রোনালদোর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি এখন ঢাকায়

>‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে মরিশাসের কোচ জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো। ছিলেন রোনালদোর দোভাষীও। সেই মানুষটি এখন ঢাকায়।
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো। ফাইল ছবি
স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সঙ্গে জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো। ফাইল ছবি

‘স্যার অ্যালেক্স...স্যার অ্যালেক্স...’ 

ঘুরেফিরে জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো এতবার বললেন নামটা, বোঝা গেল গুরুভক্তি বেশ প্রবল তাঁর। যে প্রসঙ্গেই কথা হোক, কিংবদন্তি কোচের নামটা খুব শ্রদ্ধা নিয়ে অন্তত একবার বলছেনই। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফার্গুসনের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করা ফিলহো এসেছেন ঢাকায়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে মরিশাসের ডাগআউট সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন ৭৯ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান।

২০০২ সালের আগস্ট থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বিভিন্ন পর্যায়ে কোচ হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে ফিলহোর। যুব দলের কোচ হিসেবে শুরু। তিন মাসের মধ্যেই তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক ফার্গুসনের নজরে আসে। ব্যস, একদিন ডেকে বললেন, ‘তুমিই আমার সহকারী।’ ছয় মাস ফার্গুসনের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দল সামলানো। আবার ফিরে যেতে হয় খেলোয়াড় তৈরির খামারে। তবে পরবর্তী সময়ে বিশেষ এক খেলোয়াড়ের আগমনে আবার মূল দলের সঙ্গে যুক্ত করা হয় ফিলহোকে। সেই খেলোয়াড়ের নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

ফিলহোর ফুটবল কোচিং ক্যারিয়ারের বড় অধ্যায় হয়ে আছে ‘স্যার ফার্গুসনের সহকারী’ থাকার সময়টা। তবে তিনি আরও একটি বড় ভূমিকা পালন করেছেন বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ইংল্যান্ডে ক্যারিয়ারের শুরুর সময়টায়।

মাঠে নামার আগে রোনালদোকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ফিলহো। সংগৃহীত ছবি
মাঠে নামার আগে রোনালদোকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন ফিলহো। সংগৃহীত ছবি

যে সাতজনের আলোচনার টেবিলে চূড়ান্ত হয়েছিল রোনালদো-ইউনাইটেড চুক্তি, তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন ফিলহো। বাকি ছয়জন রোনালদোর মা, বোন নাজা, এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেজ ও তাঁর এক সহকারী। ক্লাবের পক্ষে ফার্গুসন ও ক্লাবের পরিচালক পিটান কেনিও।

প্রায় ১৬ বছর আগে সেই আলোচনার টেবিলে বসাটা ছিল শুধুই দায়িত্ব পালন। কিন্তু জীবনের গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়ে ফিলহোর কণ্ঠে এখন গর্ব, ‘রোনালদোর ইউনাইটেড আসার চূড়ান্ত আলোচনার টেবিলের সাতজনের মধ্যে আমিও ছিলাম। রোনালদো আমাদের এখানে এলে তাঁর কী উপকার হবে। পর্তুগিজ ভাষায় তাঁর মা-বোনকে সবকিছু আমাকেই বোঝাতে হয়েছিল। সেই রোনালদো কি না এখন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। বিষয়টি এখন ভাবলে আমার খুব ভালো লাগে।’

সেই বৈঠকের সাত দিন পর ইংরেজি না জানা এক ফুটবল প্রতিভার ম্যানচেস্টারে পা রাখা। দোভাষী হিসেবে রোনালদোর সঙ্গে তখন জুড়ে দেওয়া হলো সেই ফিলহোকেই। সকালের অনুশীলনে ফার্গুসনের সহকারী আর বিকেলে যুব দল সামলানোর দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। ফার্গুসনের ইংরেজি কথাগুলো রোনালদোর কানে পর্তুগিজ ভাষা হয়ে পৌঁছাত ফিলহোর মুখ হয়ে। রোনালদোকে ইংরেজি শেখানোর দায়িত্বও তাঁর। খুব কাছ থেকে দেখা ও পরখ করার সুযোগ। তখন কি মনে হয়েছিল এই রোনালদোই একদিন বিশ্ব ফুটবল শাসন করবেন?

জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো। ছবি: প্রথম আলো
জোয়াকিম ফ্রান্সিসকো ফিলহো। ছবি: প্রথম আলো

পাঁচ তারকা হোটেলের জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকান ফিলহো, ‘সত্যি কথা বলতে না। রোনালদো ভালো ফুটবলার হবে বুঝেছিলাম। খুব সহজেই তাঁকে কাজ বোঝানো যেত। কিন্তু বিশ্বসেরা ফুটবলারদের একজন হবে, এটা আমি তখন ভাবতে পারিনি।’ প্রতি বুধবার রোনালদো, জেরার্ড পিকেদের জন্য ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও সেই ক্লাসে নাকি কখনোই বসেননি পর্তুগিজ তারকা।

ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার আগে প্রায় ৩০ বছর ছিলেন ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ফুটবল একাডেমির কোচ। সেখানে কলি থাকা অবস্থায় জিনেদিন জিদান, আনেলকারাও ছিলেন তাঁর ছাত্র। ইউনাইটেডেও রোনালদোদের সঙ্গে সময়টা ভালোই যাচ্ছিল ফিলহোর। বাদ সাধল ছোট মেয়ের প্রতি ভালোবাসার টান। মায়ের সঙ্গে দুই বছরের মেয়ে থাকত ফ্রান্সে। শনিবার রাতে ৫৫ মিনিটের উড়ানে মেয়ের কাছে গিয়ে আবার সোমবার সকালে ফিরে ম্যানচেস্টারের অনুশীলনে যোগ। কিন্তু মেয়ের দাবি বাবাকে তার সঙ্গেই থাকতে হবে। অগত্যা ইংল্যান্ডের চাকরি ছেড়ে দুই বছরের মেয়ের জন্য চলে যেতে হলো ফ্রান্সে।

মরিশাসের দায়িত্ব নেন ২০১৭ সালে। মধ্যে একবার চাকরি ছেড়ে দিলেও এবার আবার বিনা নোটিশে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২ জানুয়ারি দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাঁকে খুদে বার্তা পাঠান, সময়-সুযোগ হলে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য মরিশাসের দায়িত্ব নিতে রাজি কি না! ফেডারেশনের নির্বাচিত ২৩ সদস্যের দল নিয়েই তিন দিন অনুশীলন করিয়ে দল নিয়ে ঢাকায় আসা। ভাগ্যিস রাজি হয়েছিলেন, না হলে যে শোনা হতো না এমন গল্প!