গোল করতে বাংলাদেশি ফরোয়ার্ডের ৭ সেকেন্ডে ৫৫ মিটার পাড়ি

মতিন মিয়া। ছবি:প্রথম আলো
মতিন মিয়া। ছবি:প্রথম আলো

‘বাংলাদেশের কোনো ফুটবলার বল নিয়ে এত দ্রুতগতিতে দৌড়ে গিয়ে গোল করতে পারেন!’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত পরশু মতিন মিয়ার একক প্রচেষ্টার গোলটির পর তাজ্জব বনে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। মাঝমাঠের ওপর থেকে লঙ্কান ডিফেন্ডার জুডে সুপানের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ভোঁ-দৌড় মতিনের। যেন ফর্মুলা ওয়ানের গাড়ি! প্রাণান্ত দৌড়েও মতিনের গতি ও বলের নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে পেরে উঠলেন না লঙ্কান এক ডিফেন্ডার। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডকে ঠেকানোর জন্য পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন গোলরক্ষক হেরাথ অনুরাসিরিও। তাঁকেও ‘সাইড স্টেপে’ ছিটকে মতিন বল পাঠিয়ে দিলেন ফাঁকা পোস্টে।

২০১৮ সালে অভিষিক্ত মতিনের জাতীয় দলের জার্সিতে দ্বিতীয় গোল। প্রথমটিও এসেছে পরশুই। বাংলাদেশকে গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে ওঠানো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে দলের প্রথম দুটি গোলই মতিনের।

কত দূরত্ব পাড়ি দিয়ে গোলটি করেছেন মতিন? ৫৫ মিটার। আর দূরত্বটা পাড়ি দিতে সময় নেন মাত্র ৭ সেকেন্ড। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৮ মিটার! বল কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে গোল করার আগ পর্যন্ত বলে পা ছুঁইয়েছেন ৭ বার। মতিনের ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের কোচিং দলের সদস্যদের কাছে ইতিমধ্যে জমা পড়েছে তথ্যগুলো। খেলোয়াড়দের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের জন্য বসুন্ধরার কোচিং দলের কাছে আছে জিপিএস আর ভিডিও ও ম্যাচ বিশ্লেষণের বিশেষ সফটওয়্যার (লঙ্গোম্যাচ)। শেষ দুটি প্রযুক্তির বিশ্লেষণেই জানা গেছে গতির ঝংকার তুলে দারুণ ফিনিশিংয়ের গোলটির তথ্য-উপাত্ত।

মতিনের এমন গোল অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রিমিয়ার লিগে সাইফ স্পোর্টিংয়ের জার্সিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিপক্ষেও তাঁর এমন গোল দেখেছে বাংলাদেশের ফুটবল। নিজেদের বক্সের একটু সামনে বল পেয়ে এক দৌড়ে প্রতিপক্ষের চার খেলোয়াড় আর গোলকিপারকে কাটিয়ে সেদিন বল ঠেলেছিলেন জালে। কদিন আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বার্নলির বিপক্ষে টটেনহামের দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিন যেমন একক নৈপুণ্যের গোল করেছিলেন, মতিনের সেই গোলটি ছিল অনেকটা তেমনই।

তা পরশু বল কেড়ে নেওয়া থেকে গোল করা সময়টুকুতে কী ভাবছিলেন মতিন? ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসের অনুরণন, ‘বল কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই গোলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। নিশ্চিত ছিলাম, যে ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েছি, সে আমার সঙ্গে দৌড়ে পারবে না। শুধু ঠান্ডা মাথায় এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ভেবেও রেখেছিলাম গোলরক্ষক সামনে এগিয়ে আসবে আর আমি ওকে কাটিয়ে যাব। শেষ পর্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ঠিক তা-ই করেছি।’ মতিনের নিজের চোখেই গোলটি এখন পর্যন্ত তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারের সেরা!

গতির ঝড় তোলা, আড়াল থেকে হঠাৎ এসে গোলমুখে জায়গা করে নেওয়া, প্রয়োজনে ‘১০ নম্বর’ ও উইঙ্গার পজিশনের সঙ্গে জায়গা অদলবদল, আর সব ছাপিয়ে এই গোলের ক্ষুধা—সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মতিন যেন ছিলেন একজন দক্ষ স্ট্রাইকারের ‘প্যাকেজ’। বাংলাদেশের জার্সিতে এমন মতিনকে আগে কখনোই দেখা যায়নি। হঠাৎ এমন বদলে যাওয়ার রহস্য কী? মতিন বললেন, ‘কোচ আমাকে গতকাল (রোববার) কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। বিশেষ করে আমাদের পায়ে বল থাকলে। তাই মন খুলে খেলতে পেরেছি।’

স্বাধীনতা পেয়ে সৃষ্টিশীল ফুটবলের আনন্দে মেতে ওঠা মতিনের সামনে এখন স্বাধীনতা ‘রক্ষা’র চ্যালেঞ্জ। গোলক্ষুধাটা যে এক-দুই ম্যাচেই চলে যায়নি, সেটি প্রমাণের দায়।