বন্দুক-উর্দির সিরিজে খেলাতেই চোখ বাংলাদেশের

বাংলাদেশের সুরক্ষায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পাকিস্তান। ছবি: বিসিবি
বাংলাদেশের সুরক্ষায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পাকিস্তান। ছবি: বিসিবি
>

লাহোরে আজ প্রথম টি-টোয়েন্টি। নিরাপত্তা শঙ্কায় ভেস্তে বসা সিরিজ নিয়ে সব আগ্রহ এতদিন ছিল মাঠের বাইরের বিষয় নিয়ে। তবে খেলাতেই মন দিচ্ছে বাংলাদেশ দল

গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের আশপাশের পরিবেশ খুবই প্রাণবন্ত। শপিং মল, রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য দোকানপাট মিলিয়ে জায়গাটা সব সময় গমগম করে। কিন্তু সেই প্রাণপ্রাচুর্য হঠাৎ করেই হাওয়া। কেন, সেটি বোঝাই যাচ্ছে—বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে এখন লাহোরে! আজ থেকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শুরু তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজকে সামনে রেখে নিরাপত্তার কারণে স্টেডিয়ামের আশপাশের বেশির ভাগ কার্যক্রমই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় কেবলই পুলিশ আর আধা সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্স।

সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী তো আছেই, সাদাপোশাকেও কম লোক চোখ রাখছে না স্টেডিয়াম ও আশপাশের এলাকায়। সব মিলিয়ে বন্দুক–উর্দির কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই শুরু হচ্ছে বহু আলোচিত এই সিরিজ। খেলার পরিবেশ আছে কি নেই, সে আলোচনা এখন অবান্তর। সিরিজের আগে গতকাল দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ঠিক সে কথাটিই বললেন, ‘আমরা পরিবেশ নিয়ে চিন্তাই করছি না। আমার কাছে মনে হয়, এখন ওই ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।’

সিরিজে ভালো খেলাটাই লক্ষ্য বাংলাদেশের। টি–টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান শীর্ষ দল, বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। কিন্তু গত নভেম্বরে ভারত সফরের একমাত্র সুখস্মৃতি কিন্তু এই টি–টোয়েন্টিই। দিল্লিতে প্রথম ম্যাচেই রোহিত শর্মা–শিখর ধাওয়ানদের নিয়ে গড়া ‘ভয়ংকর’ ভারতীয় দলকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহরা। সিরিজ জেতাও অসম্ভব ছিল না। শেষ ম্যাচে ব্যাটিংটা খেই হারিয়ে না ফেললে ঐতিহাসিক এক সিরিজ জয়ের গৌরব নিয়ে ফিরতে পারত বাংলাদেশ দল। তারপরও ভারত সফরে প্রাপ্তি ছিল ভারতকে ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো হারিয়ে আসা।

এর দুই মাস পর ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে তাদের মাটিতেও ঠিক একই লক্ষ্য বাংলাদেশ দলের। পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে হারানো। ২০০৩ সালে আক্ষেপের মুলতান টেস্টের পর পাঁচ ওয়ানডের সিরিজ এবং ২০০৮ সালের এপ্রিলে খেলা পাঁচ ওয়ানডে ও এক টি–টোয়েন্টিতে জয় অনেক দূরেই ছিল বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহ জয় নিয়ে কিছু না বললেও মনের ভেতর যে তেমন কিছুই আছে, সেটি না বললেও চলে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনায় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকে যাচ্ছে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতির কারণে। সাকিব নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই। আর মুশফিক পাকিস্তান যাননি নিরাপত্তার শঙ্কায়। তবে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে গড়া দলটা নিয়ে বেশ আশাবাদী অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহর বিশ্বাস, সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেদের মেলে ধরতে পুরোপুরি প্রস্তুত মোহাম্মদ নাঈম শেখ, আমিনুল ইসলাম, মেহেদী হাসানদের মতো তরুণ তুর্কিরা।

গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের একটি জয় আছে, তবে সেটি স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে নয়। এক যুগ আগে যেবার পাকিস্তানের মাটিতে সর্বশেষ পা রাখা, সেই ২০০৮ এশিয়া কাপেই সংযুক্ত আরব আমিরাতকে এ মাঠে ৯৬ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে সবচেয়ে দুর্দান্ত ম্যাচটি ছিল ওই বছরই এপ্রিলে হওয়া দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজে। পাকিস্তানের ৩০৮ রানের জবাবে ২৮৫ করে বাংলাদেশ হারে ২৩ রানে। এ মাঠে নিজেদের খেলা বাকি ম্যাচগুলো অবশ্য বাংলাদেশ ভুলেই যেতে চাইবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের মাটিতে একমাত্র টি–টোয়েন্টি ম্যাচের স্মৃতিটাও ভয়াবহ—করাচিতে ২০০৮ সালের সে ম্যাচে হার ছিল ১০২ রানের।

অতীতের সব দুঃখ ভোলার দিন হতে পারে আজ এবং এই সিরিজও। প্রথম ম্যাচটি পাকিস্তান একটু চাপ নিয়েই খেলতে নামবে। গত বছরটা ভীষণ বাজে গেছে তাদের। হারতে হারতে অবস্থা এমনই যে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটি ৩–০ ব্যবধানে না জিততে পারলে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হারাবে তারা। এই ‘চাপ’ প্রসঙ্গে বাবর আজমকে অনেকবারই কথা বলতে হলো সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে। তবে পাকিস্তানি অধিনায়ক চাপটাপ উড়িয়ে দিয়ে সোজাসুজি বলে দিয়েছেন, প্রতিটি ম্যাচই তাদের জন্য বাঁচা মরার। আর ঠিক এই জায়গাটাতেই এগিয়ে মাহমুদউল্লাহ। তাঁদের আসলেই হারাবার কিছু নেই। র‌্যাঙ্কিং নিয়ে অতিরিক্ত ভেবে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা তাই নষ্ট করতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক।