বাংলাদেশের জন্য প্রস্তুত পাকিস্তানি '১৫০'

হারিস রউফ—প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন পাকিস্তান দলে। ছবি: পিসিবি
হারিস রউফ—প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন পাকিস্তান দলে। ছবি: পিসিবি
>

পাকিস্তানের মাটিতে পরশু টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের এ সিরিজে পাকিস্তান দলে ডাক পেয়েছেন হারিস রউফ। ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ১৫০ কিমি গতিতে বল করতে পারেন এ পেসার।

পেসার ও পাকিস্তান—দুটো শব্দ যেন সমার্থক!

সরফরাজ নওয়াজ, ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, আকিব জাভেদ, শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির...। এমন আরও কত নাম! পাকিস্তান যেন সত্যিকার অর্থেই পেসার-প্রসবা। এ কাতারে না হলেও অন্তত তাঁদের পথে ওঠার চেস্টা করছেন হারিস রউফ। অথচ এবার বিগ ব্যাশে শুরুর দিকে ২৬ বছর বয়সী পাকিস্তানির নামটা তেমন আলোচিত ছিল না। কিন্তু বিগ ব্যাশে হ্যাটট্রিকের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটারের আশপাশে বল করায় কপাল খুলে যায় রউফের। জায়গা পেয়ে যান বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পাকিস্তান দলে। স্বপ্নটা যেহেতু ডানা মেলেছে তাই উড়তেই চান রউফ। পাকিস্তানের জার্সিতে এখনো অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এ পেসার বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হতে চান সিরিজসেরা বোলার।

অথচ রউফের পেসারই হওয়ার কথা ছিল না! অন্তত তাঁর স্কুল-কলেজ জীবনে তাকিয়ে কথাটা বলাই যায়।

ইসলামাবাদ মডেল কলেজে পড়ার সময়ে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলই খেলেছেন বেশি। ৯০ মিনিটের খেলাটাই বেশি পছন্দ ছিল রউফের। ফুটবলে শিরোপা জিতিয়েছেন নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারও। ক্রিকেট খেলার শুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো ২০১৭ সাল পর্যন্তও টেনিস বলে ক্রিকেট খেলেছেন রউফ। কোনোরকম ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছাড়াই তখন ক্রিকেট খেলতেন। পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলা যে তখন রউফের কাছে দিবাস্বপ্ন সে কথা বলাই বাহুল্য। এর আগে ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রউফ নিজেই বলেছিলেন, ‘কখনো জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখিনি।’

কিন্তু রউফের না দেখা স্বপ্নই সত্যি করে দিয়েছে তাঁর গতি। হ্যাঁ, তাঁর বলের গতিই তাঁকে তুলে এনেছে জাতীয় দলে। সেটিও আরেক গল্প।

তিন বছর আগে পাকিস্তান সুপার লিগের দল (পিএসএল) লাহোর কালান্দার্সের ওপেন ট্রায়ালে গিয়েছিলেন রউফ। তখন তিনি ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় দলের ক্রিকেটার। সে দলের কোচ রউফকে বলেছিলেন, কালান্দার্সের ওপেন ট্রায়ালে অংশ নিতে। সেখানে ধারাবাহিকভাবে ১৫০ কিমি গতিতে বল করার পাশাপাশি সবচেয়ে দ্রুতগতির ডেলিভারিটিও বেরোয় রউফের হাত থেকে। মজার ব্যাপার, ধারাবাহিকভাবে ১৫০ কিমি ছোঁয়ার জন্য সতীর্থের কাছে তাঁর ডাকনাম হয় ‘১৫০’। হারিস রউফের ভাষায়, ‘উত্তরাঞ্চলের দলে কেউ আমাকে হারিস নামে ডাকে না। সবাই ১৫০ নামে ডাকে। আমিও অটোগ্রাফে ১৫০ লিখে থাকি।’

ট্রায়ালে কালান্দার্সের কোচ ও পাকিস্তানের সাবেক পেসার আকিব জাভেদের চোখে পড়েন রউফ। এরপর বাকি পথটা ধীরে ধীরে সহজ হতে থাকে। গত মৌসুমে খেলেছেন পিএসএলে। যদিও প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৩টি। এবার বিগ ব্যাশে ডেল স্টেইন চোট পাওয়ায় শুরুতে মাত্র তিন ম্যাচের জন্য রউফকে ডেকেছিল মেলবোর্ন স্টারস। কিন্তু ডেথ ওভারে পুরোনো বলে ভালো করায় দেশের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আগে বিগ ব্যাশে খেলে ফেলেন ৭ ম্যাচ। নিজের পেস বোলিং নিয়ে রউফের ভাষ্য, ‘১৪০ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি গতিতে বল করা একজন জাত পেসার পাকিস্তানে কখনো পড়ে থাকতে পারে না বলেই আমার বিশ্বাস।’

তরুণ এ পেসার বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলতে কতটা মুখিয়ে আছেন, সেটি বোঝা যায় তাঁর কথাতেই, ‘আমি সিরিজের সেরা বোলার হতে চাই। বিগ ব্যাশে ভালো করে এসেছি। এবার দেশের হয়ে তা করতে চাই।’ এমন টগবগে আত্মবিশ্বাসের পেসারকে আরেকটু উসকে দিয়েছেন পাকিস্তান দলের বোলিং কোচ ও কিংবদন্তি পেসার ওয়াকার ইউনুস। রউফ নিজেই জানালেন সে কথা,ওয়াকার ভাই বলেছেন, ‘ডেথ ওভারে আমি যেভাবে রিভার্স সুইং ইয়র্কার মারি, এক সময় তিনি এভাবে বল করতেন। ওয়াকার ভাইয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল দুর্দান্ত। তার সঙ্গে কাজ করে এ কাজে আমি নিখুঁত হতে চাই।’

পাকিস্তানের কন্ডিশনে এমন গতির পেসার নিখুঁত লেংথের রিভার্স সুইং পেলে কী ঘটতে পারে, বাংলাদেশ দল তা নিশ্চয়ই জানে!