জাপানের বিশ্বকাপ খেলার পেছনে দোকান চুরি

হারের পর ভারতের খেলোয়াড়েরা এসে ছবি তুলেছেন জাপানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। ছবি: ক্রিকেট জাপানের টুইটার
হারের পর ভারতের খেলোয়াড়েরা এসে ছবি তুলেছেন জাপানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। ছবি: ক্রিকেট জাপানের টুইটার
>

টোকিও থেকে ঘন্টাখানেক দূরত্বের শহর সানোর একটি দোকানে চুরির ঘটনা না ঘটলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলতে থাকা এই বিশ্বকাপে জাপানের খেলা ছিল প্রায় অসম্ভব!

ক্রিকেট মাঠে ডেভিড-গোলিয়াথের লড়াই বলে যদি কিছু থেকে থাকে, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ব্লুমফন্টেইনে কাল ভারত আর জাপানের ম্যাচটা তা-ই ছিল। খেলার জগতে সুমো কুস্তি, ফুটবল, বেসবল আর ব্যাডমিন্টনের জন্যই বেশি পরিচিতি জাপানের। দেশটা যে ক্রিকেটেও নাম লিখিয়েছে, তা-ই তো বড় খবর! এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপই আইসিসির কোনো আয়োজনে প্রথমবার তাদের সামিল হওয়া।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফন্টেইনে কাল আর জাপানের রূপকথা লেখা হয়নি, হয়নি বাইবেলের ‘ডেভিড’ হওয়া। ডেভিড হওয়া কী, রীতিমতো নাকানিচুবানি খেয়েছে! চারদিন আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হওয়ায় এক পয়েন্ট পেয়ে জাপানের বিশ্বকাপ অভিষেক, কাল মাত্র ৪১ রানে অলআউট হয়ে ভারতের কাছে দলটা হেরেছে ১০ উইকেটে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ম্যাচ শেষ ২০ ওভারের মধ্যেই। ভারত ১২টি ওয়াইডসহ ১৯টি অতিরিক্ত রান না দিলে, আর অষ্টম উইকেটে ১৩ রানের একটা জুটি না হলে হয়তো টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা স্কটল্যান্ডের (২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২২ রান) কাছ থেকে ‘কেড়ে’ই নিত জাপান!

তবে এসবও সম্ভবত ‘ব্রেকিং নিউজ’ নয়। কি বয়সভিত্তিক, কি আন্তর্জাতিক পর্যায়—ক্রিকেটে ডাকাবুকো ভারতের কাছে এবারই প্রথম বিশ্বকাপে আসা জাপানের এমন হার একেবারে অস্বাভাবিক তো নয়! রাজধানী টোকিও থেকে ঘন্টাখানেক দূরত্বের শহর সানোর একটি দোকানে চুরির ঘটনা না ঘটলে যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলতে থাকা এই বিশ্বকাপে জাপানের খেলা ছিল প্রায় অসম্ভব!

কোথায় একটা দোকানে চুরি, আর কোথায় ক্রিকেট বিশ্বকাপে একটা দলের সুযোগ পাওয়া! অঙ্কটঙ্ক কষেও তো দুটির মধ্যে সুতো টানা কঠিন। কিন্তু তেমনই হয়েছে। গত জুনের ঘটনা। আঞ্চলিক বাছাইপর্বের ফাইনালে জাপানের প্রতিপক্ষ ছিল পাপুয়া নিউ গিনি (পিএনজি)। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে উঠতি শক্তি পিএনজি ১৯৯৮-এর পর থেকে আটবার খেলেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচের আগে ‘ফেবারিট’ প্রশ্নে জাপানের পক্ষে ভোট কেউ দেয়নি। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন পিএনজির খেলোয়াড়দের মাথায় সম্ভবত ভূত-টূত ভর করেছিল। দলের দশজনের হঠাৎ হাতটানের ভাবনা পেয়ে বসল। ব্যস, যে ভাবনা, সেই কাজ। সানোর ওই দোকানে ঢুকে গেল চুরি করতে। কিন্তু চুরিবিদ্যাটা আর তাদের জন্য মহাবিদ্যা হয়ে দেখা দিল না, ধরা পড়ে গেছেন!

পিএনজির ক্রীড়া সংগঠকদের তো রীতিমতো মাথা কাটা পড়ার জোগাড়! একদিকে পরের দিন ম্যাচ, যেটিতে জিতলে মিলবে বিশ্বকাপের টিকিট, অন্যদিকে এমন লজ্জা। শেষ পর্যন্ত পিএনজির ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের মানসম্মানবোধেরই জয় হলো। দশজনকেই বহিষ্কার করে দিলেন। তাতে যা হলো, পরের দিন ম্যাচ খেলার মতো দলে খেলোয়াড় ছিলেন মাত্র চারজন। ম্যাচটা আর খেলা হয়নি পিএনজির। সেই সূত্রে ফাইনাল না খেলেই জাপান বিশ্বকাপে!

পিএনজির খেলোয়াড়দের অবশ্য ভাগ্য ভালো, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ না এনেই দেশে ফিরতে দিয়েছে জাপানি পুলিশ। দেশটির ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ক্রিকেট পিএনজি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গ্রেগ ক্যাম্পবেল জানাচ্ছিলেন লজ্জার সেই সময়ের কথা, ‘জাপানে এমন শাস্তির সাজা ৫ থেকে ১০ বা ১৫ বছরের জেল। তাই আমাদের ভাবনায় ছিল ছেলেগুলোকে উদ্ধার করা। ওরা বয়সে কাঁচা, বুঝে উঠতে পারেনি, হয়তো একজন অন্যজনের পাল্লায় পড়ে এমনটা করেছে।’ এমন ঘটনার পর মাঠে নামার কথাই আর ভাবেননি ক্যাম্পবেলরা, ‘খেলোয়াড়দের চুরি করা সবকিছুর জন্য দোকানে দাম দিয়েছি, দাতব্য কাজেও কিছু দান করেছি আমরা। দোকানিও আর কোনো অভিযোগ আনেনি। কিন্তু এসবের পর এই খেলোয়াড়দের মাঠে নামানোর কথা আমি বা দলের ম্যানেজার একবারের জন্যও ভাবিনি। আইসিসিও সেটা দিত না সম্ভবত। ওরা অন্যায় করেছে, ভাই! এরপর ওদের মাঠে নামতে দেওয়া যায় না।’

বিশ্বকাপে তো খেলা হলোই না, বরং দেশকে লজ্জায় ডুবিয়ে এসেছেন পিএনজির খেলোয়াড়েরা। মধ্য থেকে লাভের গুড়টা খেল জাপান!