিনিটে ব্যবধান কমিয়ে আনেন ভিদাল। ম্যাচ জমে ওঠার অপেক্ষা কেবল কিন্তু ৮০ মিনিটে আবারও কপাল পুড়ল বার্সার। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রাকিতিচ। ৮২ মিনিটে সার্জিও কানালেস ৪-২ করে দেওয়ার পর আশা হারিয়ে ফেলে ন্যু ক্যাম্প। ৯২ মিনিটে মেসির গোলে আশা জেগেছিল বটে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

জিওভানি লো সেলসো, জুনিয়র ফিরপো, উইলিয়াম কারভালহোরা সেদিন ছড়ি ঘুরিয়েছিলেন বুসকেটস, রাকিতিচদের ওপর। মিডফিল্ডের দখল হারিয়ে বার্সার মিডফিল্ডাররা এতটাই খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন যে, বিরক্ত রাকিতিচ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। বুসকেটসও দেখেন হলুদ কার্ড। পুরো ম্যাচ খেলতেই পারেননি বুসকেটস আর আর্থার মেলো। আগেই তাদের মাঠ থেকে উঠিয়ে দেন তৎকালীন বার্সেলোনা কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে। ভালভার্দের দম বন্ধ করা কৌশলকে হারিয়ে সেদিন সেতিয়েন দেখেছিলেন, ন্যু ক্যাম্পে আসলে কেমন ফুটবল খেলা উচিত। বার্সাকে তাদের ফুটবল পাঠটাই নতুন করে দিয়েছিলেন সেদিন।

সে ম্যাচ শেষে সার্জিও বুসকেটস নিজের স্বাক্ষরসহ জার্সি উপহার দিয়েছিলেন সেতিয়েনকে, জার্সিতে লিখেছিলেন, ‘যেভাবে তুমি ফুটবলকে দেখো, সে দৃষ্টিভঙ্গিটা মুগ্ধ করেছে আমাকে।’

ওই ম্যাচের পর দলবদলেই লেফটব্যাক ফিরপোকে কিনেছিল বার্সেলোনা। এবার আনল খোদ সেই কোচকেই, নিজেদের কোচ বানিয়ে। দেখা যাক, তিনি ইয়োহান ক্রুইফের আদর্শ বার্সায় আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন কি না!