জিততে বার্সার মতো ঘাম ছুটে গেছে রিয়ালেরও

গোলের পর রিয়াল ফরোয়ার্ড ব্রাহিম দিয়াজের উচ্ছ্বাস। কাল স্প্যানিশ কোপা দেল রে-তে ইউনিয়নিস্তার মাঠে। ছবি: এএফপি।
গোলের পর রিয়াল ফরোয়ার্ড ব্রাহিম দিয়াজের উচ্ছ্বাস। কাল স্প্যানিশ কোপা দেল রে-তে ইউনিয়নিস্তার মাঠে। ছবি: এএফপি।

জিততে কার বেশি কষ্ট হয়েছে, সে প্রশ্নে বার্সেলোনার দিকেই আঙুলটা বেশি যাবে। যোগ করা সময়ের গোলে কাল স্প্যানিশ কোপা দেল রে-র শেষ ৩২-এ কোনোরকমে ইউডি ইবিজার মাঠ থেকে ২-১ গোলে জিতে ফিরেছে বার্সেলোনা। রিয়াল মাদ্রিদের জয় সে তুলনায় কিছুটা কম ঘাম ঝরানো ছিল। তবে ইউনিয়নিস্তাস দে সালামাঙ্কার মাঠ থেকে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে ফিরে সম্ভবত হাঁফ ছেড়েছেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদানও। জিততে এতটা কষ্ট হবে নিশ্চয়ই ভাবেননি জিদান!

দুই দলেরই প্রতিপক্ষ স্প্যানিশ ফুটবলের তৃতীয় স্তরের। লা লিগা (প্রথম স্তর) ও সেগুন্দা দিভিসিওনের (দ্বিতীয় বিভাগ) পর স্প্যানিশ ফুটবলের পেশাদার স্তরের তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে (সেগুন্দা দিভিসিওন ‘বি’) আবার চারটি ভাগ। বার্সেলোনার প্রতিপক্ষ ইবিজা সেখানে খেলে গ্রুপ ওয়ানে, রিয়ালের প্রতিপক্ষ গ্রুপ টু-তে। রিয়াল-বার্সার তুলনায় দুটি ক্লাবই বলতে গেলে দুগ্ধপোষ্য শিশু। ইউনিয়নিস্তার জন্ম ২০১৩ সালে, ইবিজার দুবছর পর। অথচ সেই ক্লাব দুটিই কী ঘাম ঝরাল রিয়াল-বার্সার!

এবার কোপা দেল রে-র নিয়মে কিছু বদল এনেছে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন। আগে টুর্নামেন্টের প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিটি দল নিজের ও পরের মাঠে দুটি করে লেগ খেললেও এবার সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে একটি করে লেগ। রিয়াল-বার্সার মতো দলগুলো টুর্নামেন্টে খেলেই শেষ ৩২-থেকে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এই রাউন্ডে স্প্যানিশ প্রথম বিভাগের দল খেলবে পেশাদার ফুটবলের একেবারে নিচের স্তর অর্থাৎ তৃতীয় বিভাগের দলের বিপক্ষে, ম্যাচটা হবে তৃতীয় বিভাগের দলের মাঠেই।

ইবিজার মাঠে তো মেসি-পিকে-বুসকেটসকে ছাড়া নামা বার্সেলোনা ৭০ মিনিট শেষেও পিছিয়ে ছিল ১-০ গোলে। সেখান থেকে গ্রিজমানের দুই গোলে এসেছে জয়, দ্বিতীয় গোলটি যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে। ইউনিয়নিস্তার মাঠে রিয়ালের অতটা কষ্ট করতে হয়নি। তবে করিম বেনজেমা, গ্যারেথ বেল, হামেস রদ্রিগেজ, কাসেমিরো, ফেদেরিকো ভালভার্দে, দানি কারভাহাল, মার্সেলোর মতো তারকাদের নিয়ে নেমেও ৬০ মিনিট পর্যন্ত ১-১ সমতায় ছিল রিয়াল!

১৮ মিনিটে বেলের গোলে রিয়ালের এগিয়ে যাওয়া। ওয়েলশ ফরোয়ার্ডের ডান পায়ের শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ঢোকে জালে। এক মিনিট পরই বক্সের বাইরে থেকে ইউনিয়নিস্তা লেফটব্যাক হুয়ান গঙ্গোরার দারুণ শট ফিরিয়ে দেন রিয়াল গোলকিপার আলফঁস আরেওলা। ৩৭ মিনিটে রিয়াল মিডফিল্ডার হামেস রদ্রিগেজের একটা নিচু হয়ে নামতে থাকা শটও ফেরে বারে লেগে।

৫৭ মিনিটে আলভারো রোমেরোর গোলে সমতায় ফেরে ইউনিয়নিস্তা। মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে দারুণ শটে গোলটি করেছেন রোমেরো, তবে ভাগ্যও তাঁর পাশে ছিল। মাঝমাঠে রিয়াল ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়াতেই বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অবারিত সুযোগ পেয়ে যান রোমেরো।

৬২ মিনিটে রিয়ালের আবার এগিয়ে যাওয়া। মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়াদৈনিক মার্কা সেটিকে রিয়ালের তরুণ উইঙ্গার ব্রাহিম দিয়াজের গোল দেখালেও গুগল বলছে, গোলটা গঙ্গোরারই আত্মঘাতী। এরপর ৬৯ থেকে ৭৯—এই এগারো মিনিটে সালামাঙ্কাকে দুবার গোলবঞ্চিত করেন রিয়াল গোলকিপার আরেওলা। প্রথমে ফেরান সালামাঙ্কা ফরোয়ার্ড ম্যাথিউর শট, দশ মিনিট পর কর্নারে ভেসে আসা বলে দু-তিন গজ দূর থেকে নেওয়া গার্সিয়ার শট। কিন্তু অঘটনের স্বপ্ন তখনো যদি বা থেকে থাকে সালামাঙ্কার, সেটি শেষ হয়ে গেছে যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবার ব্রাহিমের গোলে।

অঘটন না ঘটুক, রিয়ালের মতো প্রতিপক্ষের সামনে দলের এমন পারফরম্যান্সে মুগ্ধ ইউনিয়নিস্তা সমর্থকেরা ম্যাচ শেষে গান গেয়ে, হাততালিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন খেলোয়াড়দের। বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের পর যেমনটা করেছেন ইবিজার সমর্থকেরাও।