বাংলাদেশ আজ হারল আরও বাজেভাবে

লাহোরে এভাবেই হতাশ করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ছবি: এএফপি
লাহোরে এভাবেই হতাশ করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ছবি: এএফপি

মাহমুদউল্লাহ প্রথম ম্যাচে তবুও বলতে পেরেছিলেন, ‘১৪০ (১৪১) করেও যে আমরা শেষ ওভার পর্যন্ত যেতে পেরেছি, এটা বোলারদের চেষ্টার কারণে।’ আজ কী বলবেন? ব্যাটিং-বোলিং কিছুই ঠিকঠাক হয়নি। লাহোরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে।

টি-টোয়েন্টিতে ১৩৭ রান কী এমন লক্ষ্য! ৬ রানের মধ্যে পাকিস্তানি ওপেনার আহসান আলীকে আউট করে বাংলাদেশ দলকে অবশ্য ছোট্ট আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। ওই প্রথম, ওই শেষ! পাকিস্তানের আর কোনো উইকেটই ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। উইকেট তো নিতেই পারেননি, পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে কোনো চাপও তৈরি করতে পারেননি। মোহাম্মদ হাফিজ-বাবর আজমের অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেট জুটি ১৩১ রান যোগ করে পাকিস্তানকে এনে দিয়েছেন বিশাল জয়। বাবর অপরাজিত ৬৬ রানে, হাফিজ উইকেটে ছিলেন ৬৭ রানে। এ জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজও নিশ্চিত করে ফেলেছে পাকিস্তান।

সিরিজের প্রথম ম্যাচে বোলারদের সৌজন্যে তাও কিছুটা লড়াই দেখা গিয়েছিল। আজ সেটিও করতে পারেনি বাংলাদেশ। করবে কী করে? সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি-টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ। ভেন্যু একই, উইকেটের আচরণ প্রায় এক। কালকের মতো আজও বাংলাদেশের শুরু ধীরলয়ে। পাওয়ার প্লে কাজে লাগানো যায়নি, ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয় ব্যাটসম্যানদের সংগ্রাম। পার্থক্য হচ্ছে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ টেনেটুনে করতে পেরেছিল ৫ উইকেটে ১৪১। আজ সেটিও হয়নি-৬ উইকেটে ১৩৬, টি-টোয়েন্টিতে যেটি লাহোরে আগে ব্যাটিং করা দলের সর্বনিম্ন ইনিংস।

প্রথম ম্যাচে হারের পর ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে সেই শিক্ষা কতটা নিতে পেরেছে বাংলাদেশ, প্রশ্ন থেকেই গেল। কাল তবু বাংলাদেশ ‘ওয়ানডে’ মেজাজে টি-টোয়েন্টি খেলেছিল! আজ সেটিও হলো না। প্রথম ম্যাচে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৫। আজ হলো আরও বাজে। ২ উইকেট হারিয়ে ৩৩। প্রথম ৩৬ বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ডট খেলেছেন ২০টি। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ হারিয়েছে মোহাম্মদ নাঈম ও মেহেদী হাসানকে।

শাহিন শাহ আফ্রিদির দারুণ এক বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন নাঈম (০)। বিপিএলে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে বেশ ভালো খেলা মেহেদীকে নামিয়ে চমকে দিতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। মেহেদী যেভাবে (১২ বলে ৯) আউট হয়েছেন, তাতে উল্টো সমর্থকদেরই চমকে যাওয়ার কথা! হাসনাইনের বাউন্সারকে ঠিক কোথায় পাঠাতে চেয়েছিলেন, সেটি তিনিই ভালো জানেন!

১৬ রানে সুযোগ পাওয়া তামিম ধরে রাখেন এক প্রান্ত। এক প্রান্তে ধরে রেখে খুব যে দলের রানরেট বেড়েছে, সেটিও নয়। ইনিংসজুড়ে রানরেট সাতের নিচেই থাকল। শুরুতে দ্রুত ৩ উইকেট পড়ায় তামিম লম্বা সময় খোলসবন্দী ছিলেন। অবশ্য ইদানিং তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে প্রশ্ন হতে পারে, বাঁহাতি ওপেনার হাতখুলে মারলেনই-বা কোন ম্যাচে! তবু তামিমের ৫৩ বলে ৬৫ রানই বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে ১৩৬ রানের স্কোর এনে দিয়েছে। বাকিরা যে হতাশ করেছেন আরও বেশি।

চারে নামা লিটন এ ম্যাচেও হতাশ করেছেন। ১৪ বলে ৮ রান করে আউট হয়েছেন শাদাব খানের এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে। আফিফ ২০ বলে ২১ রানের বেশি করতে পারেননি। গত ম্যাচে ভালো ফিনিশ না করার আফসোসে পুড়ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়ক আজ ফিনিশ করার আগে নিজেই ‘ফিনিশড’! হারিস রউফের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করতে পারলেন ১২ বলে ১২ রান। কাল বাংলাদেশ ভালো স্কোর পায়নি। আজ তো হলো আরও খারাপ। ম্যাচ হারতে হলো বাজেভাবে।

কাল মাহমুদউল্লাহ বলেছিলেন, ‘পরের ম্যাচে আমাদের ফিরে আসতে হবে।’ সেই ফেরাটা বাংলাদেশের আর হলো না।