রিয়ালে 'নতুন কাকা'?

রেইনিয়ের জেসুস। ফ্লামেঙ্গো থেকে এখন রিয়াল মাদ্রিদের। ছবি: রেইনিয়েরের ইনস্টাগ্রাম পেজ
রেইনিয়ের জেসুস। ফ্লামেঙ্গো থেকে এখন রিয়াল মাদ্রিদের। ছবি: রেইনিয়েরের ইনস্টাগ্রাম পেজ
>

রিয়াল মাদ্রিদে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন ব্রাজিলের তরুণ প্রতিভা রেইনিয়ের জেসুস। বিশ্লেষকদের মতে ১৮ বছর বয়সী এ মিডফিল্ডারের খেলায় রয়েছে কাকার প্রতিচ্ছবি

বক্সের আশপাশ থেকে নেওয়া শটে নিয়মিত গোল, ডিফেন্স চেরা পাস, প্রায় কোনো কিছু বুঝতে না দিয়ে প্রতিপক্ষকে কাটানোর সামর্থ্য—এসি মিলানে ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের কাকা। ব্রাজিলের সাবেক মিডফিল্ডারের খেলার ধরন এখনো নস্টালজিক করে তোলে ফুটবলপ্রেমীদের। সংবাদমাধ্যম বলছে, এসি মিলান ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক মিডফিল্ডারের স্মৃতি ফিরে আসতে পারে রেইনিয়ের জেসুসের খেলায়। ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডার কাল ফ্লামেঙ্গো থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন রিয়ালে। রেইনিয়েরের খেলার ধরনে কাকার ছাপ দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগো গোয়েজের পর রেইনিয়ের। ব্রাজিলের এই তিন তরুণ ফুটবলারকে ‘ভবিষ্যৎ’ বলেই মনে করছে দেশটির ফুটবল। আর এ তিন তরুণই এখন রিয়ালের। গত বছর ব্রাজিলের ‘সিরি আ’ এবং লাতিন ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপ কোপা লিবার্তোদোরেস জয়ী রেইনিয়েরকে ৩০ মিলিয়ন ইউরোয় রিয়ালের কাছে ছেড়েছে ফ্লামেঙ্গো। ব্রাজিলের ক্লাবটির কোচ হোর্হে জেসুসের মতে, ‘রেইনিয়ের ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা।’

রেইনিয়েরের খেলার পজিশন নিয়েও বলেছেন জেসুস, ‘দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার জন্য শারীরিকভাবে সে ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা। তাকে উইংয়ে খেলানোর অর্থ হলো হাত-পা বেঁধে রাখা। তার পারফর্ম করার জন্য ছকটা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ৪-৩-৩ ছকে খেলা তার জন্য কঠিন।’

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার সময় রেইনিয়ের প্রথম জানতে পারেন রিয়াল তাকে কিনতে আগ্রহী। ডান পায়ের এ ফুটবলার ১০ নম্বর জার্সিতে খেলতেই অভ্যস্ত। আর হোর্হে জেসুস তাকে খোলনলচে দেখেছেন বলেই নিজের মতটা দিলেন, ‘রেইনিয়েরের ব্যক্তিগত দক্ষতা অবিশ্বাস্য। তবে একমাত্র স্ট্রাইকার হিসেবে সে খেলতে অপছন্দ করে। পাশে আরেকজন থাকলে ভালো। মিডফিল্ডার হিসেবে সে ভীষণ শক্তিশালী।’

রেইনিয়ের ভীষণ দ্রুতগতির ফুটবলার নন, তবে অল্প জায়গার মধ্যে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা অসামান্য। নিজের খেলার ধরন নিয়ে রেইনিয়ের মনে করেন, ‘ আমার মনে হয় লুকাস পাকেতার খেলার সঙ্গে মিল আছে আমার, তাও আমি কাকার মতোও। ছোটবেলায় তাকে মিলান, রিয়াল মাদ্রিদ এবং ব্রাজিল দলে খেলা দেখা থেকে প্রেরণা পেয়েছি। পাসিং ও ফিনিশিংয়ে আমাদের খেলার মিল থাকতে পারে তবে আমাদের প্রধান গুণটা হলো হঠাৎ কিক নেওয়া।’

কাকার সঙ্গে আরও এক ফুটবলারকে আদর্শ মেনে বড় হয়েছেন রেইনিয়ের। জিনেদিন জিদান। ব্রাজিলের হয়ে ফুটসালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া বাবার কাছে জিদানের ভিডিও দেখেছেন রেইনিয়ের। এবার জিদানকেই কোচ হিসেবে পাবেন তিনি। তবে সহসাই সম্ভবত নয়, সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে রিয়ালে রেইনিয়েরের শুরুটা হতে পারে ‘বি’ দলে। তবে জিদানের প্রতি শ্রদ্ধাটা বুঝিয়ে দিয়েছেন রেইনিয়ের, ‘বাবার কাছে তার (জিদান) ভিডিও দেখেছি। সব সময় তাঁকে নকল করার চেষ্টা করেছি। তিনি যেমন ছিলেন তার ১ শতাংশ পেলেও সন্তুষ্ট থাকব।’

রেইনিয়ের সমন্ধে জানতে ব্রাজিলের ফুটবল বিশ্লেষক ও ‘ফুটবল রাডার’-এর পণ্ডিত অ্যান্ডি ওয়াকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফক্স স্পোর্টস। অ্যান্ডির ভাষায়, ‘রেইনিয়ের ১০ নম্বর জার্সিতে নিজের সেরাটা দিতে পারে। প্রথাগত ১০ নম্বর পজিশনের চেয়ে একটু এগিয়ে খেলাটা তার অপছন্দ। স্ট্রাইকারের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। সে সরাসরি ড্রিবল করতে পছন্দ করে, ডিফেন্ডারদের কাটাতে পারে খুব সহজেই, অল্প জায়গায় বলের ওপর নিয়ন্ত্রণও ভালো। আর গোলের চোখেও আছে। ফ্লামেঙ্গোর সিনিয়র দলে ৭২৯ মিনিটে ৬ গোলই সব বলে দেয়।’

ওয়াকার মনে করেন, রেইনিয়েরের শারীরিক সামর্থ্য আরও বাড়ানো উচিত। পুরো ৯০ মিনিট খেললে ম্যাচের শেষ দিকে গতি ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। বাড়াতে হবে কৌশলগত জ্ঞানও। তবে এ মুহূর্তে রেইনিয়েরের খেলার ধরনে তাকে কাকার সঙ্গেই মেলাচ্ছেন ওয়াকার, ‘নির্দিষ্ট করে বললে কাকা—মিলান-যুগের কাকা।’

শুধু ওয়াকার নন, ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ গিলের্মে দাল্লা দিয়া গত বছরই বলে রেখেছেন তাঁর সাবেক শিষ্যের খেলার ধরনে রয়েছে কাকা ও রাইয়ের (১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী সাবেক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার) প্রতিচ্ছবি। ‘সে ১০ নম্বর ফুটবলার—একজন কাকা, একজন রাই। তাদের খেলার ছাপ দেখি রেইনিয়েরের মধ্যে। ওকে নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী।’