১৩২১ কোটি টাকা লুকিয়েছে ম্যান সিটি

চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা আবার ফিরেছে সিটির। ছবি: এএফপি
চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা আবার ফিরেছে সিটির। ছবি: এএফপি

চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি।

এ বাক্যটি বহুদিন দেখা যায় না। ম্যানচেস্টারের নীল দলটি ইউরোপে শক্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার শুরুর দিকটায় নিষিদ্ধ হওয়ার শঙ্কাটা কিন্তু নিয়মিত শুনত। ক্লাবের আর্থিক দিকগুলো সঠিকভাবে না সামলানোর দায়ে বারবার হুমকি শুনেছে তারা। কিন্তু ২০১৪ সালে ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফার সঙ্গে বিতর্কিত এক সমঝোতা চুক্তি করে সে আলোচনা থামিয়ে দিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে পরিচালিত ক্লাবটি। দ্য গার্ডিয়ান আজ ২০১৪ সালের আগে সিটির আর্থিক অনিয়মের পুরো চিত্র তুলে ধরেছে এক বিশেষ প্রতিবেদনে।

উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি অনুযায়ী একটি ক্লাব ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মৌসুমের জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতি দেখাতে পারে। অর্থাৎ ক্লাবের ফুটবল সংক্রান্ত আয়ের চেয়ে সর্বোচ্চ ব্যয় ৪৫ মিলিয়ন ইউরো করতে পারত। কিন্তু গার্ডিয়ান জানিয়েছে ওই সময়ে সিটির ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৮০ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু অ্যাকাউন্টিংয়ের হিসাবের মারপ্যাঁচে ক্লাব ১১৮.৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড কম খরচ দেখিয়েছিল। বাংলাদেশি মূল্যমানে ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকার এ গরমিল উয়েফা ধরে ফেলেছে।

গার্ডিয়ানের তদন্ত প্রতিবেদন জানিয়েছে ক্লাবের হিসাব নিকাশের মারপ্যাঁচ ধরতে পেয়ে উয়েফা সে সময়ে ম্যানচেস্টার সিটির দেওয়া ক্ষতির হিসাবে আরও ৬০ মিলিয়ন ইউরো যোগ করেছে। ২০১৪ সালে ম্যানচেস্টার সিটি যে হিসাব দিয়েছিল, সেটার ওপর দ্বিতীয় প্রতিবেদনেই এ তথ্য বের হয়ে এসেছে। ক্ষতির বাকি অঙ্কটা নাকি ক্লাবের মালিক পূরণ করে দিয়েছিল। যেটা আইনত নিষিদ্ধ।

সিটির ওই সময়কার আর্থিক বিষয় নিয়ে উয়েফা এই প্রথম তদন্ত করছে না। গত ছয় বছর ধরেই এ নিয়ে কথা হচ্ছে না। পরে তদন্তের একপর্যায়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে নিষিদ্ধ না করে স্কোয়াডের খেলোয়াড় তিনজন কমানোসহ কিছু আর্থিক জরিমানা করেছিল। এমন সমঝোতা তখন বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই কখনো জানায়নি উয়েফা। উয়েফার অনেক কর্মকর্তারই সে শাস্তি মনঃপূত হয়নি। আর্থিক সংগতি নীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা তো ক্ষোভে চাকরি ও ছেড়ে দিয়েছিলেন এ সমঝোতার পর।

২০১৮ সালে ডার স্পেইগেল কিছু ফাঁস হওয়া নথি ছাপিয়েছিল, যা থেকে জানা গিয়েছিল। ক্লাবের মালিক শেখ মনসুর বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানই ক্লাবের সব আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছেন। যা বিভিন্ন স্পনসর ও অন্যান্য আর্থিক চুক্তির নামে চালিয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছে সিটির আর্থিক বিভাগ। ডার স্পেইগেল আরও জানিয়েছিল সিটির নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ও ক্লাবের শাস্তি কম হওয়ার সমঝোতা চুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন বর্তমান ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো!

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১১ সালে সিটির স্পনসর হয় আরব আমিরাতের এয়ার লাইন ইতিহাদ। ২০১৩ সাল থেকে তাদের কাছ থেকে বছরে ৬৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পেত স্পনসরশিপের আয় হিসেবে।। এ ছাড়া আবুধাবির তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে যথাক্রমে ১৫, ১৬.৫ ও ১৯.৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড পাওয়ার কথা জানিয়েছিল সিটি। কিন্তু ২০১৪ সালে উয়েফার তদন্তে জানা গিয়েছিল, এর মাঝে প্রথম দুটি প্রতিষ্ঠানই ক্লাবের মালিকের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান। এমনকি উয়েফা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ইতিহাদকেও ক্লাবের সঙ্গে জড়িত বলে গণ্য করা হবে, ফলে এ থেকে পাওয়া অর্থও সিটির আয় হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

এ ছাড়া ক্লাবের দলবদলের অনেক হিসাবই উয়েফা গ্রহণ করেনি। সিটির দেখানো প্রায় ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড দলবদলের খরচকে নতুন করে ক্লাবের ব্যয় যোগ করেছে উয়েফা। আগের তদন্তের পর সমঝোতা হলেও সিটির আয় ব্যয়ের হিসেব নিয়ে নতুন করে বিশেষজ্ঞদের কাছে গিয়েছে সংস্থাটি। এবং এবার যদি সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে নিষেধাজ্ঞা আর এড়াতে পারবে না দলটি।

এ ব্যাপারে সিটির এক মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর ক্লাব কোনো অনিয়ম করেনি, ‘২০১৪ সালের সমঝোতা চুক্তি সব ধরনের ঝামেলাই মিটিয়ে দিয়েছে এবং সব ধরনের তথ্যই দেওয়া হয়েছে। ওই চুক্তিতে গোপনীয়তার যে শর্ত দেওয়া হয়েছে তা অনুযায়ী এ চুক্তি বা তদন্তের ব্যাপারে ক্লাবের কিছু বলার নেই। আমরা এমন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। ক্লাবের সম্মান নষ্ট করার জন্য সংগঠিত যে চেষ্টা করা হচ্ছে সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।’