'চিরশত্রুরা'ও আটকাতে ব্যর্থ অদম্য লিভারপুলকে

গোলের পর মোহাম্মদ সালাহর উল্লাস। ছবি : এএফপি
গোলের পর মোহাম্মদ সালাহর উল্লাস। ছবি : এএফপি
>

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে গতকাল মাঠে নেমেছিল দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিভারপুল। সম্ভাব্য ৬৩ পয়েন্টের মধ্যে ৬১ পয়েন্ট পাওয়া, ৩০ বছর পর লিগ শিরোপার দিকে অদম্য গতিতে ছুটে চলা লিভারপুলকে হারালে এই ‘চিরশত্রু’ ইউনাইটেডই হারাবে, এমনটাই মনে করছিলেন সবাই। কিন্তু তা হয়নি। ২-০ গোলের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে শিরোপার দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে ‘অল রেড’ রা

ইংলিশ লিগের আর দশটা ম্যাচের মতো নয় এই ম্যাচ।

লিগে যতই চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি, আর্সেনাল কিংবা টটেনহাম শক্তিমত্তা দেখাক না কেন, যুগে যুগে ইংলিশ লিগের সবচেয়ে বড় ম্যাচ হিসেবে মানা হয়েছে এই ম্যাচটাকেই। এ যেন ইংলিশ ফুটবলের ‘এল ক্লাসিকো’— মুখোমুখি লিভারপুল আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নিজেদের মাঠে এই ইংলিশ ‘এল ক্লাসিকো’তে শেষ হাসি হেসেছে লিভারপুলই। ২-০ গোলের অনায়াস জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তারা।

এই মৌসুমে লিগে এর আগে ২১টি ম্যাচ খেলেছিল লিভারপুল। একটা ম্যাচ বাদে প্রত্যেকটা ম্যাচেই জিতেছে তারা। একটা মাত্র ম্যাচ ড্র করে খুইয়েছে ২ পয়েন্ট। আর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিভারপুলের হাত থেকে পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার সেই কঠিন কাজটা আর কেউ নয়, করেছে এই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডই। ইউনাইটেডের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে এই মৌসুমের শুরুর দিকে ১-১ গোলে ড্র করেছিল লিভারপুল। ম্যাচটা খেলতে পারেননি মোহাম্মদ সালাহ। গত রাতের ম্যাচের আগে যখন তাঁকে এই ড্রয়ের ব্যাপারে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, তিনি ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন, ‘ওই ম্যাচে আমি ছিলাম না তাই ওরা ড্র করতে পেরেছে!’ ঠাট্টা করে বললেও তিনি যে বিশেষ ভুল বলেননি, সেটা কাল হাড়ে হাড়ে টের পেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। একদম শেষ মুহূর্তে ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটা করে ইউনাইটেডের সমতায় ফেরার সকল আশায় পানি ঢেলে দিয়েছেন এই সালাহই।

চিরচেনা ছকেই মাঠে নেমেছিল লিভারপুল। ওদিকে লিভারপুলের দুর্দান্ত আক্রমণভাগকে সামলাতে ও নিজেদের তারকা স্ট্রাইকার মার্কাস রাশফোর্ডের অনুপস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ৩-৪-১-২ ছকে মাঠে নেমেছিল ইউনাইটেড। উদ্দেশ্য ছিল, লিভারপুলের দুই ফুলব্যাক ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ড ও অ্যান্ডি রবার্টসনকে ‘প্রেস’ করার জায়গা দিয়ে উল্টো প্রতি-আক্রমণ করে গোল করা। যে কৌশলে এর আগেই ম্যানচেস্টার সিটিকে বশ মানিয়ে এসেছে তারা। কিন্তু এই পরিকল্পনা সফল হয়নি।

ম্যাচের প্রথম থেকেই ইউনাইটেডের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে লিভারপুল। ম্যাচের ১৪ মিনিটে অ্যালেক্সান্ডার-আরনল্ডের কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক। কিছুক্ষণ পরে দলের ব্যবধান দ্বিগুণ করতে গিয়েও পারেননি রবার্তো ফিরমিনো। দুর্দান্ত বাঁকানো এক শটে গোল করার পর দেখা গেল, গোলটা হওয়ার ঠিক আগে ইউনাইটেডের গোলরক্ষক ডেভিড ডা হেয়াকে ফাউল করেছিলেন ফন ডাইক। এরপর মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে গোল করেন ডাচ মিডফিল্ডার জর্জিনিও ভাইনাল্ডামও, কিন্তু পরে দেখা গেল, অফসাইডে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।

সাদিও মানের একটা শট দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন ডি গিয়া।

তবে ইউনাইটেডও যে সুযোগ পায়নি, তা কিন্তু না। রাইটব্যাক অ্যারন ওয়ান-বিসাকার একটা ক্রসে যেখানে পা ঠেকালেই গোল হয়ে যেত, এমন সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন ব্রাজিলের মিডফিল্ডার আন্দ্রেয়া পেরেইরা। সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন ফরাসি স্ট্রাইকার অ্যান্থনি মার্শিয়ালও।

ওদিকে দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুল আরও ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে। পেরেইরার মতো কিছু সুযোগ নষ্ট করেন সাদিও মানে ও সালাহ। জর্ডান হেন্ডারসনের দূরপাল্লার এক শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।

শেষমেশ দলের ব্যবধান বাড়ান সেই সালাহই। ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে, যখন গোল শোধ করার জন্য ইউনাইটেড মরিয়া, তখন গোলরক্ষক অ্যালিসনের বাড়ানো বল ধরে এক রকম ফাঁকা মাঠে গোল করে আসেন এই মিসরীয় তারকা। গোলের পরপরই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। নিশ্চিত হয় ১৬ পয়েন্টের ব্যবধানে লিভারপুলের শীর্ষে থাকাটাও।

২২ ম্যাচে লিভারপুলের পয়েন্ট ৬৪। আর এক ম্যাচ বেশি খেলে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে গত বারের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি।